৯ম পর্ব

1 0 0
                                    

মায়া বছর খানেক আগে নিজ পিতৃনিবাস ছেড়েছিল। চিরস্থায়ী ভাবে না। আবার অস্থায়ীভাবেও না।
শৈশবকালের স্মৃতি বিজড়িত গ্রামীণ পথঘাট নেই। বড়বড় অট্টালিকা এবং প্রশস্ত সড়ক দানবের মতো সব গিলে খেয়েছে। সবুজের ছোঁয়াও নেই। সেই নদী‚ সেই খাল-বিল‚ কাশফুলের চর‚ শস্যক্ষেত‚ সারি-সারি তালগাছ‚ দানবতুল্য বটগাছ‚ হিজলগাছ‚ তেঁতুল গাছ…ইত্যাদি সবকিছু কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে। গিলে খেয়েছে আধুনিকতা নামক নতুন যুগ।
অতিথির মতো মায়ার হঠাৎ আগমনে খাবার টেবিলে বসা পরিবারের সদস্যরা কিছুটা চকিত হলেও পরমুহূর্তে সকলে আনন্দিত হয়ে উঠে।
মাহতাব আলম হাত বাড়িয়ে পানির গ্লাস উঠিয়ে তা পান করে নেন। এরপর হাস্যোজ্জ্বল অভিব্যক্তিতে বলেন‚
“আমার মা এসেছে! ঠিক সময়ে আসছ। আসো‚ নাস্তা করে নেও। তোমার পছন্দের ভুনা খিচুড়ি করছে তোমার মা।”
সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেই হাতের বামে মোড় নেয় মায়া। মাহতাব আলমের ব্যক্ততা শেষে সে তার দিকে ভ্রূকুটি করে তাকায়। অপ্রসন্নে সে জবাবে প্রশ্ন করে‚
“আমি তো কাউকে জানিয়ে আসিনি। তাহলে খিচুড়ি কার জন্য রান্না করা হয়েছে? আমার জন্য? আমার খাবারের পরিমাণ চাল দেওয়া হয়েছে ওতে?”
মাহতাব আলমের মুখের হাসি বিলীন হয়। অনুমান করতে পারলেন নিজ কন্যাসন্তানের মাঝে তার প্রতি জমানো ক্ষোভের অবসান ঘটেনি। মৌনাবলম্বনে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। নূর তা লক্ষ্য করল।
চাবি বের করে নিজের রুমের তালা খুলতে থাকা মায়াকে পিছু ডেকে নূর প্রশ্ন করে‚
“সকাল সকাল বাবার সাথে এভাবে কথা না বললে কি হতো না‚ মায়া? তোমার জন্মদাতা তো।”
পিছু ঘুরল না মায়া। উদাসীন হাবভাব তার।
“তুমি আছো তো‚ ভাবি। পুত্রবধু তো মেয়ে-ই। তাই না? তুমি ঠিকঠাক ব্যবহার করলেই চলবে। এই মেয়ের জন্য উনি এমনিতেও কখনো ভাবেননি।”
রুমের ভেতরে প্রবেশ করামাত্র সে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়। দীর্ঘকাল বন্ধ থাকায় রুমটাতে ভ্যাপসা এক দুর্গন্ধ জন্ম নিয়েছে। সে পূবের জানালা খুলে দিয়ে খানিকটা পরিষ্কার করে এবং ফ্যান অন করে। ব্যাগ হাতড়ে সঙ্গে আনা এয়ার ফ্রেশনার বের করে চারদিকে ছড়িয়ে দেয়।
দেহাভ্যন্তরে খাদ্য পরিপাকতন্ত্র খাবারের জন্য বিক্ষোভ শুরু করলেও মায়া তা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে শক্ত বিছানায় শুয়ে পড়ে। মাথার নিচে দুটো বালিশ। সেগুলোও শক্ত। যেন পাথরের তৈরি বিছানা এবং বালিশ। এরপর চোখ বন্ধ করতেই ক্ষণিক সময়ের ব্যবধানে সে ঘুম রাজ্যে বিচরণ করতে আরম্ভ করে।

সন্ধ্যাবন্দনা Where stories live. Discover now