৬ষ্ঠ পর্ব

1 0 0
                                    

সকাল ৯টার দিকে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে মায়ার ঘুম ভাঙে। স্বাভাবিকভাবে সে বিছানা ছেড়ে চোখ কচলাতে থেকে দরজা খুলে দেয়। রিদি এবং আভিয়ান হুড়মুড়িয়ে রুমের ভেতর প্রবেশ করে। উভয়ের অভিব্যক্তিতে দুশ্চিন্তার ছাপ। তাদের পেছন পেছন ধীর গতিতে রিকার্দো প্রবেশ করে। তিনজনের কপালে ভাঁজ এবং রাগান্বিত চাহনি দেখে মায়ার ঘুম ভাব খানিকটা কমে যায়। সে অবুঝের মতো তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। নিষ্পাপ বাচ্চার মতো ঠোঁট ফুলিয়ে প্রশ্ন করে‚
“কি হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?”
রিদি ও আভিয়ান তখনও নিশ্চুপ এবং একই দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তিনজনের মাঝে নিরবতা ভেঙে রিকার্দো প্রশ্ন করে উঠে‚
“মোবাইল কোথায় তোমার?”
“মোবাইল?”
মায়া ঘাড় বাঁকিয়ে বেড টেবিলের দিকে তাকায়। ঐতো‚ ঐখানেই পড়ে আছে মোবাইল। সে এগিয়ে গিয়ে মোবাইল হাতে উঠিয়ে নেয়।
“এইতো এখানে।”
মোবাইল অন করার চেষ্টা করে মায়া। বুঝতে পারে তার মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে বন্ধ হয়ে আছে। এবং আভিয়ান ও রিদির এমন রাগান্বিত অভিব্যক্তির কারণও সে অনুমান করতে পারে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সে কৃত্রিমভাবে হেসে উঠে।
“আসলে‚ চার্জে না লাগিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ত।  বন্ধ হয়ে গিয়েছে।”
হাত উঁচিয়ে তেড়ে আসে রিদি। পেছন থেকে রিকার্দো থামানোর চেষ্টা করেও নিজেকে থামিয়ে নেয়। রিদি ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে‚
“আজ তোর গালে একটা লাগিয়ে দেই। বাকি জীবন ঘুমানোর আগে ফোন চার্জে দেওয়ার কথা স্মরণ থাকবে।”
মায়া তৎক্ষনাৎ চোখ বন্ধ করে নেয়। এই বুঝি তার গালে বাজ পড়ল‚ সেই ভয়ে। কিন্তু চড়ের পরিবর্তে সে এক উষ্ণ আলিঙ্গন অনুভব করতে পারে। উপস্থিত দুই পুরুষকে চমকে দিয়ে রিদি তাকে জড়িয়ে ধরেছে। মায়া দীর্ঘশ্বাস ফেলতে গিয়েও নিজেকে বাধা দেয়। যদি পিঠে ধরাম করে এক তাল পড়ে!
“জানিস‚ আপুর কতটা টেনশন হচ্ছিল।” রিদির কণ্ঠ কাঁপছে।
মায়া অনুমান করতে পারে তাকে ফোনে না পেয়ে রিদির অবস্থা প্রায় কান্নারত হয়েছিল। সে হাত উঁচিয়ে রিদির ঢেউ খেলানো চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দেয়। নীরবে নিজের অক্ষত অবস্থা নিশ্চিত করে। বিরক্তিকর শব্দ করে উঠে আভিয়ান‚
“তোর এতো আদরের কারণে ও মাথায় চড়ে বসেছে‚ রিদি। শাসন করার পরিবর্তে জড়িয়ে ধরেছিস। মেয়ে মানুষের এই একটা সমস্যা। কথায় কথায় ইমোশনাল হয়ে পড়ার অভ্যাস।”
রিদি রাগান্বিত স্বরে জবাব দেয়‚ “আর পুরুষ মানুষের যে কথায় কথায় রাগান্বিত হওয়ার অভ্যাস? সেটা কি খুব ভালো?”
আভিয়ান কিছু বলার আগে রিকার্দো তাদের মাঝে বাধার সৃষ্টি করে বলে উঠে‚
“আচ্ছা‚ ঠিক আছে। নিজেদের মধ্যে এখন লাগিস না।”
রিকার্দো মায়ার দিকে তাকায়। কোমল কণ্ঠে তাকে বলে‚
“ফ্রেশ হয়ে নাও। নাস্তার টেবিলে একটা বিষয়ে আলোচনা করার আছে।”
মায়া বাচনিক জবাব ছাড়া সম্মতিসূচক মাথা নাড়ে। আভিয়ান এবং রিকার্দোর প্রস্থান ঘটে। বিছানার উপর অগোছালো শাড়ি দেখতে পেয়ে রিদি তা গুছাতে আরম্ভ করে। প্রশ্ন করে‚
“গতরাতে কি মডেলিং করেছিস?”
“হুম। ফোনে ছবি আর ভিডিও আছে। পরে দেখে নিও।”
মায়া ফ্রেশ হতে বাথরুমে যায়। জিহবায় কেমন অদ্ভুত নোনতা নোনতা স্বাদ পাচ্ছে সে। এদিক-ওদিক চিন্তা না করে ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে ব্রাশ করতে আরম্ভ করে। হঠাৎ গত রাতে বাথরুমে ঘটে যাওয়া ঘটনা স্মরণ হলে তার দৃষ্টি চঞ্চল হয়ে উঠে। অস্থির হয়ে উঠে তার স্বাভাবিক হৃৎপিণ্ড। এদিক সেদিক তাকিয়ে সবকিছু স্বাভাবিক দেখতে পায়। কোথাও সেই কাটা হাত‚ রক্ত বা চিঠি নেই। সবকিছু পরিষ্কার ও স্বাভাবিক। তবে কি সে আবারও বিভ্রমের শিকার হলো? বছর আগের ঘটনা নিয়ে দিনকে দিন সে আরো ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে উঠছে। অথচ সেই ঘটনা এবং সেই মানুষরূপে ভিন্ন সত্তা বর্তমানে তার জীবনে অতীত।
মাথা ঝেঁকে সে নিচু হয়ে কুলি করে। কুলির পানি লালচে। স্পষ্ট বুঝাচ্ছে রক্ত। তার কপাল কুঁচকে আসে। আয়নায় তাকিয়ে দাঁতের মাড়ি পর্যবেক্ষণ করলেও সব স্বাভাবিক দেখতে পায়। তাহলে এই রক্ত? মায়া মুটামুটি নিশ্চিত গতরাতের সবটা বিভ্রম নয়। সব পরিষ্কার করা গেলেও তার মুখের ভেতরটা পরিষ্কার করা যায়নি।
তবে কি সে এসেছিল? সে তার ঠিকানা জানবে কীভাবে? সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশে সে কীভাবে আসবে? তার জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া সহনীয় নয়। তাহলে? মায়ার মনে প্রশ্ন জাগে।

সন্ধ্যাবন্দনা Where stories live. Discover now