১৭তম পর্ব

0 0 0
                                    

‘ইচ্ছে করে তোর শহরে থাকতে সন্ধ্যে সকাল
ইচ্ছে করে জ্বালতে আরো‚ জ্বালাতে রঙ মশাল…’

মায়া প্রফুল্লচিত্তে গুনগুনিয়ে গান গাইছে। আজ সে দারুণভাবে সাজছে। কালো ব্লাউজের উপর মেরুন রঙের সিল্কের শাড়ি দেহে পেঁচিয়েছে৷ দু-হাত ভর্তি কালো ও মেরুন রঙের রেশমি চুড়ি সুশৃঙ্খলভাবে সজ্জিত। মৃদু নড়েচড়ে উঠতেই ঝনঝন করে উঠছে। উন্মুক্ত কোমর অবধি লম্বা চুল। কিছুটা আঁকাবাঁকা।  যেন সমুদ্র পাড়ে আছড়ে পড়া শিথিল ঢেউ। টকটকে লিপস্টিকে রাঙা চিকন ঠোঁটযুগল। সাজগোছ সম্পর্কে যতটা জ্ঞান নিজের ভেতর ছিল সবটাই যেন প্রয়োগের প্রচেষ্টা।
সে গুনগুন থামিয়ে হঠাৎ কপাল কুঁচকে আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকায়। একবার কালো আরেকবার মেরুন ছোট টিপ দুটো দুই ভুরুর মাঝখানে রেখে দেখছে। পরপর কয়েকবার একই কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটায় সে। তবুও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে। টেবিলের উপর থেকে নিজের মোবাইল ফোন উঠিয়ে দ্রুত রিদির নাম্বারে কল করে। প্রথমবার কল হয় কিন্তু অপরপাশের ব্যক্তিটি তা রিসিভ করে না। দ্বিতীয় চেষ্টায় তার কাছে পৌঁছানো মাত্র মায়া বিনা আনুষ্ঠানিকতায় বলে উঠে‚
“আপু‚ আমায় কোন টিপে ভালো মানায়? কালো নাকি লাল?”
অপরপাশ থেকে রিদির মৃদু হাসির শব্দ শোনা যায়। সে পালটা প্রশ্ন করে‚ “তুই আমাকে এটা জিজ্ঞাসার জন্য ফোন করেছিস? টিপ দিয়ে এই সন্ধ্যাবেলা কি করবি?”
“আহহা‚ আপু! সবসময় প্রশ্নের বিপরীতে প্রশ্ন না করলে তোমার চলে না?” মায়া বিরক্তবোধ করে। ওদিকে সন্ধ্যা হতে বেশি দেরি নেই। “ জবাবটা জলদি দাও। নয়তো দেরি হয়ে যাবে।”
“দেরি হবে? কারো সাথে দেখা করতে যাচ্ছিস?”
বিরক্তিকর দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়া। কিন্তু তাকে আর কষ্ট করে জবাব দিতে হয় না। রিদি নিজেই সন্দিহান এবং প্রফুল্ল সুরে প্রশ্ন করে‚
“তুই ঐ লোকটার সাথে বের হচ্ছিস? মানে তোরা জোড়া কবুতর হয়ে গেছিস?”
“আরেহ না। সেসব কিছু হইনি। মাত্র বন্ধুত্বের শুরু। পূর্ণিমা উপভোগ করতে যেমন পূর্ণ চন্দ্রের অপেক্ষা করতে হয়‚ ঠিক তেমনভাবে ভালোবাসার সম্পর্ক সময় নিয়ে গড়তে হয়৷”
“আচ্ছা‚ আচ্ছা।”
মায়া খোলা জানালা দিয়ে একবার বাহিরে দেখে নেয়। সূর্যের তেজ নেই। কেবলমাত্র কমলা রঙের বৃত্তখানি নিয়ে পশ্চিম আকাশের একদম ডুবে যায় যায় ভাব। কোনরকমে নিজের অস্তিত্ব ধরে রেখেছে। অন্তিম সময়ের জানান দিচ্ছে। আধ ঘণ্টার ভেতর-ই আঁধারের কোলে লুকাবে।
মায়া তাড়া দিয়ে ফের প্রশ্ন করে‚
“কোনটা? লালটা নাকি কালোটা?”
“একটাও না।”
রিদির জবাবে মায়ার রাগ হয়। এক হাত কোমরে গুঁজে গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করে‚ “এটা শুনতে চেয়েছি?”
“তুই যা বুঝেছিস আমি সেটা বলিনি। দুই রঙের টিপ হাত ব্যাগে নিয়ে যা। যার জন্য সেজেছিস তাকে দিয়ে বাছাই কর কোনটাতে তোর সৌন্দর্য বাড়ে। কালোটা বাছাই করতে সফল হলে ভেবে নিবি নব্বই শতাংশ প্রেম হয়ে গিয়েছে৷”
“মানে কালোটাতে ভালো লাগে। তাই তো?”
“পণ্ডিতি করে কালোটা পরিস না। যেটা বলছি সেটা কর। আমার রোগী অপেক্ষা করছে। রাখছি এখন।”
মায়াকে দ্বিতীয় কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রিদি তাদের যোগাযোগ মাধ্যমের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে।  দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়া তার কথানুযায়ী দুই রঙের টিপের পাতা ব্যাগে নিয়ে বেরিয়ে যায়।

সন্ধ্যাবন্দনা Donde viven las historias. Descúbrelo ahora