৮ম পর্ব

1 0 0
                                    

রিকার্দো ওয়াশরুম থেকে মায়ার নিকট গ্যালারিতে ফিরছিল। পথিমধ্যে সে তার এবং মায়ার প্রথম সাক্ষাত স্মরণ করে মুচকি হেসে উঠে। মায়ার একগুঁয়েমির বিষয়টিও সে উপেক্ষা করতে পারছে না। ধীরে ধীরে তার মুখের হাসি বিলীন হতে থাকে। কারণ সে অনুমান করতে পারছে মায়ার মাঝে সাংঘাতিক একটা কিছু চলছে৷ তার কিছু কিছু কাজ বেশ অস্বাভাবিক এবং রহস্যময় মনে হয়৷
রিকার্দো আশেপাশে তাকিয়ে একাধিক গ্যালারি পেরিয়ে সামনে অগ্রসর হতে থাকে।
“এই যে ‚ শুনোন।”
মাঝের দুটো অর্ধ কাজ সম্পন্ন গ্যালারির দিকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে এক মেয়েলি কণ্ঠস্বর তাকে ডেকে উঠে। রিকার্দো পিছু ঘুরে তাকালে কৃষ্ণকেশী এক বিদেশিনীকে দেখতে পায়। কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে নিজের দিকে তর্জনীর ইশারায় প্রশ্ন করে‚
“আমি?”
মেয়েটা ইতিবাচক মাথা নাড়িয়ে রিকার্দোর দিকে এগিয়ে আসে। মেয়েটার দুগাল এবং নাকের উপর ঢেউয়ের মতো অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাদামি রঙের দাগ এবং নীলাভ চোখজোড়া রিকার্দোর দৃষ্টিতে স্পষ্ট হয়ে উঠে৷ তার চোখের দিকে তাকিয়ে রিকার্দো প্রশ্ন করে‚
“হ্যাঁ‚ বলুন। আমি কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?”
মেয়েটা মুচকি হাসে। বিনয়ী কণ্ঠে জবাব দেয়‚
“আসলে আমি সম্পূর্ণ জাদুঘর দেখে শেষ করেছি। কিন্তু এখন আমি বের হওয়ার পথ খুঁজে পাচ্ছি না। এদিক থেকে ওদিক… সব গোলমেলে লাগছে। আপনি কি আমাকে সিঁড়ি অবধি পথ দেখিয়ে দিতে পারবেন?”
অদ্ভুত আর্জি শুনে রিকার্দো না হেসে পারে না। সে নিজেও বিনয়ের সাথে মাথা নেড়ে জবাব দেয়‚
“হ্যাঁ। অবশ্যই। আসুন আমার সাথে।”
রিকার্দো মেয়েটিকে রাস্তা দেখিয়ে তার পাশে হাঁটতে থাকে। ক্ষণিকের নীরবতা। অতঃপর মেয়েটি নিজের পরিচয় জানিয়ে বলে উঠে‚
“আমি এলিথ ভ্যালেন্টাইন।”
রিকার্দো ঘাড় বাঁকিয়ে এলিথের দিকে তাকালে সে তার দৃষ্টি নিজের দিকে স্থির দেখতে পায়। মুচকি হাসিতে রিকার্দো নিজের পরিচয় জানিয়ে বলে‚
“ফারাজ রিকার্দো গ্রে'সান।”
দৃষ্টি ফেরানোর আগে মেয়েটি নিচু স্বরে বলে‚ “সুন্দর নাম।” 
কৌতূহল নিয়ে রিকার্দো আবারও প্রশ্ন করে‚ “আপনি কি একা জাদুঘর দর্শন করতে এসেছেন?”
ডানে-বামে মাথা নেড়ে এলিথ অসম্মতি জানায়। “না। আমার এক বন্ধুর সাথে। কিন্তু তাকে পাচ্ছি না। তাছাড়া তার ফোনটাও আমার কাছে। কলও করতে পারছি না।”
“আমাকে অনুমান করতে দিন। আপনার বন্ধুকে না পেয়ে আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন নিচ তলায় অপেক্ষা করবেন?”
এলিথ মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। “ঠিক অনুমান করেছেন। নিচ তলায় বসার ব্যবস্থা আছে।”
রিকার্দো কথা বাড়ায় না। সিঁড়ির নিকটবর্তী হয়ে নিচের দিকে ইশারা করে সে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে এলিথের দিকে তাকিয়ে বলে‚
“নিচতলায় পৌঁছানোর পথ। আশা করছি আর কোন সমস্যা হবে না।”
এলিথ মুচকি হেসে মাথা নাড়ে। “আমাকে সাহায্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ‚ রিকার্দো।”
হাত মেলানোর জন্য একটি হাত বাড়িয়ে দেয় এলিথ৷ রিকার্দো নিজেও হেসে তার সাথে হাত মেলালো। কিন্তু হাত মেলানোর মুহূর্তে রিকার্দোর অভিব্যক্তির পরিবর্তন ঘটলো৷ তার হাসিও ধীরে ধীরে বিলীন হতে লাগল। তাদের যুক্ত হাত থেকে চোখ উঁচিয়ে সে এলিথের মুখমণ্ডলের দিকে তাকাল। সে তখনও মুচকি হাসছে। এরপর হাত ছাড়িয়ে সে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেল। রিকার্দো তার ঠোঁটের কোণের শয়তানসুলভ মৃদুহাসি খেয়াল করতে পারল না।
রিকার্দো ভ্রূকুঞ্চিত করল। নিজের হাতের তালুতে তাকিয়ে বিরবির করে বলল‚ “অস্বাভাবিক শক্তির অধিকারিণী!” 

সন্ধ্যাবন্দনা Dove le storie prendono vita. Scoprilo ora