১৪তম পর্ব

1 0 0
                                    

হলুদ ও সবুজ বর্ণের পোশাকে ফুলের গহনা পরিহিত মায়া। হলুদের অনুষ্ঠানের সাজ তার গায়ে। অথচ এই সন্ধ্যেবেলা হলুদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার বদলে সে জুলিয়েটের মুখোমুখি বসে আছে। মায়া এক দৃষ্টিতে জুলিয়েটকে দেখছে। নীলাভ চোখ বিশিষ্ট লালচে চুল এবং ফর্সা গায়ের রঙ তার। এক পলকে যে কারো নজর কাড়ার মতো সুন্দরী। রিকার্দোর মতোই তার চেহারায় পশ্চিমাদের মতো একটা ভাব আছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জুলিয়েটের সাথে যোগাযোগ করতে খুব একটা পরিশ্রম করতে হয়নি তাকে। নিজের পরিচয় জানানোর পর জুলিয়েট নিজেই তার সাথে সশরীরে সাক্ষাৎ করার আগ্রহ প্রকাশ করে। এবং বর্তমানে তারা দুজন মুখোমুখি বসে একে অপরকে কৌতূহল নিয়ে দেখছে।
নীরবতা ভেঙে জুলিয়েট কোমল ও মিষ্টি কণ্ঠে বলে‚ “তাহলে তুমি সেই মায়া যাকে রিকার্দো বিয়ে করবে?”
হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ে মায়া। খানিকটা বিভ্রান্ত সে। জুলিয়েটের অভিব্যক্তি তার প্রত্যাশার তুলনায় একটু ভিন্ন। মায়া নিজেও জিজ্ঞাসা করে‚
“যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে কি আমি জানতে পারি যে তুমি কেন রিকার্দোকে প্রত্যাখ্যান করেছিলে‚ জুলিয়েট”
কপাল কুঁচকে আসে জুলিয়েটের। তার অভিব্যক্তি আরো কঠিন হয়ে আসে।
“তোমাকে কে বলেছে আমি রিকার্দোকে প্রত্যাখ্যান করেছি?”
এবার জুলিয়েটের মতো মায়া নিজেও কপাল কুঁচকে তাকায়। এমন প্রশ্নে সন্দিহান হয়ে উঠে মায়া। উৎসুক কণ্ঠে প্রশ্ন করে‚
“রিকার্দো তোমাকে প্রত্যাখান করেছে?”
হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ে জুলিয়েট। “হ্যাঁ। মাসখানেক আগে রিকার্দো আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।”
মায়া চিন্তিত হয়ে উঠে। নিজের ঠোঁটজোড়া একত্রে কামড়ে ধরে খানিকক্ষণ নি:শব্দে একই স্থানে অবস্থান করে। রিকার্দো তাকে মিথ্যা বলেছে? কিন্তু কেন?
“আমাকে সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলো‚ জুলিয়েট। প্লিজ।”
আবারও মাথা নাড়ে জুলিয়েট৷ নিজের কোমল পানীয়ের গ্লাস থেকে খানিকটা তরল পান করে গলা ভিজিয়ে নেয় সে৷ এরপর বলতে আরম্ভ করে‚
“গত অমাবস্যার রাতে আমাদের অঞ্চলে একটি রক্তচোষা এসে উপস্থিত হয়েছিল।”
“রিয়ন ওয়ালেস্ এডরিন?”
আশ্চর্যান্বিত দৃষ্টিতে জুলিয়েট মায়ার দিকে তাকায়। জুলিয়েটের স্মরণ হয় সেই রাতে রিকার্দো এবং রিয়নের মাঝে ঘটে যাওয়া কথোপকথন। তারা উভয়েই বারংবার মায়ার নাম উচ্চারণ করছিল। জুলিয়েট মৃদু হাসে৷ সম্পূর্ণ ঘটনা বর্তমানে তার নিকট পানির মতো পরিষ্কার।
জুলিয়েটের হাসি মায়াকে আরো বিভ্রান্ত করে তুলে। সে প্রশ্ন করে‚
“তুমি হাসছ কেন?”
“এখনো সময় আছে বিয়েটা করো না।”
“মানে? কিন্তু কেন?”
“কারণ রিকার্দো প্রতিশোধের কারণে এসব করছে।”
জুলিয়েটের মুখে রিয়নের কথার পুনরাবৃত্তি শুনে যেন মায়ার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম।  নির্বাক দৃষ্টিতে জুলিয়েটের মুখপানে তাকিয়ে থাকা ব্যতীত মায়া কোন জবাব দিতে পারে না।
“একজন আলফা নেকড়ের নিকট তার অহংকার এবং তার দলের উপর অন্য কোন কিছু গুরুত্ব রাখে না। বন্ধুত্ব এবং ভালোবাসাও নয়।” জুলিয়েট আবারও মায়ার উদ্দেশ্যে বলতে আরম্ভ করে। তার কণ্ঠস্বর কোমল এবং শান্ত৷ “যেমন আমাকেই দেখো। রিকার্দোর সঙ্গী হিসেবে আমি প্রাকৃতিকভাবে নির্ধারিত ছিলাম। কিন্তু রিয়নের সাথে সেদিন লড়াইয়ের পর এবং লড়াইতে হেরে যাওয়ার কারণে যে ক্ষোভ রিকার্দোর মাঝে বাসা বেঁধেছে ‚ যেই প্রতিশোধের আগুন তাকে গ্রাস করেছে তা আমাকে প্রত্যাখ্যানের শিকার করে তুলেছে।”
আলতোভাবে জুলিয়েট মায়ার দুহাত ধরে অনুরোধের দৃষ্টিতে বলে‚ “আমি ভেবেছিলাম রিকার্দো তোমাকে ভালোবাসে। কিন্তু সবটা প্রতিশোধের খেলা। এই বিয়েটা করো না‚ মায়া। প্রতিশোধের আগুন অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। এই আগুন তোমাকে পুড়িয়ে ছাই করে দিবে।”
মায়া প্রত্যুত্তর খুঁজে পায় না। শুধুমাত্র শুকনো এক ঢোক গিলে নিজের গলা ভিজিয়ে নেয়। জুলিয়েটের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় সে। কোমল পানীয়ের গ্লাস উঠিয়ে ঢকঢক করে সবটা পান করে নেয়। তবুও তার তৃষ্ণা নিবারণ হয় না। পানির বোতল হাতে নিয়ে অর্ধেক বোতল পানি পান করে থামে সে।
কোন কিছু চিন্তা করতে পারছে না সে। আগুন থেকে বাঁচতে গিয়ে যেই পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল‚ তা ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। বর্তমানে সেই আগ্নেয়গিরির ঘুম ভেঙেছে। থরথর ভূ-কম্পনের সৃষ্টি করে বিপদসংকেত দিচ্ছে। আর মাত্র কিছু সময়। এরপর হয়তো ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে সবকিছু পুড়িয়ে ছাই করে দিবে।
পরপর দুটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়া মুচকি হেসে জবাব দেয়‚ “বিয়েটা হবে।”
জুলিয়েট চিন্তিত হয়ে পরে। কপাল কুঁচকালেও সে মুখ ফুটে কোন শব্দ উচ্চারণ করে না।

সন্ধ্যাবন্দনা حيث تعيش القصص. اكتشف الآن