বাসায় ঢুকতেই আম্মা শুরু করলেন,"কী রে, হলে ঘুমিয়ে পড়েছিলি নাকি? সেই কোন দুপুরে শেষ হয়েছে পরীক্ষা আর দিনপাত করে এই সাঁঝবেলায় ঢুকছিস যে বড়? টেবিলে রেখে রেখে ঠান্ডা খাবার দুশো বার গরম করে এই একটু আগে ফ্রিজে ঢুকালাম। খাবি নাকি খেয়ে এসেছিস? বাড়ি যে একটা আছে মনেও আছে নাকি হোটেল মনে হয়?... পরীক্ষা কেমন হল? চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে ফেল করবি রে.. কী রে কথা বলিস না ক্যান?..."
আমি জুতা খুলে আলনায় রেখে ধীরে সুস্থে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করলাম। তারচেও ধীরে গ্লাসে ঢাললাম। চেয়ার টেনে বসে, ঢকঢক করে পুরো গ্লাসটা খালি করে দিলাম। পানি যে কণ্ঠনালী বেয়ে গেল,পুরোটা টের পেলাম... খালি হওয়া ঠান্ডা গ্লাস টা গালের সাথে লাগিয়ে আম্মার দিকে তাকিয়ে রাগ করতে নিয়ে হেসে ফেলে বললাম,"এমন মেলট্রেনের মত প্রশ্ন করতে থাকলে কোনটা ছেড়ে কোনটার উত্তর দিব? খাব না,খেয়ে এসেছি ; হলে ঘুমাই নাই,লিখেছি; ফেল করব না,তবে পরীক্ষা তেমন ভাল হয় নাই। আর তোমাকে না বলেছি দেরি হলে অপেক্ষা না করতে?"
আম্মাও হাসতে হাসতে বললেন,"আর কয়দিনই তো। এরপর তো আর করব না। তখন তো ঈদে চান্দে আসবি বাড়ি। যা গোসল কর। "
"ঈদে চান্দে আসব মানে?"
"আর কয়দিনই বা আছিস? বিয়েই তো হয়ে যাবে.."
বিয়ে শুনলেই জানি এখন কেমন কেমন লাগছে। অন্বয় তখন আমাকে বাসার নিচে দিয়ে চলে যাবে না..আমরা একসাথে উঠব...
আর মানা যাচ্ছে না। চিন্তাভাবনায় লাগাম দেওয়া দরকার।
"আম্মা-"
"আর হৃদকে ফোন দিস। ওর ফোন নাকি তুই ধরিস না?"
"আমি কেন ওর ফোন ধরব না..? ফোন বাজলে ধরব না কেন..."
সেটাই তো !ফোন বাজলে না ধরব! হল থেকে বের হয়ে সাইলেন্ট ফোনের মোড পাল্টাতে ভুলে গেছি! মাঝে একবার মনেও হয় নি ফোনের কথা। ছবিও তোলা হয় নি কোন।
অন্বয় কি এর মাঝে ফোন দিয়ে পায় নি তার মানে? চেয়ার থেকে দুদ্দার উঠে গিয়ে ব্যাগ হাতড়ে ফোন খুঁজতে খুঁজতে এই চিন্তাটা মাথায় আসলো এবং আবারো নিজের উপর প্রচন্ড রাগ লাগা শুরু করল।
ছ্যাঁচড়ামোর একটা সীমা থাকা দরকার।
হৃদের মিসড কল ৮ টা।
আর কিছু না।
ও!
আচ্ছা এমন তো না যে আর কিছু থাকার কথা!
ওয়াই ফাই অন করে ব্যাগটা তুলে নিজের রুমের দিকে হাঁটা দিলাম।
মাথায় তখন আবার অন্বয়ের কন্ঠ একো করছে।..."আপনি কি আমাকে বিয়ে করবেন?"...
কিন্তু উনি যে আমার কথা কিছু জিজ্ঞেস করলেন না? পছন্দ ছিল কিনা,প্রেম করেছি কিনা... আচ্ছা আমিও তো পালটা জিজ্ঞেস করতে পারতাম "আপনি কি আমাকে বিয়ে করবেন কিনা.."
কেন সবসময় একটা ঘটনা হওয়ার পাঁচ ঘন্টা পর আমার সুন্দর সুন্দর কামব্যাক মনে পড়ে? ছোটবেলার সমস্যা।
যাই হোক, হৃদকে সরি বলে একটা মেসেজ দিয়ে গোসলে ঢুকলাম।ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়তে ভাবছি হৃদকে ফোন দিব। ওর গুড নিউজ শোনা লাগবে আর নিজের জীবনে যে কী কী হয়ে যাচ্ছে,তাও বলা লাগবে। ওকে না বলে শান্তি পাচ্ছি না। আর ওর থেকেও অন্বয়ের রিভিউ নিতে হবে। চেনে যেহেতু!
বলাই বাহুল্য মাথায় আজকের বিকাল ছাড়া কিছুই নাই। আমার যে মহান পরীক্ষা শেষ হয় নি,সেটাও ভুলে গিয়েছিলাম।
ফোনটা হাতে নেওয়া মাত্র দেখি মিমির ফোন। ধরলাম। সিলেবাস নিয়ে,সাজেশন নিয়ে পাক্কা দশ মিনিট পাকানোর পর অবশেষে বিধাতার অশেষ কৃপায় মিমি বেগম,দি আল্টিমেট আঁতেল ফোনটা রাখলেন।
হৃদকে মেসেঞ্জার এ কল দিয়ে পেলাম না।
ফোনে ফোন দিলাম আর প্রথমেই একচোট গালি..."শালা বস্তি! বিয়ে ঠিক হইসে আর এখনি বন্ধুবান্ধবের খবর নাই! বিয়ে হইলে তো চিনবাও না..."
আচ্ছা আমি বুঝলাম না। সবাই কেন জোর করে পর করে দিচ্ছে! ঘটনা কী!...
ঘটনা বোঝা গেল একটু পর...

ВЫ ЧИТАЕТЕ
অনেক রোদ্দুর
Художественная прозаহঠাৎ বিয়ের কথা বার্তা শুরু হয়ে গেল। পরিচয়... ভাল লাগা,না লাগা...