ড্রেসিং টেবিলের সামনে কাঠ হয়ে বসে আছি। আপা চুল আর শাড়ি ঠিক করে দেওয়ার পর নীরা আমাকে সাজাচ্ছে। আমার চোখ ফুলে আছে, নাক লাল হয়ে আছে। আব্বা একবার জিজ্ঞেস করলেন নাক লাল কেন। নীরা সুন্দর সামাল দিয়েছে, "নয়ীপু ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করে ঠান্ডা বাঁধিয়েছে..."
ঠান্ডা অবশ্য লেগেছিল সেটা সত্যি । মাথা ভার হয়ে আসছিল। কিন্তু সেটা আংশিক সত্যি।
আমি তখনো সমানে অন্বয়কে ফোন দিয়েই চলেছি। ফোন ক্রমাগত সুইচড অফ পাচ্ছি।
হৃদের ফোন রাখার পর থেকে সেই যে কল দেওয়া শুরু করেছি, একটু পর পর দিয়েই যাচ্ছি।অন্বয়ের সমস্যা কী? আজকে সারাটাদিন অদ্ভুত আচরণ করল। যতক্ষণ আমি সামনে ছিলাম, ততক্ষণ পারলে ফোনটা হাত থেকে নামায় ও না আর আমি বাসার ফেরার পর প্রথমে ফোন ধরছিল না আর এখন ফোন অফ।
একদিন পড়ন্ত বিকালে আমাকে অবাক করে দিয়ে একটা শান্ত কিন্তু দৃপ্ত কন্ঠে একটা ছেলে আমাকে বলেছিল,"আমি আসলেই আপনাকে বিয়ে করতে চাই.."আজকে আরেক পড়ন্ত বিকালে আমি তাকে পাগলের মত খুঁজছি তার উত্তর দিতে। আমি তাকে ছাড়া আর কাউকে ভাবতে পারছি না।
'সুন্দর লাগছে রে তোকে!"
চমকে তাকালাম। হৃদ!
"আমি কী করব বল ত!"
হৃদ বলল,"তুই খামোকা প্যানিক করছিস কেন তাই তো বুঝছি না। ছেলেপক্ষ আসছে আসুক। চা নাস্তা খাক। খেয়ে চলে যাক। এরা না আসলে তো বুঝতিই না যে অন্বয় ভাইকেই বিয়ে করতে চাস! অন্তত এইজন্য একবেলা খাবার তো ডিজার্ভ করে। আর আজকে থোড়াই বিয়ে করে তুলে নিয়ে যাবে তোকে! শান্ত হ এইবার!"
আসলেই তো!
আমি অন্বয়কে উত্তর দেওয়ার জন্য আকুল হয়ে আছি আর কিচ্ছু না। আজকে কী হবে না হবে আমার কিচ্ছু এসে যায় না।
কিন্তু এই বেয়াদব ছেলে ফোন ধরছে না কেন...
হৃদকে বললাম যেন কল দিতে থাকে। অন পেলেই যেন আমাকে জানায়। আমাকে জানাবে কথা দিয়ে আম্মার খোঁজে রান্নাঘরে চলে গেল।
হৃদের সাথে কথা বলে একটু শান্ত লাগছে।
আয়নায় তাকালাম। হালকার মধ্যেও সুন্দর সাজিয়েছে পিচ্চি মেয়েটা।
ওর বয়সে আমি কেবল কলেজ শেষ করে ভার্সিটিতে ভর্তির দুশ্চিন্তায় ছিলাম। সময় কত দ্রুত চলে যায়।
দীর্ঘশ্বাস ফেললাম একটা।পৌনে ছয়টা। দরজায় বেল বাজল।
আমার ঘর থেকে শব্দ শুনতে পাচ্ছি। অনেক লোকের আনাগোনা। সালাম আদান প্রদান, কুশল বিনিময় সবই শুনলাম। কন্ঠ শুনে আঁচ করতে চেষ্টা করছি কতজন। তিনটা নারীকন্ঠ দুটা পুরুষকন্ঠ মনে হল। একজন মা একজন বোন হলে আরেকজন কে? আর পুরুষ দুইজন কি ছেলের বাবা দুলাভাই নাকি বাবা আর ছেলে নিজে?
এরকম সাত পাঁচ ভাবছি এমন সময় আপা ঢুকলেন ঘরে।" আয় তোকে ডাকছে।"
রোবটের মত উঠে দাঁড়ালাম, মাটির দিকে তাকিয়ে রোবটের মত হেঁটে গেলাম। আপা ধরে নিয়ে গেল, যেখানে থামল সেখানেই বসে পড়লাম।
"মা তোমার নাম কী?",এক নারীকন্ঠ জিজ্ঞেস করল।
"নীহারিকা শাফকাত"।
নিজের শীতল কন্ঠ শুনে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম গেলাম। নিস্পৃহ, প্রাণহীন।
"ডাকনাম নয়ী। আমরা নয়ীই ডাকি",আব্বা হেসে বললেন।
"হ্যাঁ আমরাও তো তাই জানতাম।", এক পুরুষ কন্ঠ বলল।
এই স্বর কি আমি শুনেছি কোথাও? চেনা লাগল কেন?!
এমন সময় দরজার বেল বাজল আরেকবার।
আম্মা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল।
"তুই কি নিজের বিয়েতেও দেরি করবি নাকি?" সেই চেনা স্বর আবার ঠাট্টার সুরে বলে উঠল।উত্তরে নবাগত একটু হাসল। একটা শান্ত হাসির শব্দ আর মুহূর্তের মধ্যে আমার মেরুদন্ড দিয়ে শিহরণ স্পষ্ট টের পেলাম আমি।
এতক্ষণে এই প্রথম চোখ তুললাম আমি।
অন্বয়!
আর যার স্বর এতক্ষণ চেনা লাগছিল উনি অন্বয়ের বাবা! সেই একদিনই দেখা হয়েছে এইজন্য চেনা চেনা লাগলেও চিনতে পারি নি। পাশে একটা রোগামতন যুবক। আর মহিলাদের কাউকেই চিনি না।আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। বিস্ময়ে আমার মাথা ঝিম ঝিম করা শুরু করেছে।
অন্বয়কে আপা,"তুমি এখানে বোসো" বলে আমার পাশ থেকে উঠে যাচ্ছিল-
এমন সময় আপার হাত খামচে ধরে আমি জ্ঞান হারালাম...

ВЫ ЧИТАЕТЕ
অনেক রোদ্দুর
Художественная прозаহঠাৎ বিয়ের কথা বার্তা শুরু হয়ে গেল। পরিচয়... ভাল লাগা,না লাগা...