পনের: শুরু

1.7K 59 10
                                    


বাকীটা রাস্তা আমরা তেমন কোন কথাই বলি নি। কোথাও খেতেও নামি নি। বাস ধরে, বাস থেকে নেমে রিকশা করে সোজা আমার বাসা থেকে একটু দূরে এসে নামলাম। প্রথম দিনের পর থেকে এখানটাতেই নামা হয়। বাকী একটু পথ হেঁটে যাই।

বাসার কাছে নামছি দেখে আমি একটু অবাক হলাম। তাহলে কি সে আমাকে বাসায় নামাতেই এসেছিল? আমরা কি একটু ঘুরে আসতে পারতাম না কোথাও? বলা বাহুল্য, আমার বাসায় ফিরতে ইচ্ছা করছিল না, তাকে বলতেও গায়ে লাগছিল। ওই যে, "ছ্যাঁচড়ামি করব না"- পণ করেছি।

ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে বলল "বাদাম খাবেন?"
আমি হাসি সামলাতে পারলাম না, বললাম, "বাদাম তো ক্লাসিক জিনিস"
ফুটপাথ দিয়ে বাসার দিকে হাঁটতে হাঁটতে পিছন ফিরে বলল, "মানে?"
"মানে আর কী...দুটা মানুষ যখন ডে-"- এটুক বলে চুপ হয়ে গেলাম। বলতে চাচ্ছিলাম যে, 'দুটা মানুষ যখন ডেট করে, তখন যুগে যুগে বাদাম খেয়ে আসছে।' "ডেট" শব্দটাতেই আটকে গেছি...
অসম্পূর্ণ বাক্যটা পুরোটা শুনতেই সে তখনো তাকিয়ে আছে। আমি বললাম, "কিছু না"
অন্বয় বোধ আঁচ করতে পেরেই বলল, "নয়ী, আপনি কি আমার সাথে কমফোর্টেবল?"
আমি মুখ তুলে তাকিয়ে উপরে নিচে মাথা নাড়লাম।
সে বলল, "তাহলে আপনি যা ইচ্ছা তাই বলতে পারেন, সিয়িং ইচ আদার- ডেট- প্রেম- কোর্টশিপ; আপনার ইচ্ছা। আমি আপনাকে বিয়ে করতে চেয়েছি। সে তুলনায় সবই কম।"
আমি আরেকবারের মত চমকে গেলাম। অন্বয় বাদাম কিনে ফিরে এল, "নেন"
আমি বুঝিনা একটা মানুষ এত অবলীলায় এত বড় বড় কথা কী করে বলে দেয়! বললাম, "সিয়িং ইচ আদার- ঠিক আছে। ডেটও বলা যায়। একসাথে খাই। প্রেম -কোর্টশিপে সমস্যা আছে। প্রেম বলা যাচ্ছে না ঠিক এইটা।"
"প্রেম করার জন্য তাহলে এখন আমার কী করতে হবে?"
অন্বয়ের এক্সপ্রেশন দেখে আমি নিজেই হেসে ফেললাম, "আপনি প্রেম করতে চান?"
"আমি চাই আপনি যা চান তা-ই করতে। আপনার যাতে অস্বস্তি না হয়। যে একটা ছেলের সাথে ঘুরছি, সে আমার কী লাগে বা-"
"তুমি করে বলতে হয়।"
অন্বয় থতমত খেয়ে গেল, "জ্বি?"
তার থতমত ভাবটা আমার বেশ লাগে। বেশ একটা যুদ্ধজয়ের ভাব নিয়ে বললাম, "প্রেম করলে তুমি বলতে হয়। আপনি আমাকে আপনি আপনি করা বাদ দেন।"
বলার সময় আসলে আবেগের আতিশয্যে বলে ফেলেছি,কথাটা মাটিতে পড়বার আগেই মনে হল, ধুর কী করলাম! কোন কারণে যদি এর সাথে শেষ পর্যন্ত আর কিছু না হয় তাহলে খামোকাই এত ন্যাকামো করাটা ভাল কিছু আনবে না... এইসব সাতপাঁচ ভাবছি-এমন সময়.অন্বয় আবার তার সেই হাসিটা দিল। "তোমাকে তুমি বলতে আমার কোন সমস্যাই হবে না। তোমার বয়সী আমার অনেক জুনিয়ার আছে না?"
তাকে দেখে মনে হল প্রচন্ড মজা পাচ্ছে।
আমি একটু রাগই হল। বললাম, "জুনিয়ার আছে। তাদেরকে লাইব্রেরি যাওয়ার পথে থামিয়ে প্রপোজও করে ফেলা শেষ।" বলে দ্বিগুণ স্পীডে হাঁটা দিলাম। আমাকে ধরে ফেলতে তার ৫ সেকেন্ডও লাগলো না। পাশে পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল,"এই দেখ। আমি কিন্তু তোমাকে তুমি করে বলছি। তুমি পারছ না। "
আমি না শোনার ভান করে হাঁটতে হাঁটতে বাসার প্রায় নিচে চলে এসেছি। অন্বয় মাঝে মাঝে পিছনে পড়ে যাচ্ছে,আবার ধরছে। সেও কম দ্রুত হাঁটে না, সম্ভবত ফোন আসছে বা মেসেজ- যে কারণে ধীর হয়ে যাচ্ছে। শব্দ পাচ্ছি হাল্কা পাতলা। যাইহোক। বাসার একদম নিচে এসে থেমে পিছনে ফিরলাম। তখনো তার হাতে ফোন। মনটা অকারণেই একটু খারাপ হল।
অন্বয় মনে হয় সেটা বুঝতে পেরেই ফোনসহ হাত পকেটে ঢুকিয়ে বলল, "আমি যাই তাহলে"
আমার ভুলও হতে পারে,কিন্তু আমার কেন যেন মনে হল অন্যান্য দিন আমাকে রেখে যাবার সময় তাকে একটু অফ মনে হয়, আজ সেটা নেই। অন্যান্য দিনও ভুল হতে পারে আসলে। রেখে যাওয়ায় মন খারাপ হতেই হবে- এমন না।তবে আজ একটু বেশিই ফুর্তিতে আছে বা আমার সাথে থাকার চেয়ে ফোনের দিকে বেশি মনোযোগ। মনে হল বলি, "যান বাসায় যান। গিয়ে ফোনের সাথে হাতটা সুপার গ্লু দিয়ে আটকে বসে থাকেন।"
নিজেকে সামলালাম।
ভদ্রভাবে একটা আর্টিফিশিয়াল হাসি দিয়ে বললাম, "যাই বলতে হয় না। বলেন যে আসবেন।"
"আসব।"
"উঁহু। বলেন 'আমি আসি।' "
"আচ্ছা। তাহলে আমি আসি এখন?"
"আসেন।"
প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে লিফটে উঠলাম। দড়াম করে দরজা খুললাম।
এরপর যা দেখলাম,তাতে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল!

অনেক রোদ্দুরWhere stories live. Discover now