আমি অমত করি নি ঠিকই, আবার মতও দেই নি। কিন্তু বাড়িতে সবাই মনে হয় টের পায় যে আমি কিছু দুর্বল হয়ে পড়েছি, বিশেষ করে আম্মা । বিয়ের আমেজ টের পাই বাতাসে। আম্মার গয়নাগাটি পরিষ্কার করতে দিয়েছে। বাড়িঘর রঙ করা হচ্ছে। আব্বা পুরাতন শেল্ফ বেচে দিচ্ছে। জিজ্ঞেস করলে বলে "এম্নেই", কিন্তু আমি তো টের পাচ্ছি আমাকে ঘিরেই এত তোড়জোড়।
এত ক্যাচালের মধ্যে আমার পড়ায় মন বসছিল না। তাও কোনমতে চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু শেষ পরীক্ষার দিন প্রচন্ড উত্তেজনায় আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিল। কারণ অন্বয় আগের দিন মেসেজ দিয়েছে সেদিন সে আমাকে নিতে আসবে। আমি ছোট করে "ঠিক আছে" লিখে রিপ্লাই করেছি।
নিজের আবেগকে যথাসম্ভব লুকানোর চেষ্টা। যদিও সবসময় কেন জানি আমার একটা বোধ কাজ করে যে মানুষটা সবই বুঝতে পারে। বুঝে হয়ত মনে মনে মিটমিট করে হাসে। হাসুক গে। আমার কী? আমি আমার পক্ষ থেকে যত পারব ছ্যাঁচড়ামি কম করব- এই পণ করেছি।
গ্যাঞ্জাম বাঁধল পরীক্ষার হলে। নার্ভাস হয়ে এক অংকের মাঝে আটকে গেলাম। তিনবার করার পরও মিলল না। আর তিনবার করা যে বোকামি হয়েছে সেটা বুঝতে পারলাম যখন থিওরি লেখার সময়ে টান পড়ল। আর চেইন রিয়াকশনে আরেকটা সহজ প্রশ্নে হাতই দিতে পারলাম না। কী করব না করব করতে করতে সময় শেষ হয়ে গেল। বিক্ষিপ্ত মন নিয়েও যথাসম্ভব প্রিপারেশন নেওয়া ছিল। মনটাই ভেঙে গেল। শেষ পরীক্ষা,ভার্সিটি জীবনের শেষ পরীক্ষা। হতাশায় দুঃখে গলা দিয়ে ঠেলে কান্না পেতে লাগল। বের হয়ে দেখি সবাই মহা উৎসাহে উত্তর মেলাচ্ছে, হাসাহাসি করছে। আমি কারো দিকে না তাকিয়ে দ্রুত হেঁটে,প্রায় দৌড়ে বের হয়ে গেলাম। তখন অন্বয়ের কথাও মাথায় নেই।ফুটপাথ ধরে হাঁটছি কেবল।
"এই যে শুনছেন?" ফিরে তাকালাম। অন্বয়।চোখ দিয়ে গড়িয়ে দু'ফোঁটা পানি পড়ল। কেন জানি বাঁধ মানল না।অন্বয়কে আমি শুরু থেকে আজ পর্যন্ত আত্মবিশ্বাসী এক তরুণ হিসাবে দেখেছি। আজ প্রথমবার তার চোখেমুখে বিভ্রান্তি দেখতে পেলাম। একটা কথাও না বলে এসে ডান হাতের তেলোর দিকের কবজি দিয়ে আমার গাল বেয়ে বয়ে যাওয়া জলের ধারা মুছে দিল।একটা রিক্সা ডেকে উঠে একদিকে চেপে বসল। আমিও উঠলাম। এমন সময় হৃদের ফোনকল।বললাম কী হয়েছে হলে। সে বলল তার পরীক্ষাও সুবিধার হয় নাই। কোশ্চেনে কীজানি ভুলভাল। সবারই এক অবস্থা। ডিপার্টমেন্টে নাকি কথা বলতে যাচ্ছে সবাই। শুনে একটু শান্ত হলাম। বললাম সন্ধ্যায় বাসায় আসতে।
ফোন রেখে বোকার মত বসে আছি। অন্বয় বলল, "বেটার ফীল করছেন কি? নাকি আরেকটু কাঁদবেন?"
আমি চোখ ছোটছোট করে বললাম, "আপনি যদি খবরদার কাউকে বলেছেন আমি কেঁদেছি তো আপনার খবর আছে। আপনার জন্যই এই অবস্থা হয়েছে।"
"আমি কী করেছি?"
আমি কোন ভাল উত্তর খুঁজে না পেয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলাম।
" দেখেন নয়ী, আমার এর মধ্যে বেশ কয়েকবার মনে হয়েছে আপনাকে কল দিয়ে গল্প করি। কিন্তু আপনার পরীক্ষা দেখেই কিছু করি নি। আজ দোষ দেবেন জানলে ঠিকই ফোন করে বসতাম।"
নয়ী! আমাকে এই প্রথম নাম ধরে ডাকল! আমার নাম শুনতে এত সুন্দর লাগে নিজেও জানতাম না!
"কিছু বলেন!"
আমি এই প্রসঙ্গে কিছুই বললাম না। যেচে পড়ে ধরা খাওয়ার মানে নেই।"আমরা কোথায় যাচ্ছি?"
"আপনার বাসায়... ইয়ে... আমার -"
এমন সময় আবার ফোনটা বেজে উঠল। মিমি বেগমের ফোন। জানা গেল প্রশ্নে ভুল ছিল। অটোমার্কিং হবে। শুনে যা-ও টুকটাক মন খারাপ ছিল, চলে গেল।
আহা! ভার্সিটি জীবন শেষ!
ESTÁS LEYENDO
অনেক রোদ্দুর
Ficción Generalহঠাৎ বিয়ের কথা বার্তা শুরু হয়ে গেল। পরিচয়... ভাল লাগা,না লাগা...