বাসার হুলিয়া পুরা চেঞ্জ! নতুন সোফাকাভার, পর্দা। নতুন টেবিলক্লথ। আস্তে আস্তে বাসার ভেতর ঢুকছি আর অবাক হচ্ছি। টুকটাক চেঞ্জ না,আমূল চেঞ্জ। আমার খাট পালটে ফেলা হয়েছে। শুধু তাই না। রান্নার সুবাস নাকে আসছে। আব্বাও এই অসময়ে বাসায়। ব্যাগটা ঘরে রেখে রান্নাঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালাম, "আম্মা-"
ঠিক এমন সময় দরজার বেল বাজল-
আম্মা কিজানি রান্না করছিল। "ও তুই এসেছিস? যা তো মা দরজাটা খুলে দ্যাখ কে আসছে? আমার দুই হাত ব্যস্ত। বুয়াও ছাদে গেছে,ফিরবার নাম নাই। তোর বাপটাও যে কী, দরজা খোলার বেলায় তাকে পাওয়া যায় না,গাছে পানি দিচ্ছে বারান্দায় না কই যে ..-"
আম্মার গজগজ না শুনে আমি দরজা খুলতে গেলাম। দেখি রাপ্তিকে কোলে নিয়ে আপা, সাথে নীরা। নীরা আমার খালাতো বোন। বছর পাঁচেকের ছোট কিন্তু আমার মত যে কাউকে দশবার বেচে দিতে পারবে,কেউ বুঝবেও না। দুইজনের মুখই ১০০ ওয়াট বালবের মত জ্বলছে।
ব্যাপার স্যাপার যে ভাল না ঢোকার পর থেকেই বুঝছি । কিন্তু এখন এদের দেখে সেটা রীতিমত আশঙ্কায় পরিণত হল। একটা সম্ভাবনার কথা নিজের মনেও উঁকি দিয়ে গেল, কিন্তু মনে প্রাণে চাচ্ছি সেটা যেন ভুল হয়।
"কী খবর আপা? কেমন আছ? কী মনে করে?"
আপা রাপ্তিকে আমার কোলে দিয়ে ঝামটা মারল, "আমার বাপের বাড়ি আসতে এখন কিছু মনে করা লাগবে?"
আমি একটু ব্যস্ত হয়ে বললাম, "আরে না না। বাসায় আসার পর থেকেই দেখছি ঈদ লেগেছে। বুঝতে পারছি না এত আয়োজন কেন,তাই বলছিলাম আরকি। ক্ষেপে যাচ্ছ কেন?"
"তোর বিয়ের পর যেদিন এ বাড়ি আসবি,সেদিন তোকে জিজ্ঞেস করব-কী মনে করে আসলি,সেদিন বুঝবি"
আমি এটারও একটা উত্তর দিতাম কিন্তু আবারো বেল বাজল, আমি উঠে গেলাম রাপ্তিকে নিয়েই। মেয়ে অনেক ত্যাঁদড় হয়েছে। হাত পা ছোঁড়াছুঁড়ির চোটে টেকা যায় না।
দরজা খুলে আবারো চমকে গেলাম।
রাশেদ ভাই!
ওনাকে কদাচিৎ দেখা যায় কোথাও আসতে।জন্মদিন, ঈদ, বা বড় কোন 'না আসলেই না' জাতীয় অনুষ্ঠান ছাড়া তাকে কোথাও দেখা যায় না!
"কী খবর পিচ্চি? তোমাকে তো আর পিচ্চি ডাকা যাবে না। বড় হয়ে গেলে!", একগাল হাসি দিয়ে রাশেদ ভাই ঢুকলেন। দুই হাতে দুই দুই চারটা মিষ্টির বাক্স।
আমি কোনমতে একটা শুকনা হাসি দিয়ে সরে গিয়ে জায়গা করে দিলাম ঢুকার। কোলে রাপ্তি না থাকলে বাক্স গুলা নেয়া যেত।
"নীরা-আ-আ"
নীরাকে ডাক দিয়ে সোজা রান্না ঘরে গেলাম।
আম্মা দেখি আপাকেও রান্না করতে বসিয়েছেন।
বুয়াও ঠিক ওইসময় রান্নাঘরে ঢুকছিল। ওনাকে বললাম, "আপনি নাড়েন।"
বলে আপার কোলে রাপ্তিকে একরকম তাড়াহুড়া করেই ধরায়ে দিয়ে আম্মাকে হাত ধরে আমার ঘরে টেনে নিয়ে আসলাম।
"আম্মা তুমি আমাকে বলবা বাসায় হচ্ছেটা কী?"
নিজের কণ্ঠ শুনে বুঝলাম,ভালই রেগে গেছি।
আম্মা মনে পড়ার ভান করে বললেন, "তোকে বলা হয় নাই,না?"
আমি কিছু না বলে তাকিয়ে রইলাম।
"তোকে দেখতে ছেলেপক্ষ আসবে।"
আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। "ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে মানে?"
"মানে দেখতে আসবে। তোর বাবার পরিচিত। তোকে পছন্দ করেছে। তোর জন্যই এত আয়োজন। "
"আম্মা। আমি এখন বিয়ে করব না।"
"এখন কে বিয়ে করতে বলছে? খালি একটা ফর্মালিটি। না করে দিস।"
" এই যে এত আয়োজন, খরচ লাগছে না? 'খালি একটা ফর্মালিটির জন্য এত খরচ কেন?"
"বললাম না তোর বাবার বন্ধু? ওনাদের এম্নিও খাওয়াতাম। ওনারাই বললেন একবারে মামনিকে দেখে যাব। তাই আরকি-"
"আর তোমরা এটা মামনিকে এখন জানাচ্ছ?"
"তোর আজকে মাত্র পরীক্ষা শেষ হল। কাল বললে বাড়ি মাথায় তুলে পরীক্ষাটা খারাপ দিতি, এইজন্যে বলি নাই।"
আমি হতাশ হয়ে বিছানায় বসে পড়লাম।
আম্মা মাথায় হাত দিয়ে বললেন, "বললাম তো, 'না' করে দিস। এখন চট করে গোসলটা করে একটু রেস্ট নে। সন্ধার মধ্যে রেডি হলেই হবে।"
এই বলে আম্মা চলে গেল।
আমি ফোনটা হাতে নিয়ে নিজের অজান্তেই অন্বয়কে ফোন দিলাম।
রিং হয়, রিং হয়, কেউ ধরে না।
উদাসীনভাবে যে কল দেওয়া শুরু করেছিলাম, সেটা রীতিমত অস্থিরতায় পরিণত হল। ফোন দিতে দিতে একসময় অবশেষে সে ফোন ধরল, "হ্যালো-"
কথা শেষ করতে না দিয়েই বললাম, "অন্বয়,আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে আজকে..."
ESTÁS LEYENDO
অনেক রোদ্দুর
Ficción Generalহঠাৎ বিয়ের কথা বার্তা শুরু হয়ে গেল। পরিচয়... ভাল লাগা,না লাগা...