"কখন?", অন্বয়কে সামান্য বিচলিত মনে হল।
"সন্ধ্যায়.."
"পাত্র কে?"
"জানি না।"
অন্যপাশে কোন শব্দ নাই।
আমি আবারো জিজ্ঞেস করলাম, "আছেন?"
"হুঁ"
"কিছু বলেন!"
"কী বলব? আপনাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে তাতে আমার কী বলার আছে?", প্রথমে যে শংকার আভাস ছিল,এই শেষ প্রশ্নে মনে হল তা নাই। জানিনা প্রথমে ভুল ভেবেছিলাম না এখন ভুল ভাবছি। কিন্তু কন্ঠস্বরের এই সুক্ষ্ম ওঠানামাটা আমার কানে ধরা পড়ল আর মনটা দুম করেই ছোট হয়ে গেল। আসলেই তো!
আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে তাতে ওনার কী?!
অভিমান গলা দিয়ে ঠেলে আসতে চাইল।
সামলে নিয়ে কৃত্রিম হাসি হেসে বললাম, "ভয় লাগছে তো,কখনো ছেলেপক্ষ দেখতে আসে নাই,তাই ভাবলাম কাউকে বলি। কাউকে বললে হয়ত ভয় কমবে।"
"কিসের ভয়?",প্রত্যুত্তরে হাসি দিল অপরপক্ষও।
"যদি আমাকে পছন্দ না করে?!"
"ভয়ের কিছু নাই। আপনাকে ভাল না লাগা একটু কঠিন।"
আমি কিছুক্ষণ চুপ করে ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলাম। এরপর বৃথা চেষ্টা ছেড়ে বালুবেলায় আছড়ে পড়া ঢেউয়ের মত ভেঙে পড়লাম, "আপনি না আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন? আপনার কিছু এসে যাচ্ছে না আমাকে যে অন্য কেউ বিয়ে করছে?!"
অন্বয়ের বিস্ময় আমি ফোনের এইপাশ থেকে টের পেলাম, "আপনি কাঁদছেন কেন?!
আমি কাঁদতে কাঁদতেই ধমক দিলাম,"তুমি না আমাকে খুব তুমি করে বল?"
"আরে! তুমিই না বললে যে প্রেম করলে 'তুমি' করে বলতে হয়, সেজন্য এটেম্পট নিয়েছিলাম। কিন্তু-"
"কিন্তু কী?"
কয়েকমুহূর্ত নীরবতার পর অন্বয় বলল,
"কিন্তু তুমি তো আমাকে বিয়ে করতে চাও না।"
"বলেছি সেটা?"
"বিয়ে করতে চাও?"
আমি চুপ করে গেলাম। এমন সময় ঠাস করে একটা শব্দ হল, বাইরের ঘরে কোলাহল শুনতে পেলাম। বললাম, "কী জানি ভাঙল। দেখে আসি কী হল",এই বলে ফোন কেটে দিলাম।
ভেবেছিলাম প্লেট-বাটি-গ্লাস কিছু একটা হবে; গিয়ে দেখি টিউবলাইট ফেটেছে। বুয়া দেখি ঝাড় দিতে দিতে বয়ান দিচ্ছে, "কাচ ফাটা তো লক্ষুণ ভালা না"
আম্মা বকা দিলেন, এইসব কুসংস্কারের কথাবার্তা বলতে একদম নিষেধ করে দিলেন।
আমি ঘরে চলে আসলাম।
ঘরে ঢুকে দেখি অন্বয়ের মেসেজ, "উত্তরের অপেক্ষায় আছি।"
আমি কোন রিপ্লাই না দিয়ে গোসলে ঢুকলাম। শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে ঠান্ডা পানির নিচে দাঁড়িয়ে থাকলাম কতক্ষণ তা নিজেও জানি না। অদ্ভুত রকম একটা অস্থিরতা। অন্বয়কে নিয়ে কোনদিন সেভাবে সিদ্ধান্ত নেই নি কিন্তু অন্য কারো সম্ভাবনা উঁকি দেওয়া মাত্র মনে হচ্ছে কিছু একটা ভুল হচ্ছে, প্রচন্ড ভুল হচ্ছে ; এমন হওয়ার কথা না। কিন্তু এত অসহায় লাগার কী আছে? আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তো আম্মা আব্বা আমার বিয়ে দেবে না!
না দিলেও! এই যে আরেকজন আসবে,দেখবে,মনে মনে যাচাই করবে,স্ত্রী হিসাবে কল্পনা করবে- পুরোটাই মনে হচ্ছে অন্বয়ের অধিকারে হস্তক্ষেপ...
"অন্বয়ের অধিকার"? কীসের অধিকার যেন?!
সম্বিত ফিরলো দরজার ধাক্কায়।
"কী?"
নীরা ওইপাশ থেকে উত্তর দিল, "তোমার ফোন বাজে আপু আর কতক্ষণ লাগবে? এক ঘন্টার উপর হয়ে গেছে!"
"কে ফোন দেয়?", দুরুদুরু বুকে জিজ্ঞেস করলাম। ফের যদি উত্তর চায় কী বলব আমি?
"হৃদ ভাইয়া।"
একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলাম।
"ধরে বল বেরুচ্ছি।"
কাপড় পরতে পরতে টের পেলাম ঠান্ডা লেগে গেছে।
বের হয়ে হৃদকে কলব্যাক করলাম। "তোর নাকি বিয়ে?"
কিছু বললাম না।
আবারো প্রশ্ন করল,"কিরে বিয়ে করে বিদেশ ঘুরবি, কক্সবাজার হানিমুনে যাবি, আমাকে অল্প বয়সে মামা-"
এতক্ষণ শক্ত হয়ে ছিলাম। আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। কেঁদে ফেললাম।
অপ্রস্তুত কন্ঠে বারবার মাফ চাইতে লাগলো হৃদ। "আরে আমি তো ফাজলেমি করছিলাম! কাঁদছিস কেন! এই পাগল!"
কে শুনে কার কথা।
কাঁদতে কাঁদতেই বললাম, "আমি অন্য কাউকে বিয়ে করব না রে..."
"অন্য কাউকে করবি না মানে? কাকে করবি?"
"অন্বয়কে।"
"এই গাধা! এটা তো ভাল খবর! আন্টিকে বলেছিস? তাহলেই তো এইসব সার্কাস থেমে যায়!"
"উঁহু", কাঁদতে কাঁদতেই বললাম,"তোকেই প্রথম বলছি।"
"মানে?!"
"অন্বয়ও জিজ্ঞেস করছিলেন,ওনাকেও বলা হয় নাই। কেউ জানে না।"
"এই তোর কি মাথা ঠিক আছে? সারপ্রাইজ বার্থডে করা এক জিনিস, সারপ্রাইজ বিয়ে বলে কিছু শুনি নাই। তুই কি সারপ্রাইজ বিয়ে করবি? বরকে বিয়ের দিন জানাবি?"
নাক টেনে বললাম,"উঁহু"
"তাহলে জানা অন্বয় ভাইকে!"
"জানাব? ফোন দিয়ে কী বলব?"
"বলবি তোর মাথায় ব্রেইন ট্রান্সপ্লান্টের ব্যবস্থা করতে। তুই রিটার্টেড আচরণ করছিস। এখন আমি রাখছি। তুই তোর ঢং বাদ দিয়ে যাকে ফোন দেওয়ার তাকে ফোন দে।"
আমি উপরে নিচে মাথা নাড়লাম।
"কীরে কিছু বল!"
"তুই বাসায় আয় কুইক। আমি অন্বয়কে ফোন দিচ্ছি..." হঠাৎ করে দিশাহারা ভাবটা কেটে গেল। আমি জানি আমি কী চাই...

KAMU SEDANG MEMBACA
অনেক রোদ্দুর
Fiksi Umumহঠাৎ বিয়ের কথা বার্তা শুরু হয়ে গেল। পরিচয়... ভাল লাগা,না লাগা...