নির্দিষ্ট সময়ের পর জীবনে প্রতিটি বাবার হার্ট বড্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। আর সন্তানদের ইচ্ছে অনিচ্ছে সব ত্যাগ করে উনাদের ইচ্ছে মতো এগিয়ে যাওয়াই হয় সে রোগের একমাত্র মেডিসিন। বুকের বা পাশে হাত রেখে অনায়াসে পরিস্থিতি বদলে ফেলার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা হয়তো উনাদের দিয়েছেন।
হাস্যকর লাগলো? হয়তো! এই দেখুন না। আমি এখন বিয়ে করতে চাইছিলাম না বলে হঠাৎ আমার বাবার বুকের ব্যথা বেড়ে গেলো।হৃদরোগের কারণে ইচ্ছের বিরুদ্ধে উনার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করতে হচ্ছে।
এখন মেয়ে হয়ে তো আর বাবার অসুস্থতার জন্য দায়ী হতে পারি না। তাই স্বপ্ন, ইচ্ছে অনিচ্ছে গুলো সব না হয় এই চন্দ্রাবতীর রাতে এই নদীতেই বিসর্জন দিয়ে দিলাম।নিজের কথা শেষ করে স্মিত হেসে শাওনের দিকে তাকালো আয়েত্রী।
আজ মেয়েটার মন বড্ড খারাপ।মন খারাপের রেশ প্রতিফলিত হচ্ছে মেয়েটার মুখে।
বাইশ বছর বয়সী তরুণীর ভীষণ মন খারাপের দেশে শাওন হয়তো হারিয়ে যাচ্ছিলো। নিজেকে সামলে ধরে আসা গলায় জিজ্ঞেস করলো,"পালাবেন আয়েত্রী?"
শাওনের এমন প্রশ্নে চমকে উঠেছে আয়েত্রী। কয়েক মূহুর্তের ব্যবধানে নিজেকে সামলে নিতে চাইলেও অনুভূতি চোখ এড়ায় না সামনে বসে থাকা মানুষটার। আয়েত্রীর নিজের অনুভূতি লুকানোর খেলার প্রতিউত্তরে শাওনের মুচকি হাসি। সে হাসি চোখ এড়িয়ে যায়নি আয়েত্রীর। তাইতো দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে পোশাকে লেগে থাকা বালি পরিষ্কার করতে করতে বলল,
"আজ আসি। "
এক মূহুর্ত অপেক্ষা করেনা আয়েত্রী।দ্রুত পা ফেলে সামনে। একটি বারের জন্য পিছন ফিরেও দেখলো না। এক অদ্ভুত শক্তিতে এই ছেলেটা তাকে বেধে ফেলেছে। কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো সত্যি তার সাথে সে পালাতে সম্মতি জানিয়ে দিবে।
মানুষের জীবন বড্ড ঠুনকো। দমকা বাতাসেই পথ হারিয়ে অন্য পথে চলতে থাকে। পাঁচ দিন আগেও এমন ছিলো না আয়েত্রী পরিস্থিতি।পাঁচ দিন আগেও যদি বিয়ের সম্পর্ক আসতো হয়তো আয়েত্রী ছেলের সাথে কথা বলার প্রয়োজনবোধ করতো না। কারণ বাবা যা ভালো বুঝে তাই হবে। কিন্তু আজ মনের গহীন বালুচরে ছোট্ট একটা কুঠুরি দরজার ওপাশে ক্ষীণ আলো পাশে নিয়ে বসে আছে শাওন। এই ক্ষীণ আলো উপেক্ষা করবার মতো শক্তি আয়েত্রী জুগান দিতে পারছে না। কেনো পারছে না সে নিজেও জানে না।