পরদিন সকালে সেই ভদ্রলোকের লাশ নদীর পাড়ে ঠিক সেই অবস্থায় পাওয়া যায় যেভাবে আয়েত্রী তাকে রাখতে চেয়েছিলো।
নাভী অবধি নদীর পাড়ের বালিতে দাবিয়ে রাখা।সর্বপ্রথম সকালে মাটি কাটা এক মহিলাদলের নজরে আসে। দূর থেকে দেখে মনে করেছিলো হয়তো কেউ দুটো বাঁশ পাশাপাশি দাবিয়ে রেখেছে। কিন্তু কিছুটা এগিয়ে যেতেই দেখতে পেলো একজন পুরুষ মানুষের দেহ স্পষ্টত্ব। কেনোনা লুঙ্গি কাছাড় দেওয়া ছিল।তাদের চিৎকারের শব্দে
কয়েক মূহুর্তের মধ্যে গ্রামবাসী সবাই একত্রিত হয়ে যায়।থানা থেকে পুলিশ এসে লাশ উঠানোর সময় বেশ হট্টগোল পড়ে গিয়েছিলো। কেনোনা লাশের নাক-মুখ দিয়ে অনবরত শামুক বের হচ্ছিলো। কেমন একটা গা ঘিনঘিন ব্যাপার। যখন মুখ পরিষ্কার করা হলো তখন দেখলো এ সেই ভদ্রলোক যে কাল আয়েত্রীর নানা বাড়ি গিয়েছিল।এক কানে দুকানে কাল আয়েত্রীর বলা কথা পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়লো।পুলিশ লাশ নিয়ে চলে যাওয়ার আগে তাই একবার হাজী বাড়িতে এসেছে আয়েত্রীর নানার সাথে দেখা করতে৷
বিছানার সাথে একদম লেপ্টে আছে আয়েত্রী।শরীরে বিন্দু মাত্র শক্তি নেই। তাপমাত্রা চমৎকার স্বাদ নিয়ে ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে।লোকচক্ষুর আড়ালে বার দুয়েক রক্ত বমি হলেও তিন বারের বেলায় পুলিশ অফিসারের সামনেই গড়গড়িয়ে বমি করে দিলো আয়েত্রী।
আয়েত্রী এমন শারীরিক অবস্থা দেখে পুলিশ অফিসার এতটুক নিশ্চিত হলো
"আর যাই হোক। এই মেয়ের পক্ষে খুন করে, বিনা কিছু দিয়ে মাটি না খুড়ে, শুধু শক্তিবলে লাশ দাবিয়ে রাখা সম্ভব নয়।"আয়েত্রীর প্রথম এমন অসুখ হয় যখন তার বয়স মাত্র সাত বছর।বর্ষাকালে সবার মতন আয়েত্রী গিয়েছিলো নদীতে গোসল করতে। হাটু পানিতে নেমেই খেলছিলো সে।হঠাৎ নদীতে তীব্রটান আসে। পানির টানে আয়েত্রী অনেকটা দূরে চলে গিয়েছিলো। আয়েত্রীর চিৎকার করার কোন অবকাশ ছিল না।কারণ সে প্রায় ডুবেই গিয়েছিলো।সময় মতো আয়েত্রীর মামার নজরে এসেছিলো।সাঁতরে গিয়ে আয়েত্রীর মামা দ্রুত আয়েত্রীর পা ধরে টেনে কোনভাবে পাড়ে নিয়ে আসে সেদিন।কয়েক মুহূর্ত দেরী হলে যেকোন কিছু হতে পারতো। স্বাভাবিকভাবেই বেশ ভয় পেয়ে যায় আয়েত্রী । সেদিন বিকেলবেলায় গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে। মধ্যরাত ১-৩.৪৫ অবধি বেশ কয়েকবার রক্তবমি হলে, সে রাতেই আয়েত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো উদ্দেশ্যে নিয়ে রওনা হয় আয়েত্রীর পরিবার।