ইশরাকদের গাড়ি যখন গ্রাম ছেড়ে শহরের রাস্তায় তখন এশার আজান পড়েছে। ঘন্টাখানেকের পথ পাড়ি দিয়ে বাসায় পৌঁছে ক্লান্ত শরীর বিছানায় সবে মাত্র গা এলিয়েছে ইশরাক। পায়ের জুতো অবধি খুলেনি।
কখনো কখনো দেহের ক্লান্তি থেকে মনের ক্লান্তি মানুষকে অবসন্নতায় ঘিরে বসে। আজ ইশরাকের মন ভীষণ ক্লান্ত। আয়েত্রীকে এতটা ভালো লেগে যাবে বুঝে উঠতে পারেনি ইশরাক।
আজ দুপুরে যখন ও বাড়ি পৌঁছে সবে মাত্র বসেছে ঠিক তখন কাউকে বেশ খোঁজাখুঁজি শুরু হয়েছে। যার মাধ্যমে বিয়ের কথা এগুচ্ছে, ইশরাকের ফুপু বললেন,
ও বাড়ির একটা মেয়েকে পাচ্ছে না। মেয়েটা অসুস্থ।ইশরাক ভেবেছিলো হয়তো বাচ্চা মেয়ে। আসার সময় নদীর পাড়ের রাস্তা হয়ে এসেছে। কেনো যেনো মনে হয়, হয়তো বাচ্চা মেয়ে নদীর পাড়ে খেলতে গিয়েছে!
কারণ বাচ্চাদের পানির প্রতি আলাদা টান থাকে।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে যখন নদীর পাড়ের দিকে যাচ্ছিলো,
দূর থেকে দেখতে পায় একটা কালো থ্রিপিস পড়া মেয়ে বসে আছে।নদীর পাড়ের বালি রোদে চিকচিক করছে, শুধু মাত্র মেয়ের হাত দুটো দেখে বুঝতে পারে মেয়েটা রোদের তাপদাহে পুড়ে যাচ্ছে।
তখনি তাকে পাশ কাটিয়ে দেখতে আসা কনের খালু, যে ভদ্রলোকের মেয়ে হারিয়েছে উনি মোটামুটি দৌড়ে সেই মেয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।ইশরাক পিছু পিছু ঢাল বরাবর নেমে যায়।
যখন মেয়েটাকে ভদ্রলোক হাতের বাহু ধরে দাঁড় করায়,
প্রথম যা নজরে আসে তা হলো
রোদের তাপে লাল হয়ে যাওয়া দুটো গাল। টলমলে চোখ, আর নাক টান দেওয়ার ভঙ্গি।
বুঝতে অসুবিধে হয় না এই সেই হারিয়ে যাওয়া মেয়ে।এত বড় মেয়েকে পাচ্ছে না বলে বাবা-ভাইয়ের এত চিন্তার কারণ ইশরাক বুঝে উঠতে পারলো না। বিশ বছরের বেশি হবে তৎক্ষনাৎ মনে পড়লো এই মেয়ে তো অসুস্থ! তাই হয়তো সবার এত চিন্তা।
ভদ্রলোক মেয়েকে পেয়ে কিংবা এই বয়সে দৌড়ে যাওয়ায় বেশ হাপিয়ে উঠেছে। ভাবভঙ্গি তাই প্রকাশ করছে তাই ইশরাক হাত বাড়িয়ে মেয়েটার ডান হাত ধরেছে। মেয়ের বাবাও কিছু বলেনি কেনোনা কোন একটা কারণে,
হয়তো উনি মাথার উপর জ্বলন্ত সূর্য এবং বালির উত্তাপে মেয়েকে নদীর পাড়ে রাখতে চাইছে না।