পর্ব-২২

57 2 0
                                    

সখি তার স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছে কোথায় থেকে এমন বিচ্ছিরি গন্ধ নাকে লাগছে!
আসে পাশে তাকিয়ে পঁচা কিছু দেখতে না পেয়ে শ্রাবণকে জিজ্ঞেস করতে যাবে সে বিচ্ছিরি কোনো গন্ধ পাচ্ছেন কিনা?
এরমধ্যে শ্রাবণ সখির হাত ধরে সখি কেঁপে উঠল।
শ্রাবণ সখির হাত শক্ত করে ধরাতে সখি শ্রাবণের মুখের দিকে চোখ তুলে তাকায়।
তাকিয়ে শ্রাবণের লাল চোখ দেখে সখি  কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছে তবে তা শ্রাবণকে বুঝতে দেয়নি।
সে  শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিল মনে মনে বললো, গন্ধ তো মনে হয় তার কাছে থেকেয় আসছে।
আচ্ছা এটা কিসের গন্ধ?
তাকে কি জিজ্ঞেস করবো?
না না তার চোখ মুখ যে লাল হয়ে আছে, এমনিতেই  তা দেখে আমার ভয় লাগছে।
আচ্ছা মানুষটার চোখ মুখ এমন লাল হয়ে আছে কেন?
তার চোখ কি লাল!
না সে কোন কারণে আমার উপর রেগে আছে?
আচ্ছা নিজের অজান্তে আমি কি কোন ভুল করে ফেলেছি ?
কিন্তু এর আগে তো তার সাথে আমার দেখা সাক্ষাৎ হয়নি।
তাকে তো ভালো মতো আজকেই দেখলাম
এরমধ্যে আমার দ্বারা কি ভুল হলো?
মনে মনে সখি এসব চিন্তা ভাবনা করছে।
এরমধ্যেই হঠাৎ করে শ্রাবণ সখির হাত ছেড়ে গালে জোরে চাপ দিয়ে ধরলো।
আচমকাই সখির গাল চেপে ধরাতে সখি প্রচন্ড ব্যথা পাচ্ছে এবং সেই সাথে  হতভম্ব হয়ে গেছে!
কিন্তু শ্রাবণ তার গাল চেপে ধরেছে সেজন্য কিছু বলতেও পারছে না।
ব্যথা ও ভয়ে সখির চোখ দিয়ে পানি পরছে
শ্রাবণ সখির  চোখের পানির তোয়াক্কা না করে জোরে বলতে লাগলেন,
এই ছোট লোকের বাচ্চা বড় লোকের ছেলে দেখলে হুস থাকে না তোদের তাই না?
তোর মতো ক্ষ্যাত, ছোটলোক মেয়ে আমার বৌ হয়ে এসে আমার জীবনটায় নষ্ট করে দিয়েছিস।
আমার লাইফে তোর কালো ছায়া পরার পর থেকে   সুখ শান্তি সব ধ্বংস হয়ে গেছে ।
সখি লোকটার কথা শুনে ভেবে পাচ্ছে না
কিভাবে সে তার বরের জীবন ধ্বংস  করলো!
যার সাথে সামনাসামনি দেখা হলো এক দুইবার মাত্র তাও আজকে।
একদিনে কারো জীবন কিভাবে ধ্বংস হয়!
আর আমি কি এমন করেছি যে  সে আমাকে এ কথা বলছে কেন?
সখি বেশি কিছু ভাবার সময় পেলো না তার পূর্বেই শ্রাবণ তাকে ধাক্কা দিয়ে খাটে ফেলে দিয়েছে।
সখিকে খাটে ফেলে সখির  দুই হাত চেপে ধরে
বললেন,
কিরে ফকীন্নির বাচ্চা?
তোর বুঝি শরীরের ঝাঁজ বেশি এলাকার ছেলেদের মাথা নষ্ট করে হচ্ছিল না!
শহরের ছেলে দেখে লোভ সামলাতে পারিস নাই তোরা
তাই বুঝি তোর বাপ লোভে অন্ধ হয়ে মরার সময় আমকে ফাঁসিয়ে দিলো।
কয়দিন কাঁদার ফলে সখি এমনিতেই অসুস্থ ও দূর্বল হয়ে আছে।
এরমধ্যে শ্রাবণের ব্যবহারে তার মনের মধ্যে প্রবল বেগে ঝড় উঠেছে।
সবকিছু লন্ডবন্ড করে দিচ্ছে।
স্বামী নামক লোকটার কথা শুনে সখির শরীরে আগুন জ্বলছে বিয়ের প্রথম দিনেই তার স্বামীর জন্য তার মনে  একরাশ ঘৃণার সৃষ্টি হলো।
সখির কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল তাও নিচু স্বরে কাঁপা কাঁপা গলায় প্রতিবাদ করে বলে ,
ছিঃ এগুলো কি বলছেন?
আপনি নাকি শিক্ষিত!
তাহলে শিক্ষিত মানুষের ভাষা এতো জঘন্য হয় কি করে?
কথাটা শুনে শ্রাবণ সখির হাত ছেড়ে  তার পেটের ওপর উঠে বসে পরপর দুটো থাপ্পর দিয়ে বললেন,কুত্তার বাচ্চা আমাকে শিক্ষিত চেনাতে এসেছিস?
আমি  কিভাবে কথা বলব  তা তোর মত ছোটলোকের বাচ্চার কাছে আমাকে শেখতে হবে ?
শালী তুই এই পর্যন্ত গ্রামে নাগড়দের সাথে না জানি  কত রঙ্গনীলা করেছিস!
আমার বাবাকে দেখে সতী সাবিত্রী সেজে তাকে হাত করে আমাকে বিয়ে করেছিস।
খারাপ বাজে গাইয়া মেয়ের মুখে ছিঃ শব্দ মানায় না বুঝতে পারছিস?
শ্রাবণ সখির পেটের ওপর উঠে বসায় , পেটে চাপ লাগছে ওর নিঃশ্বাস নিতে ও কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে।তাও আস্তে আস্তে বললো,
আমি ব্যথা পাচ্ছি আমায় ছেড়ে দিন
আমি এখানে আর থাকবো না,আমি আমার ভাইয়াদের কাছে যাব।
আমাকে ছেড়ে দিন  কথাটা বারবার কাঁদতে কাঁদতে  শ্রাবণকে অনুরোধের সুরে বলছিল।
শ্রাবণ সখির কথা শুনে বললেন, তোকে যেতে দিলে আমার কাছে থেকে তোর যে শাস্তি  এতদিন জমা হয়েছে তার কি হবে?
শুধুমাত্র তোর জন্য আমাকে বাবার কাছে থেকে বকা খেতে হয়েছে। আদরের ছোট ভাই যে কখনো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলেনি ।
সেও  আজকে তোর জন্য আমার বন্ধুদের সামনে আমাকে অপমান করলো।
নেকাকান্না আর অসুস্থতার অভিনয় করে তুই একদিনের মধ্যেই আমার ভাইকে বশ করে নিয়েছিস।
তুই কি ভেবেছিল আমি তা বুঝতে পারবো না!
তোকে তো এতো সহজে ছাড়া যাবে না।
তুই যা করেছিস তার ফল তো তোকে ভোগ করতে হবেই।
কথাটা বলে শ্রাবণ সখির ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়লো।
শ্রাবণ নেশায় এতটাই আসক্ত ছিল যে সখি তার সহধর্মিণী কোন কলগার্ল নয় তা ভুলে গেছে।
যে শ্রাবণ আজ পর্যন্ত কোন মেয়ের সাথে জোরজবরদস্তি করেনি সেই শ্রাবণ আজকে নিজের বিবাহিত স্ত্রীর সাথে জানোয়ারের মত আচরণ করছে।
সখির সারা শরীর শ্রাবণের নৃশংসতার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
কামড়ে ও নখের আচর কেটে মেয়েটার পুরো শরীর আঘাতে জর্জরিত করে ফেলেছে।
সখি শত অনুরোধে চোখের পানি বা ব্যথায় ছটফট করা আর্তনাদ শ্রাবণের কানে পৌঁছায়নি!
সখি শ্রাবণের কাছে থেকে নিজেকে বাঁচাতে কয়েকবার চেষ্টা করে শ্রাবণের সাথে পেরে উঠেনি।
বরং সখির ধস্তাধস্তিতে শ্রাবণ হাতে সামান্য ব্যথা পেয়েছিল তার শোধ নিতে শ্রাবণ  সখির ঠোঁট কামড়ে রক্ত বের করে দিয়েছে।
তার সাথে চর থাপ্পর তো রয়েছেই।
সখি চিৎকার দিতে গেলে শ্রাবণ তার মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে শব্দ বন্ধ করে দেয়।
সখি ভেবে পেলো না এটা কি আদৌও তার স্বামী ।
নাকি স্বামীর নামক একজন  ধর্ষক।
তার সামনে থাকা এই ব্যক্তি আদৌও মানুষ না অন্য কিছু।
লোকটা ওকে এতো কষ্ট দিচ্ছে কেন?
সখি তো আর নিজের ইচ্ছায় এই লোককে বিয়ে করেনি।
তাছাড়া সে তো বলেছে তার ভাইদের কাছে চলে যাবে ।
তাও যেতে দিচ্ছে না।
আরো  বেশি করে কষ্ট দিচ্ছে কেন?
বিরবির করে বলছে,
আচ্ছা আমার সব ঝাপসা লাগছে কেন ?
আমি কি মারা যাচ্ছি?
ভাইয়া তোমাদের কি আর দেখতে পাব না?
বাবার স্বপ্ন বোধহয় আর পূরণ করতে পারব না।
বাবা ও বাবা আমায় ক্ষমা করে দিও আমি তোমার কাছে আসছি ।
শ্রাবণ সখির বিরবির করে বলা কথায় পাত্তা না দিয়ে জোর করে  ফিজিক্যাল সম্পর্ক করেন।
যা হওয়ার কথা ছিল দু'জনের ভালোবাসার তা  হয়েছে জবরদস্তি।
সখি ব্যথায় ছটফট করাতে  যেনো শ্রাবণ আরও আনন্দ পাচ্ছিল,
একসময় সখি শ্রাবণের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যায়।
শ্রাবণ এতোটায় নেশাগ্রস্থ ছিলো যে সখি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে, সেদিকে যেনো তার খেয়াল নেয়।
নেশার ঘোরে শ্রাবণ কি করে  ফেলেছে তা টের পেলো না।
যে ছেলে  অন্য মেয়েদের সাথে তাদের ইচ্ছে ছাড়া কখনো জোর করে ফিজিক্যাল     সম্পর্ক করেনি।
সে আজকে স্বামী হয়ে নেশার ঘোরে নিজের স্ত্রীর সাথে একজন ধর্ষকের মতো আচরণ করলো।
বিয়ে মতো একটা পবিত্র সম্পর্ককে জেদের বশে কালিমা লেপন করে দিলো।
আজকের এই ঘটনা শ্রাবণের হয়তো মনে থাকবে না কিন্তু সখি এ রাত কখনও কি ভুলতে পারবে?
ওদিকে
খালিদ এই খালিদ তুই কোথায়?
খালিদ বড় ভাইয়ের ডাক শুনে তার সামনে এসে দাঁড়ায়,
জী ভাইয়া।
সোহাগ খালিদের দিকে তাকিয়ে বললেন, এগুলো কি?
খালিদ মিনমিন করে বললো,দেখতেই পাচ্ছো তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছো কেন?
সোহাগ তার ভাইয়ের দিকে চোখ রাঙিয়ে বলেন,ফাজলামি করছিস ?
এক চর মেরে তোর ফাজলামি বের করবো।
খালিদ তার ভাইয়ের ধমক শুনে মাথা নিচু করে করে বললো,ভাইয়া আমি ফাজলামি করছি না, আমরা যেমন চাই আমাদের সখি তার স্বামীর থেকে  আদর যত্ন,ভালোবাসা পাক তেমনি তানিও আমার আরেকটি বোন হয়।
তারও স্বামীর থেকে আদর যত্ন ,ভালোবাসা পাওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে।
সোহাগ খালিদের কথা শুনে বলেন, আরে ভাই,আমি কখন বললাম তানির অধিকার নেয়?
কিন্তু সব কিছুর একটা সঠিক সময় দরকার।
খালিদ সে কথা শুনে বললো, অধিকার আছে বলছো  ঠিক কিন্তু অধিকার দেওনি।
আর সময় নিজে নিজে তোমার কাছে আসবে না তোমাকে নিজের জন্য সময় বের করে নিতে হবে।
খালিদের কথা শুনে সোহাগ বললেন, হয়েছে তোর ভাষন দেওয়া ?
এখন তুই এগুলো সব ঠিক করে আমাকে ডেকে দিস
আমি একটু ছাদে থেকে আসছি।
খালিদ তার ভাইয়ের কথা শুনে বললো,ভাইয়া তুমি এখন কোথাও যাবে না।
আর আজকে থেকে তুমি আর ভাবী এই রুমে থাকবে।
সখি ,ছোট মা ও রুনা থাকবে বড় রুমে আর আমি ছোট মা'র রুমে থাকবো।
সোহাগ কিছুটা ধমকের সুরে  খালিদ বলে!
খালিদ ধমক খেয়েও সোহাগকে বলে ,আমাকে বকা দিলেও লাভ নেই। আমার ঘুম পাচ্ছে ভাইয়া, শুভ রাত্রি একথা বলে খালিদ ঘুমাতে চলে গেল।
খালিদ আজকে কনভেনশন হলে যাওয়ার আগে তারা দুই ভাই যে রুমে থাকতো সে রুমে পুরো বিছানা ফুল দিয়ে বাসর  সাজিয়ে রেখেছে।
আর সেখানে  ফুল দিয়ে তানি + সোহাগ লেখে রাখছে।
সোহাগ বিছানার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলছে, কখন কবে যে আমার ছোট ভাইটা এতো বড় হয়ে গেল।
আমি বুঝতেই পারলাম না।
পরিবারের সবার প্রতি খালিদের ভালোবাসা দেখে সোহাগের চোখে পানি এসে পরেছে।
আসে পাশে তাকিয়ে সোহাগ চোখের পানি মুছে ফেলল।
এরমধ্যে তানি সোহাগের সামনে  এসে হাজির হয়।
তানি গাল ফুলিয়ে  দাঁড়িয়ে আছে
সে এখনও বিছানায় দিকে তাকিয়ে দেখেনি,
সোহাগ তানির গাল ফুলিয়ে রাখা দেখে বলেন, আমার পিচ্চি বৌয়ের ,মুখ ফুলিয়ে বেলুন করে রেখেছে কেন?
ছোট মা আমাকে রুম থেকে বের করে দিছে।
বলছে আজকে থেকে আমি আর ঐ রুমে থাকতে পারব না। তানির সহজ স্বীকারোক্তি।

সোহাগ তার বৌয়ের কথা শুনে ফিক করে হেসে দিয়ে
তানিকে পাশ কাটিয়ে দরজা লাগিয়ে  তানির কাছে এসে ওকে কোলে নিয়ে বললেন, তোমার সাহস তো কম নয় আমার মায়ের নামে বদনাম করছ!
তানি ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে কান্নার সুরে বলে, আমার ভুল হয়েছে, আমাকে মাফ করে দিন।
দয়া করে আছাড় দিবেন না।
সোহাগ তার পিচ্চি বৌয়ের কথা শুনে হেসে বললেন, সামনে তাকাও।
তানি সোহাগের হাসির শব্দ শুনে চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে   ফুল দিয়ে সাজানো বিছানা দেখে চিৎকার দিতে নিলে
সোহাগ তার শক্ত ঠোঁট দিয়ে
তানির নরম কোমল ওষ্ঠ বন্ধ করে দেয়।
ওকে কোলে নিয়ে বিছানার দিকে এগিয়ে যান।
তানিকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজেও স্ত্রীর পাশে শুয়ে তাকে বুকের ওপরে টেনে নিয়ে খুনসুটিতে মেতে উঠল।
কিছুক্ষণ ওদের ভবিষ্যৎ  নিয়ে আলোচনা করলো।
তানি বারবার সোহাগের গলায় মুখ গুঁজে দিচ্ছিল তা দেখে
সোহাগের মনে হলো তার বৌ তার আরও কাছে আসতে চাচ্ছে।
তানিকে বুকের থেকে বালিশে শুয়ে দিলো ।
সে নিজে বৌয়ের গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে।
  সোহাগ তার ওষ্ঠ দিয়ে তানিকে  মুখে গলায় ঘাড়ে ছোট ছোট পরশ দিলো ।
গলার নিচে যেয়ে তানির দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি ঠিক আছো,আরো চাই তোমার?
তানির সোহাগের দিকে আরেকটু এগিয়ে যায়।
অনুমতি পেয়ে সোহাগ আর এক মূহুর্ত নষ্ট করলো না করে বৌয়ের মাঝে ডুব দিলো।
তলিয়ে গেলো অতুল গভীরে।
তৃষ্ণার্ত দু'টো হৃদয়ের আজকে মিলন হলো।
ওদের ভালোবাসার সম্পর্ক আরও জোরদার হলো।
একদিকে আজকে রাতে দুটো হৃদয়ের মিলন হয়েছে।
যেখানে দেহের চাওয়া পাওয়ার থেকে ভালোবাসার দাবি ছিলো বেশি
আর অন্য দিকে দুটি দেহের মিলন হয়েছে। যেখানে একজনের হৃদয়ের থেকে অন্য জনের হৃদয়ের ব্যবধান হাজার মাইল দূরে।
যেখানে আদৌও ভালোবাসা নামক কোন ফুল ফুটবে কিনা তা কারো জানা নেয়।
#চলবে

পবিত্র ভালবাসার জোরTempat cerita menjadi hidup. Temukan sekarang