ক্লাস শেষে ব্যাগ গুছাচ্ছে ঊষা। কিন্তু তারই পাশের বেঞ্চে বসে অধরা গত দিনের নোট তুলছে।
-কিরে অধরা? বাসায় যাবিনা?
-হ্যাঁ যাব।
-তাহলে বসে আছিস কেন? চল।
অধরা চুপচাপ বসে লিখে যাচ্ছে ঊষার কথার উত্তর না দিয়ে। ঊষা অধরার দিকে চেয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভাবলো ওকে কিছু বলে লাভ হবেনা। কারণ ঊষা জানে অধরা কোন কিছুতে মনোযোগ দিলে তাকে আর সরানো যাবেনা সেখান থেকে। এক মনে তার কাজ করতে থাকবে। অধরা লিখছে মানে আজ তার লিখা সে শেষ করেই বাড়ি যাবে।
অধরা তার এই প্রতিভাটি পেয়েছে তার বাবা মিস্টার ফারদিন চৌধুরীর কাছ থেকে। মিস্টার ফারদিন একজন ঔপন্যাসিক। তাঁর নিজের একটা প্রকাশনা আছে। মাঝে মাঝে বাচ্চাদের জন্য মজার মজার কবিতা আর কমিক বুক বানায়। গল্প ও উপন্যাস লেখার সময় কেউ তার মনোযোগ সরাতে পারেনা। যখন তিনি লেখা লেখি করেন তখন তার স্টাডি রুমের দরজার মধ্যে "Don't Disturb" লিখা ছোট সাইন বোর্ড ঝুলানো থাকে। এমনিতে মিস্টার ফারদিন খুবই হাসিখুশি মানুষ। কিন্তু লেখার সময় কেউ তাকে ডিস্টার্ব করলে তার এমন রাগ উঠে যে আকাশ পাতাল এক করে দেয়।
এসব ভেবে ঊষা কিছুক্ষণ অধরার পাশে চুপচাপ বসে ছিল। কিন্তু শুধু তাই নয়, অধরার হাতের লেখা খুবই দ্রুত। ঠিকই দুই মিনিটের মধ্যে নোট তুলে নিল সবটা। ঊষা হলো অধরার বেস্ট ফ্রেন্ড। দুনিয়াতে অধরার মন আর কেউ বুঝুক বা না বুঝুক ঊষা ঠিকই বুঝবে। ক্লাস সিক্স থেকে তাদের বন্ধুত্বের যাত্রারম্ভ হয়। সেই থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত তাদের কতবার যে ঝগড়া হলো আর কতবার মিল হলো তার কোনো হিসাব নেই। তাদের বন্ধুত্ব এতটাই গভীর যে তারা একই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গেলো। এখন তারা অনার্স থার্ড ইয়ারে জিওগ্রাফী সাবজেক্ট নিয়ে পড়ছে। ঊষা একটু দুর্বল হলেও অধরা একেবারে পারফেক্ট ম্যাচ এই সাবজেক্টটার জন্য।
সব গুছিয়ে নিয়ে তারা ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলো। আজ তাদের একটাই ক্লাস ছিল তাই ক্লাস থেকে বের হয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিল আজ ক্যাম্পাস এর ক্যান্টিনে বসে ঊষার বড় বোন ঊর্মি আপুর বিয়ের অনুষ্ঠানের প্ল্যানিং করবে কিছুক্ষণ। ততক্ষণে অধরা ও ঊষা তাদের মা কে ফোনে জানিয়ে দিলো যে ওরা ক্যান্টিনে আছে। ক্যান্টিনে বসার আগে একটা চকোলেট মিল্ক নিয়ে বসলো ওরা দুজন। অধরার খুবই প্রিয় একটা জিনিস। এতটাই প্রিয় যে, কখনো যদি এমন হয় যে তার মাথা কোনভাবেই কাজ করছেনা অথবা খুবই হাইপার হয়ে আছে একটা চকলেট মিল্ক দিলেই যথেষ্ট। এক সিপ নিলেই তার মাথা ঠান্ডা হয়ে যায়। অতঃপর সে মিল্কটা টেবিলে রেখে ঊষার সাথে কথা বলছিল। কিছু কথার পর তারা সিদ্ধান্ত নিল যে উর্মি আপুর বিয়েতে তারা দুজন একই শাড়ি পড়বে। কিন্তু একটা জায়গায় গিয়ে তারা আটকে গেল। তা হলো, ঊষার পছন্দের রঙ হলুদ কিন্তু অধরার পছন্দের রঙ গাঢ় নীল। একই শাড়ি যদি পড়তে হয় তবে তাদের যেকোনো একজনকে স্যাক্রিফাইস করতে হবে। কিন্তু দুইজনই এই দুটি রঙের জন্য পাগল। এটা নিয়ে কি করবে সেই ভাবনায় বিভোর হয়ে ছিল দুজন। ঠিক তখনি অন্তু কোথা দৌড়ে এসে ওদের টেবিলে রাখা অধরার ঠান্ডা চকোলেট মিল্কটা পুরোটুকু খেয়ে কয়েক সেকেন্ডে শেষ করে ফেললো আর এমন ভাবে হাপাচ্ছে যেন কুকুরের দৌড়ানি খেয়ে এলো মাত্র। হাতে ছিল একটা লাঞ্চ বক্স। তারপরই আবার দৌড় দিয়ে চলে গেল। এই কান্ড দেখে গোটা এক মিনিট হা হয়ে ছিল অধরার মুখ। বান্ধবীর এই অবস্থা দেখে ঊষা হাত বাড়িয়ে অধরার চোয়াল বন্ধ করে দিয়ে বলল, "মুখ বন্ধ করবি নাকি মশা মাছি খাওয়ার ইচ্ছা?"
YOU ARE READING
বুঝিনি ভালোবেসে ফেলবো
Romance-আম্মু? এই লোকটার কি নিজের ঘর নেই? যখন তখন এখানে এসে পড়ে। আর হ্যাঁ লোকটার কি হাত নেই? তোমার কেনো খাইয়ে দিতে হবে? আমাকে তো চার মাসে একবারো খাইয়ে দাওনা। আর মা, তুমি জানো ও আজকে আমার চকোলেট মিল্ক খেয়ে ফেলেছে। অন্তু ছেলেটা দুষ্টু। অনেক ফাজলামো করে। তা...