পর্ব-১

115 6 0
                                    

" আমি যদি এখন তোরে দুতলার ছাদ থেকে ছুঁড়ে নিচে ফেলে দেই, পরে একবার ' সরি ' বলে দেই, তাহলে চলবে?" লাল টকটকে চোখদুটো আমার দিকে স্থির রেখে একদম শান্ত গলায় কথাটা বললো হবি ভাই। শান্ত গলায় বললে কি হবে, এটা যে ঝড়ের পূর্বাভাস, সেটা আমি ভালোই বুঝতে পারছি।
- " সরি হবি ভাই, আমি তো ভুলে..." কথাটা শেষ করতে পারলাম না আর। আমার হাত থেকে পানির পাইপটা টান দিয়ে নিয়ে হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে উনার ভেজা বুকে এনে ফেললেন আমায়। উনার শক্ত আর নেশা ধরানো ঘ্রাণযুক্ত বুকে মুখ ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি। উনি হয়তো ভেবেছিলেন আমি ছুটে যাওয়ার জন্য মোচড়ামুচড়ি করবো, কিন্তু সেটা তো আমি কখনোই করবোনা। আমি তো সেই ছোটবেলা থেকেই এই মানুষটার বুকে মাথা ঠেকিয়ে বাঁচতে চেয়েছি, কিন্তু উনি তো! মাথাটা নিচু করে নাক টেনে টেনে উনার সেই ঘ্রাণে মাতাল হচ্ছি, এমন সময় পিঠে ভেজা কিছু অনুভব করলাম। হুঁশ ফিরলো তখন, যখন মাথা থেকে শুরু করে পা অব্দি ভিজে চুবচুবে হয়ে গেছি। হবি ভাই একহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে অন্যহাতে পাইপ দিয়ে ভেজাচ্ছে। একদম পুরোপুরি ভিজিয়ে দেয়ার পর উনার বাহুডোর থেকে মুক্ত হলাম আমি। সারা শরীরে ভেজা কাপড় লেপ্টে আছে আমার। লজ্জায় কুঁকড়ে একপাশে দাঁড়িয়ে আছি, এমন সময় হবি ভাই আবার আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। মাথাটা আমার বরাবর এনে ' সরি ' বলে একটা হাসি দিয়ে গটগট করে হাঁটা ধরলেন। ছাদের দরজা পর্যন্ত গিয়ে পেছনে ফিরে শুধু একটি কথাই বললেন,
- " হিসাব বরাবর। "

আমি অ্যালোহা সারসালমায। প্রতিদিন বিকালে ছাদের গাছগুলোতে পানি দেয়া একমাত্র আমার কাজ। এত বড় পরিবারে আমি বাদে একাজ আর কেউই করতে চায় না। আজ একটু দেরি হয়ে গেছে ছাদে আসতে। সূর্য প্রায় ডুবি ডুবি করছে, আর আমি গাছে পানি দিচ্ছি। হঠাৎই হবি ভাই পেছন থেকে এসে বললো,
- " বাড়ি আসার পর থেকে তোরে শুধু কামলি রূপেই দেখেছি। কাজের খালাদের বাদ দিয়ে দে না! তোকেই মাসে মাসে টাকা দিয়ে দিতে বলবো" কথাটা যে উনি আমাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করেই বলেছে, সেটাতো বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু আমার যে সেদিকে কোন ভ্রূক্ষেপই নেই! আমি তো সন্ধ্যার লাল আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা একজন সুদর্শন পুরুষকে দেখায় ব্যস্ত! আজ উনি একটা কালো ট্রাউজার আর সাদা ফুলহাতা টিশার্ট পরেছেন। এত সাধারণ পোশাকেও কাউকে এতোটা অসাধারণ লাগে কি করে! হা করে দেখতে দেখতে কখন যে পাইপটা উনার দিকে তাক হয়ে গেছে নিজেও জানিনা। উনার শরীর চপচপে ভিজে যাওয়ার পর যখন " অ্যালোহা" বলে একটা হুংকার দিলেন, তখন আমার ঘোর কাটলো। তাড়াতাড়ি উনার কাছে গিয়ে একটানা প্রায় ৫/৬ বার ' সরি' বলে থামলাম। কিন্তু হবি ভাই তো হবি ভাই -ই। এসব ' সরি - টরি ' বলে জীবনে পাড় পেয়েছি উনার কাছে! এরপরই এই ঘটনা।পড়াশোনা শেষ করে প্রায় দশ বছর পর গত পরশু দেশে ফিরেছেন হবি ভাই। সম্পর্কে আমার বড় চাচার ছেলে উনি। ছোটকাল থেকেই উনি অদ্ভুত, আর আমার সাথে একটু বেশিই অদ্ভুত। সবমিলিয়ে আমরা ১৪জন ভাই - বোন,যদিও এ পরিবারে ভাই বোনের হিসাব আলাদা। সবার সাথে মোটামুটি ঠিকঠাক আচরণ করলেও আমাকে দেখলেই উনার মাথায় যেন কেউ হাতুরি পিটায়। সারাক্ষণই আমার দিকে ষাঁড়ের মতো তেড়ে আসার প্ল্যান চলে এ লোকের মাথায়। ভেবেছিলাম বড় হয়ে দেশে ফিরেছে, এবার হয়তো একটু ঠিক হবে। আমার সে আশার গুড়ে বালি ঢেলে প্রথমদিনই আমাকে একগাদা কথা শুনিয়ে দিয়েছেন উনি। যাই হোক, সন্ধ্যার আগে নিচে না নামলে আবার ঐ গ্যাংপার্টি ছাদে এসে আমার গাছগুলোর বারোটা বাজাবে।
নিচে এসে ড্রয়িংরুমে ঢুকতেই যা দেখলাম,তাতে আমার মাথাটা চড়কির মতো ঘুরতে শুরু করলো। জিমিন আর লিয়া, মানে মেজো চাচুর ছেলে আর সেজো চাচুর মেয়ে- দুইটা চুল ধরে টানাটানি করছে। বোঝা যাচ্ছে কোন বিষয় নিয়ে চরমভাবে ঝগড়া লেগেছে। এমন প্রায়ই লাগে এ দুইটা। তাই সার্কাস দেখার মতো আগ্রহ নিয়ে এককোণায় চুপ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি। চুল টানাটানির এক পর্যায়ে সোফা থেকে মাটিতে পড়ে গেলো লিয়া আর জিমিন। এরপর জিমিন যেটা করলো, তাতে লিয়া তো পরে, আমার নিজেরই চোখ কপালে উঠে গেলো। লিয়া জিমিনের পেটের উপর বসে বসে ওর চুল টেনে প্রায় গোড়া থেকে টেনে নিয়ে আসছে, এমন সময় জিমিন একটানে লিয়াকে ওর ওপর এনে ফেলে টুক করে একটা চুমু দিয়ে বসলো। জিমিন যে লিয়াকে পছন্দ করে, সেটা ছোটকাল থেকেই আমি কিছুটা বুঝতে পারতাম, কিন্তু এই লিয়া হলো পাগলা জাতের। সারাদিন লাফালাফি আর সকল ধরনের আজব গজবমার্কা কাজ করা ওর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু আজ লিয়াকে বেশ অদ্ভুতভাবে আবিষ্কার করলাম। জিমিন চুমু দেয়ার সাথে সাথেই লিয়া একলাফে উঠে গেলো। বোঝাই যাচ্ছে বেচারি লজ্জা পেয়েছে। এ জিমিনও তো কম না! আমাদেরকে জানালো পর্যন্ত না, যে ও লিয়াকে ভালোবাসে! লিয়া উঠে দুলতে দুলতে রুমের দিকে যেতে লাগলো, হঠাৎ কি যেন মনে করে সেখানেই হুট করে দাঁড়িয়ে গেলো। আর জিমিন্না বান্দর তখনো ফ্লোরে শুয়ে শুয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। আমি গিয়ে ওর কানটা টেনে ধরে দু চারটা মাইর দিবো ভাবছি, তার আগেই লিয়া দৌঁড়ে এসে জিমিনকে উল্টা একটা চুমু দিয়ে দিলো। এবার আমি সেখানেই মাটিতে বসে পড়লাম। হায় খোদা! আর কি কি দেখার বাকী আছে আমার! নিজের ঘরে এতো এতো কাহিনী ঘটে যায়, এদিকে আমার কোন খবরই নেই। লিয়া চলে যেতেই জিমিন মুখটায় ক্যাবলা ভাব নিয়ে পা দুইটা বাচ্চাদের মতো ছড়িয়ে বসে রইলো। আমি আবার উঠে কোনরকমে নিজের রুমে গিয়ে ঢুকলাম।

secret admirer (Complete) Where stories live. Discover now