পর্ব-৬

25 3 0
                                    

সাথে সাথে ড্রয়িংরুমের লাইটটা জ্বলে উঠলো, আর যা দেখলাম,তাতে আমি তো দূর,হবি ভাইয়ের মুখ পর্যন্ত হা হয়ে গেলো। দেখলাম- ড্রয়িংরুমের ঠিক মাঝ বরাবর মেঝেতে পদ্মাসন ভঙ্গিতে গেরুয়া রঙের একটা কাপড় শরীরে পেঁচিয়ে বসে আছে জিন ভাইয়া। তার চোখ বনধ, ঠোঁটদুটো হালকা নড়ছে। বোঝাই যাচ্ছে বিরবির করে কিছু পড়ছে। কিন্তু এ সময়, মানে এতোরাতে এসব কি করছে জিন ভাইয়া! আরেক কথা, জিন ভাইয়া তো বসে আছে, তাহলে লাইটা জ্বালালো কে! মাঝরাতে জিন ভাইয়ার এসব অদ্ভুত কাণ্ড দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম আমি। হবি ভাই সেটা বুঝে আমার কাছে এলেন। শক্ত করে আমার হাতটা ধরে ড্রয়িংরুমের দিকে আগাতে লাগলেন। হঠাৎ করেই আরেক কোণায় চোখ পড়তেই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। এদিকে জিন ভাইয়া বসে বসে ধ্যান করছে, আর ঐদিকে জিমিন আর লিয়া সোফায় বসে গলাগলি করে মুভি দেখছে আর হেসে কুটকুটি হচ্ছে। জিন ভাইয়ার এসব কাজ কি ওদের চোখে পড়েনি, নাকি পাত্তা দেয়নি সেটা আমার ঠিক মাথায় ধরলোনা! আস্তে করে জিন ভাইয়ার সামনে গিয়ে বসলাম। ওর শরীর থেকে ভয়ানক রকমের দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। গন্ধটা চেনা চেনা, কিন্তু কীসের, সেটা ধরতে পারছিনা। এবার আমি জিন ভাইয়াকে ডাকতে লাগলাম। আমার কথা যেন ওর কানেই ঢুকলোনা। ও সেই আগের মতোই চোখ বনধ করে বিরবির করছে। এবার হবি ভাই এসে জিন ভাইয়াকে একটানে বসা থেকে দাঁড় করিয়ে দিলেন। এবার জিন ভাইয়া বললো,
- "  আমার ধ্যানে এভাবে বিঘ্ন ঘটালে কেন বৎস?" সাধু বাবাদের মতো ঢুলুঢুলু লাল চোখ, শান্ত কণ্ঠে ধীরে ধীরে কথাটা বললো হবি ভাইকে উদ্দেশ্য করে। কী হয়েছে এই ছেলের! এমন সাধু স্টাইলে কথা বলছে কেন! হবি ভাই ফুস করে একটা শ্বাস ছেড়ে পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে বললেন,
- " তুই কি সোজা সোজা বলবি এসব কী করছিস? নাকি দু'চারটা থাপ্পর খেয়ে পরে বলবি?" হবি ভাইয়ের এমন ঠান্ডা ধমকে জিন ভাইয়া এবার নিজের কাঁদুনে চরিত্রে ফিরে এলো। মুখটায় একটা অসহায় ভাব এনে বললো,
- " দুদিন পর বিয়ে আমার। কিন্তু দেখ, আজও আমি একটা না একটা ফ্যাসাদে পড়েই চলেছি, পড়েই চলেছি। পরে রাতে সখিনা আন্টি আমাকে বলেছে, আমার ওপর দিয়ে নাকি ফাড়া যাচ্ছে। আর সেটা কাটাতে হলে আমার একদিলে ধ্যান করতে হবে। পরে সখিনা আন্টির নির্দেশে শরীরে ঘি আর চন্দন মেখে গেরুয়া পোশাকে ধ্যান করছিলাম। তুই এসে দিলি তো সব নষ্ট করে!" আফসোস করতে করতে কথাটা বললো জিন ভাইয়া। ওর কথা শুনে হবি ভাই একটা শব্দও করলেন না। সোজা গটগট করে ওপরে চলে গেলেন। কিন্তু লাইটটা জ্বালালো কে! জিমিনরা তো এখনও মুভিই  দেখছে। এবার আমি আশেপাশে   খোঁজা শুরু করলাম। কিন্তু কাউকে না পেয়ে হতাশ হয়ে সিড়ির দিকে যাচ্ছি, এমন সময় আরেক কোণা থেকে বের হয়ে এলো সুগা। সুগা একা না, ওর কাঁধে ইনহাও ঝুলে আছে। হচ্ছেটা কি এসব! রাতে কি কেউই ঘুমায়নি তাহলে! আমি গিয়ে সুগাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
- " এতোরাতে এভাবে কুলির মতো ইনহাকে পিঠে ঝুলিয়ে ঘুরছো কেন?" 
- " আরে ব্রো,তেমন কিছুনা। সুগা একটু ভুল করেছিলো,তাই শাস্তি দিচ্ছি। " সুগার গলাটা আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাসতে হাসতে কথাটা বললো ইনহা। এদিকে বেচারা সুগার লাল টকটকে গাল দেখে বুঝতে পারলাম, আজও ওর গালকে রিমান্ডে দিয়েছে এই ইনহা। এবার আমি ইনহাকে জিজ্ঞেস করলাম,
- " কী ভুল করেছে ও?"
- " আর বলিসনা! তুই তো জানিসই মেকাপ করাতে আমি কত ভালোবাসি। একটার দিকে হঠাৎ ইচ্ছে হলো মেকাপ করাতে। অন্যদের ডাকলে তো উঠবেনা।তাই ওকে বললাম, তুমি একটু বস, আমি চট করে তোমাকে একটু সাজিয়ে দেই। গালে ফাউন্ডেশন লাগানোর পর যেইনা ওর ঠোঁটে খয়েরী লিপস্টিকটা লাগাতে গেলাম, তখনই শুরু করলো ঘ্যানঘ্যান। ও নাকি লিপস্টিক দিবেনা। তাই শাস্তিস্বরূপ পুরো বাড়ি ৩চক্কর দিবে আমাকে কাঁধে নিয়ে।" আমি জানি, এখন কেউই সুগাকে এ শাস্তি থেকে মুক্তি দিতে পারবেনা। তাই চুপচাপ আবার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।

secret admirer (Complete) Where stories live. Discover now