পর্ব-২

28 4 0
                                    


আর ঢোকার সাথে সাথে যা দেখলাম, তাতে আমার মনে হচ্ছিলো আমি এই দুনিয়াতে আছি তো? দেখলাম- আমার রুমে খাটের নিচে উঁকি দিয়ে গরুর মতো এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে কি যেন হন্যে হয়ে খুঁজছে বাবা। হঠাৎ বাবাকে এমন অদ্ভুতভাবে কিছু খুঁজতে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
- " খাটের নিচে এভাবে কি খুঁজছো বাবা?" আমার কথায় বাবা একটা শুকনো ঢোক গিলে বললো,
- " এ কথা বলার মতো নয়রে মা! বললে আমার মান সম্মান যা একটু বেঁচে আছে, তাও আর থাকবেনা রে!" বাবার এই চুপসে যাওয়া চেহারাটা দেখে খুব মায়া হলো।
- " কি দরকার সেটা বলো আমাকে বাবা। দেখি আমি সাহায্য করতে পারি কিনা!" আমার কথায় বাবা যেন একটু ভরসা পেলো। নিচ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চেহারাটা অসহায়ের মতো করে বললো,
- " তোর মা আজ বিকেলে নামজুনকে বকা দিচ্ছিলো। তোর মায়ের বকার ধরন তো জানিসই। সে বকায় কথার চেয়ে গালি বেশি। নামুকে তোর মা ' শয়তানের বাচ্চা ' বলে গালি দিলো।বিষয়টা আমার ঠিক লাগলোনা। একটু পর আমার পিপাসা পেলো, তাই শয়তানকে ডেকে পানি দিতে বললাম। " বাবাকে মাঝকথায় থামিয়ে দিয়ে অধৈর্য্য জিজ্ঞেস করলাম,
- " কি বললে! শয়তানকে পানি দিতে বললে! শয়তান আসলো কোত্থেকে? " বাবা বললো,
- " আগে সবটা শুন না! বিকেলে তোর মা-ই তো নামুকে শয়তানের বাচ্চা বললো, তাই আমার মনে হলো তোর মা হয়তো নিজেকে শয়তান ভাবে। তাই আমিও ঐ নামেই ডাকছিলাম। তারপর তোর মা পানির গ্লাসের বদলে ঝাড়ু নিয়ে আমাকে তাড়া করেছে। নামুর বদৌলতে কোনরকমে বেঁচে ফিরেছি। লুকানোর সময় বলেছে, রাতে ঘুমাতে ঘরে আসলে আমাকে নাকি বেধে পিটাবে। তারপর থেকেই আমি তোর মায়ের থেকে দূরে দূরে। জিন এর কাহিনীর সময় সবাই আছে এই ভরসায় একবার সামনে গিয়ে বসেছি। এখন ভয় করছে রুমে যেতে। তাই তোর খাটের নিচে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করছিলাম।" বলেই বাবা চেহারাটা অসহায়ের মতো করে ফেললো। আহারে বেচারা! মায়ের ভয়ে রুম ত্যাগ করতে হচ্ছে। বাবাকে বললাম,
- " ঠিক আছে। আজ রাতে তুমি আমার রুমে ঘুমাও। আমি গিয়ে  ইনহার সাথে ঘুমাবো। " বলে চুপচাপ চলে এলাম। হায়রে কপাল! কি এক আজব পরিবারে বসবাস করি আমি!
আস্তে করে ইনহার রুমের দিকে গেলাম। উঁকি দিয়ে দেখলাম রুম অন্ধকার, মানে ও ঘুমিয়ে পড়েছে। আস্তে করে ওর পাশে শুয়ে পড়লাম।
ঘুমের ক্ষেত্রে আমার অনেক বাহানা আছে। একে তো নিজের বিছানা ছাড়া ঘুম হয়না, তার ওপর ইনহার ঘুমের স্টাইল। আল্লাহ বাঁচাও! আমারে কোলবালিশের মতো পেঁচিয়ে ধরে ফেলছিলো। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিলো, আমি দম আটকে মারা যাবো। ওর কোলবালিশটা যদি কথা বলতে পারতো, কোলবালিশের অভিশাপেই বোধয় ও নরকবাসী হয়ে যেতো। কোনরকমে ওর হাত পা ছাড়িয়ে রুম থেকে একলাফে বের হয়েছি। এখন মায়ের রুমে গিয়ে ঘুমাতে গেলে মা বুঝে ফেলবে যে বাবা আমার রুমে লুকিয়েছে। তখন বাবার সাথে সাথে সবার ঘুম ভাঙবে, আর মায়ের তাণ্ডবের কথা নাই বা বললাম। সবকিছু ভেবে মনে হলো ছাদে যাই, সেখানে গিয়ে একটু বাতাস খেয়ে আসলে শান্তি লাগবে। যেই ভাবা সেই কাজ। আস্তে আস্তে গিয়ে ছাদে উঠলাম। দরজাটা খুলতেই একটা দমকা হাওয়া এসে লাগলো শরীরে, সাথে সাথে মনপ্রাণ একদম জুড়িয়ে গেলো। রেলিংয়ের ওপরে পা ঝুলিয়ে বসে আছি, এমন সময় মনে হলো কেউ পেছন থেকে আমার মুখটা একহাতে চেপে ধরে কোলে তুলে নিয়েছে। হা পা ছোঁড়ার চেষ্টা করছি, এমন সময় নাকে একটা ঘ্রাণ এলো, আর এ ঘ্রাণ আমার চেনা। হবি ভাই! এ লোক আবার এখানে কেন এসেছে! আর আমাকে এভাবে কোলে নেয়ারই বা কি মানে! এমনিতেই উনার কথা ভাবতে ভাবতে পাগলপ্রায়, তার ওপর একয়দিন যাবৎ উনার এই হুটহাট কাছে আসাটা আমার জন্য যে কী পরিমাণ কষ্টকর, সেটা কি উনি বুঝেন! কোন প্রকার জোড়াজুড়ি না করে শক্ত করে তার ঘাড় জড়িয়ে ধরলাম। আচ্ছা, আমি যে উনাকে এতো ভালোবাসি, সেটা কি উনি বুঝতে পারেন না? নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করেন! আমাকে নিয়ে একদম ছাদের মাঝখানটায় দাঁড় করালো। দাঁড় করালো বললে ভুল হবে, আছাড় মারার সাধারণ ভার্সনে ছুঁড়ে ফেললো। বুঝতে পারলাম না যে এতো রাগের কারণটা কি! চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি, এমন সময় হবি ভাই আমার হাত দুটো টেনে আমাকে একদম তার সামনে নিয়ে এলেন। পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চির মানুষটার সামনে আমাকে একদম লিলিপুটের মতো লাগছে। উনার শরীর থেকে ভুরভুর করে কড়া পুরুষালি মাতাল করা ঘ্রাণ বেরোচ্ছে, আর আমি সেই ঘ্রাণের নেশায় বুদ হচ্ছি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। পরনে একটা কালো শর্টস, আর একটা পাতলা সাদা টিশার্ট। এই ঢোলাঢালা পোশাকেও উনার শক্ত শরীরটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। খেয়াল করে দেখলাম, বড় হওয়ার পর উনি অনেক বেশিই সুন্দর হয়ে গেছেন। হঠাৎ করে হবি ভাই বললেন,
- " মরতে চাস তো সেটা সোজা বলে দে না!"
- " কে বললো আমি মরতে চাই?" মুখটা খিঁচে পাল্টা প্রশ্ন করলাম হবি ভাইকে। হবি ভাই এবার আমাকে একটানে আবার রেলিংয়ের কাছে নিয়ে এলেন। রেলিংয়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি,আর আমার দিকে ঝুঁকে দুপাশে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হবি ভাই। ঢোলা টিশার্টের বড় গলাটা দিয়ে উনার ফর্সা বুক দেখা যাচ্ছে। আমি অবাক হয়ে দেখছি আর ভাবছি, একজন মানুষ এতোটা পারফেক্ট হয় কি করে! উনি মুখটা আরেকটু এগিয়ে এনে বললেন,
-" আজকের পর আর কোনদিন রেলিংয়ের আশেপাশে দেখেছি তো এক ধাক্কা দেবো, সোজা গড়িয়ে নিচে পড়বি। মনে থাকে যেন।" উনার এসব হুমকি দামকির দিকে আমার খেয়াল আছে নাকি! আমি তো উনার সৌন্দর্য খোঁজায় ব্যস্ত। নিজের অজান্তেই মুখ ফসকে বলে ফেললাম,
- " আপনার পারফিউমের ঘ্রাণে আমার মাতাল মাতাল লাগে হবি ভাই। " বলার পরে সাথে সাথেই হুঁশ ফিরলো, জিব কামড়ে হবি ভাইয়ের দিকে তাকাতেই বললো,
- " অ্যালোহা তুই এখন, মানে এক্ষুনি আমার সামনে থেকে যা। নাহলে তোরে আমি এমন থাপ্পর দেবো, তখন কানে শোনার মতো অবস্থায় থাকবিনা। " আমিও কোন কথা না বলে একদৌঁড়ে আবার নিচে নেমে এলাম। এমন কেন করে এই লোকটা! কেন নিজেই আমার এতো কাছে আসে, আর কেনই বা আমাকে এভাবে বকাঝকা দেয়! মন খারাপ করে ড্রয়িংরুমের সোফায় এসে শুয়ে পড়লাম। সকালে সবাই উঠার আগে নিজের রুমে চলে যাবো।

secret admirer (Complete) Where stories live. Discover now