পর্ব - ৩

22 2 0
                                    

এই মানুষটা এখানে! এবার কি হবে! দেখলাম- হবি ভাইয়ের খালা আর তার চিপকু খালাতো বোন হেইরান এসেছে এ বাড়িতে। সম্ভবত জিন ভাইয়ার বিয়ের কথা শুনে এসে পড়েছে। এই মহিলা আর তার মেয়ে দুইজনই ভয়ানক, আর সেটা পিচ্চিকালের একটা ঘটনার পর থেকেই বুঝে গিয়েছিলাম। আমার মা, চাচীরাও উনাকে নিজের গুরু হিসাবে মানে উনাকে।এদিকে আমাদের ১৪জনের একজনও উনাদের সহ্য করতে পারিনা। কাহিনীটা তাহলে খুলেই বলি-
আমরা সবাই মোটামুটি ছোটই ছিলাম তখন। জাংকুকের খৎনা করিয়েছিলো গ্রীষ্মকালে, আম- কাঁঠালের ছুটিতেই সেরে ফেলেছিলো কাজটা। আর এ অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়া হয়েছিলো এই হবি ভাইয়ের খালার পরিবারকে। বাড়িতে মেহমান আসবে, আবার সাথে আমাদের বয়সী একটা মেয়েও- আমরা সবাই খুব খুশি খুশি ছিলাম। কিন্তু আসার পর যা যা ঘটালো এই মহিলা, এরপর থেকে উনার নাম শুনলেই সবাই তব্দা মেরে যাই। যাই হোক, আসল কাহিনীতে আসা যাক। অনুষ্ঠানে গ্রামের মানুষকেও দাওয়াত দেয়া হয়েছিলো। এতো মানুষের খাবার,তাই সবাই মিলে ঠিক করেছিলো বাবুর্চি এনে রান্না করাবে। একজন বাবুর্চির সাথে কথাও হয়ে গিয়েছিলো। অনুষ্ঠানের দিন সকালে যখন বাবুর্চি এলো, তখন শুরু হলো আসল কাহিনী। হবি ভাইয়ের খালা, মানে সখিনা আন্টি গিয়ে বাবুর্চিকে ঝাড়তে শুরু করলো। পোলাওয়ে পাঁচফোড়ন না দেয়ায় বাবুর্চিকে ইচ্ছামতো কতক্ষণ বকলো। বেচারা বাবুর্চি একটা কথাই বলেছিলো,
- " দেখেন আফা, আমি গত ১৫ বছর ধইরা এই কাজ করতাছি, কিন্তু কোনকালে কোনো মানুষরে পোলাওয়ে পাঁচফোড়ন দিতে দেখি নাই। আপনে কোন জায়গা থেইকা যে এই কথা কইতাছেন আমি বুঝতাছি না।" এই এক কথাই বাবুর্চির জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। ঐদিন বাবুর্চির লম্বা লম্বা খুন্তি দিয়ে কি মাইরই না দিয়েছিলো! বেচারা ভয়ে, আতঙ্কে পুকুরের পানিতে নেমে ডুব দিয়েছিলো নিজের জান বাঁচাতে। সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে পিটিয়েছিলো বাবুর্চিকে। মা, চাচীরা মিলে পরে কোনরকমে সখিনা আন্টিকে শান্ত করেছিলো।পরে বাবা, চাচারা বাবুর্চির চিকিৎসার খরচসহ আরো কিছু টাকা দিয়ে ঝামেলা চাপা দিয়েছিলো। এখন রান্না কে করবে? সখিনা আন্টি তখন দেবদূতদের মতো এসে বললো,
- " আরে ঐ ফইন্নি বাবুর্চি রানতে জানে নাকি! আজকে সব রান্না আমি নিজেই করুম। একবার খালি আমার রান্না করা খাবার খাও, সারাজীবন আমারে মনে রাখবা তোমরা। " সত্যিই উনাকে সারাজীবন মনে রাখার মতো কাজ করে গিয়েছিলেন। উনার রান্না করা খাবার খেয়ে শুধু আমরা না, পুরো গ্রামের যতজনকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিলো, সবাই টয়লেটবাসী হয়ে গিয়েছিলো। আশপাশের গ্রামের লোকজন ভেবেছিলো এ গ্রামে হয়তো কোন মহামারী এসেছে। আর সবার চিকিৎসার জন্য কত টাকা যে বাবা, চাচাদের দিতে হয়েছে, সে হিসাব নেই। এ ছিলো অনুষ্ঠানের দিনের কাহিনী। পরে ২দিন পর ঘটলো আরেক ঘটনা-  জাংকুক তো বিছানায় শোয়া, কোনপ্রকার হাঁটাচলাও করতে পারছিলোনা। এদিকে ঐ সময় আমাদের টয়লেট ছিলো বাইরে, সাধারণত  গ্রামে যেমনটা হয় আরকি।  সখিনা আন্টির ম্যাজিক্যাল খাবার খেয়ে সারাদিন টয়লেটে দৌঁড়াদৌঁড়ি করে রাতে পেট একটু শান্তি হলেই সবাই মরার মতো পড়ে ঘুমাতো। তো ঐদিন রাতে জাংকুক টয়লেটে যাবে, সবাইকে ডাকার পরেও যখন কেউ ঘুম থেকে উঠলোনা, তখন বেচারা একা একাই ঘর থেকে বের হলো। রাত তখন প্রায় ৩ঃ৩০টা। টয়লেটের পাশেই অনেক পুরনো একটা আমগাছ ছিলো আমাদের। জাংকুক যখন লুঙ্গি ধরে ধরে কোনরকমে টয়লেটের কাছে পৌঁছাতেই দেখলো- আম গাছটার পেছনে একটা সাদা কাপড় পরা কেউ দাঁড়িয়ে আছে। লম্বা লম্বা চুলও দেখা যাচ্ছে। মানুষটার চেহারা দেখা যাচ্ছেনা। জাংকুকটা ছোটকালে প্রচুর দুষ্ট ছিলো। ও ১০হাত বড় কলিজা নিয়ে গাছের পেছনে থাকা জিনিসটাকে দেখতে গেলো। যাওয়ার পরই দিলো এক চিৎকার, আর সেই চিৎকার শুনে সারা বাড়ির মানুষ ঘুম থেকে উঠে টয়লেটের সামনে হাজির হয়ে গিয়েছিলো। সেখানে গিয়ে দেখলাম, একজন মহিলা, সাদা শাড়ি পরা,লম্বা চুলগুলো থেকে কী যেন টপটপ করে বেয়ে পড়ছে, মুখটা পুরো সাদা। ঐ চেহারা দেখার পর পুরো বাড়ির মহিলারা একসাথে চিৎকার দিয়ে উঠলো। বাবা, চাচারা দা, বটি, আগুন যা যা দরকার ভূত তাড়ানোর জন্য, সব নিয়ে এলো। এমন সময় ভূতটা বলে উঠলো,
- " কিগো! তোমরা হাতে অস্ত্র নিয়া ঘুরতাসো কেন? বঙ্গবন্ধুর মতো আবার কেউ যুদ্ধ ঘোষণা করছে নি?" সবার হাত থেকে দা, বটি পরে গেলো। সখিনা আপা! সবাই সমস্বরে বলে উঠলো। এবার সখিনা আন্টি বললেন,
- " চিনতে পারোনাই তো! আমি জানতাম,চিনতে পারবা না। আমার সৌন্দর্য এতো বাইড়া গেছে!"বলেই লজ্জা লজ্জা হাসি দিলেন। আবার বললেন,
- কালকে সকালে তো আমারে দেখলে তোমরা টাস্কি খাবা। মুখের মধ্যে চালবাটা আর মাথার চুলে রান্নায় যেই ঘি বাইচ্চা গেসিলো, ওগুলা দিসি। সকালে উইঠা দেখবা, ধবধবা চেহারা আর সিল্কি চুল আমার।" বলেই মুখে একটা যুদ্ধজয়ের হাসি দিলেন। উনার এসব কাণ্ড দেখে বাড়িসুদ্ধ সবার কথা বলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। জাংকুক এতোটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলো যে, টানা ৬ মাস রাতে ও টয়লেটে যেত না। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর দেখা যেত ঘরেই সব সেরে ফেলেছে। এদিকে উনার মেয়ে হেইরান তো ২৪ঘন্টা হবি ভাইয়ের ল্যান্জার সাথেই ঝুলে থাকতো।

secret admirer (Complete) Where stories live. Discover now