পর্ব ১৩

14 2 0
                                    


ঠিক মাগরিবের আজানের সময় দরজায় প্রচণ্ড জোরে খটখটানোর আওয়াজ পেয়ে একলাফে ঘুম ভেঙে উঠে বসলাম। এ সময় এভাবে দরজা ধাক্কাচ্ছে কে! একপ্রকার বিরক্ত হয়েই দরজাটা খুলতেই ঝড়ের গতিতে আমার রুমে ঢুকলো লিয়া এবং হানা। ওদের দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোন ভয়ানক কিছু ঘটতে চলেছে অথবা ঘটে গিয়েছে। হানা কিছু একটা বলতে চেয়েও পারছেনা, কোথায় একটা জায়গায় যেন ও বেধে যাচ্ছে। এবার আমি লিয়াকে বললাম,
- " দরজার ওপর মোটামুটি অত্যাচার চালিয়ে রুমে ঢোকার পর এভাবে চুপ করে থাকার মানে কী?" লিয়া একটা বড় দম নিয়ে বললো,
- " একটা সমস্যা হয়েছে অ্যালোহা। "
-" কী হয়েছে সেটা খুলে বলবি?" এবার লিয়া বললো,
- " আজ তোমার আর অরণ্যের এনগেজমেন্ট। ওরা আসছে কিছুক্ষণের মধ্যেই। " লিয়ার মুখে এ কথা শোনার পর আমার মনে হলো, আমি কি ঠিক শুনছি! আমার কপালটাই কী খারাপ! এতো কষ্টের পর কাল সব ঠিক হলো, এর মাঝেই আরেক ফ্যাসাদ! এবার হানা বললো,
- " সখিনা আন্টি আর চাচী বলেছে তোকে তুলে রেডি করাতে।" আমি চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলাম,
- " বিয়ে একমাস পরে হওয়ার কথা হয়েছিলো, তাহলে আজই এসব কেন! কেন হুটহাট এগুলো করছে ওরা?" হানা বললো,
- " অরণ্য নাকি খুব অস্থির হয়ে পড়েছে, তাই আজই এনগেজমেন্ট সেরে রাখতে চায়। এরপর একমাস পর বিয়ে।" আমি এবার আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। চোখ থেকে অনর্গল পানি পড়েই চলেছে। হানা আর লিয়া আমাকে কোনরকমে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছে। বোঝাই যাচ্ছে ওরাও খুব চিন্তিত এ বিষয় নিয়ে। এমন সময় সখিনা আন্টি দরজার সামনে এসে বললেন,
- " কিরে অ্যালোহা! তুই এহনো তৈরু হসনাই? জামাই আইলে ওগো সামনে কি এই কামলির বেশে যাইবি নাকি!" তাড়াতাড়ি চোখের জল মুছে একদৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। আমার হবি ভাইকে আগে সবটা জানানো দরকার। তাড়াতাড়ি উনার রুমে গিয়ে দেখলাম রুম খালি। এবার গেলাম সুগার রুমে,সেখানেও নেই। এভাবে একে একে সবার রুমে খোঁজার পর শেষে যখন ইনহার রুমের দিকে উঁকি দিলাম, তখন যা দেখলাম, তাতে নিজের মাথার ওপর দিয়ে শনি ঝুলছে সেটা বেমালুৃম ভুলে গেলাম। ইনহার রুমে সুগা! এ যাবৎ কোনদিন ওর রুমে সুগাকে ঢুকতে দেখিনি। অবশ্য সুগার রুমে ইনহা যখন তখন ঢুকে ওকে উদোম কেলিয়েছে অনেকবার। দেখলাম- ইনহা বিছানার কিনারে বসে আছে, আর ওর সামনে ফ্লোরে বসে আছে সুগা। ইনহা একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে সুগার দিকে। এই অদ্ভুত এক দৃশ্য দেখে আমি সেখানেই ব্রেক মারলাম। এবার সুগা বললো,
- " দেখো ইনহা,এর আগেও অনেকবার বলেছি। তবে সেগুলো অতটা সিরিয়াস ছিলোনা। কিন্তু আজ আমি সত্যিই সিরিয়াস।" ইনহা বললো,
- " হুম, আমিও সিরিয়াস। এবার বলো কী বলবে।" সুগা একটু ভালো করে বসে নিয়ে বলা শুরু করলো,
- " সেই ছোটকাল থেকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে নিজের মাথা, তোমার মাথা সব খেয়ে দিচ্ছি, তবুও কেন তুমি আমায় ভালোবাসোনা সেটা বলো তো! হ্যাঁ জানি তুমি সুন্দরী, তাই বলে আমাকে পাত্তা দিবেনা! এতোদিন যাবৎ এসব সহ্য করার মতো ছিলো, কিন্তু আমার এখন খুব ভয় হয় ইনহা। একে একে সবার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, যদি তোমারো! কেন আমাকে তুমি পছন্দ করো না সেটা বলবে?  প্লিজ?" সুগার কথা শেষ, কিন্তু ইনহা কিছুই বলছেনা। সুগা ইনহার হাত ধরে একটা ঝাঁকি দিতেই ইনহার ধ্যান ফিরলো। এবার ইনহা একটু হেসে বললো,
- " তোমাকে কি আমি কোনদিন বলেছিলাম নাকি, যে তোমাকে আমি ভালোবাসিনা! " এবার সুগা মোটামুটি ৩২পাটি দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে বললো,
- " তার মানে তুমি ভালোবাসো আমায়?" ইনহা এবার মুখটা শক্ত করে বললো,
- " ঐইহ্! এতো তাড়া কীসের! মাথায় উল্টা পাল্টা কিছু থাকলে ঝেড়ে ফেলে দাও। এখন যেমন আছো, তেমন যদি সারাজীবন থাকতে পারো তাহলে হুম। ভালোবাসি। আর যদি কোনদিন হিরো হওয়ার চেষ্টা করেছো, তাহলে ঐদিনই পিটাইতে পিটাইতে হাসপাতাল পাঠাবো।" সুগা এবার হাসি হাসি মুখ করে বললো,
- " আমি চিরকালই নিষ্পাপ বিল্লি ছিলাম, থাকবো। তবুও মেনে ফেলো, প্লিজ!" ইনহা বললো,
- " ওকে ওকে! মানলাম।" বলতেই সুগা একলাফে উঠে ইনহার কপালে একটা চুমু দিয়ে দিলো। এবার ইনহা ওর সেই ভয়ানক হুমকি দিলো,
- " সবকিছু এই কপাল অব্দিই যেন থাকে! এরবেশি কিছু ভাবলে.." বলেই গলায় পোচ দেয়ার ইশারা করলো সুগা একটু হেসে বলে উঠলো,
- " যথা আজ্ঞা মহারাণী!" ওদের কাহিনী খতম করার পর আমার হুঁশ ফিরলো, আমার কোরবানির সময় যে এগিয়ে আসছে! হবি ভাইকে কোথাও না পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে নামজুন ভাইয়াকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
- " হবি ভাইকে দেখেছো? কই উনি?" নামজুন ভাইয়া বললো,
- " হবি আজ বিকেলেই একটা জরুরী কাজে শহরে গেছে। বলছিলো কাল ফিরবে।" এ কথা শোনার পর সাথে সাথেই আমার মাথায় একটা চক্কর দিলো। এবার কী হবে! আমি যদি নিজ মুখে বলি যে এ বিয়ে করবোনা, তাহলে আজ এনগেজমেন্টের বদলে সোজা বিয়ে দিয়ে দিবে। চিন্তায় মাথা পুরো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণার চোটে ফ্লোরেই বসে পড়লাম। এমন সময় মা এসে বললো,
- " হানা আর লিয়া তোকে কিছু বলেনি?  ওদের পাঠিয়েছিলাম তোকে রেডু করে দিতে, কিন্তু তোর এখনো এই অবস্থা কেন!"বলেই মা আমাকে তুলে ঠেলে ওয়াশরুমে পাঠালেন হাতমুখ ধোয়ার জন্য।

secret admirer (Complete) Where stories live. Discover now