পর্ব ১৮

13 3 0
                                    


নিজে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়তেই হবি ভাই আমার মাথাটা টেনে উনার বুকের ওপর রাখলেন। আজকাল হবি ভাইয়ের আচরণে আমি নিজেই হকচকিয়ে যাই। এ লোক এই আগুন, তো এই পানি!
- " তোকে একটা কথা বলার ছিলো। হলুদের অনুষ্ঠানের দিনই  তোকে বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শুধু শুধু তোর আনন্দটা মাটি হবে বলে সেদিন বলিনি কিছু। শুনে কান্না করিসনা প্লিজ!" বলেই হবি ভাই আমার কপালে একটা চুমু দিলেন। এবার আমার ভেতরে কেমন যেন একটা মোচড় দিয়ে উঠলো। কি বলতে চাইছেন উনি! আমি অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
- " কি হয়েছে হবি ভাই? বলুননা!" এবার হবি ভাই লম্বা একটা শ্বাস ছেড়ে বললেন,
- " তোর যে কোর্সটা একমাস পরে শুরু হওয়ার কথা ছিলো, সেটা আগামী পরশু থেকেই চলবে। কোন একটা কারণে সময় এগিয়ে দেয়া হয়েছে। " এবার আমার মাথায় যেন বাজ পড়লো। হায় খোদা! এত তাড়াতাড়ি! ভেবেছিলাম এই একমাসে হবি ভাইয়ের সাথে একটু সময় কাটাবো, কিন্তু এবার! তাছাড়া ঢাকায় আমার থাকার কোন ব্যবস্থাও তো করা হয়নি! এতো তাড়াতাড়ি হবি ভাইকে ছেড়ে যাবো সেটা ভাবতেই চোখ থেকে অনর্গল জল পড়ে হবি ভাইয়ের বুক ভিজে যেতে লাগলো।
- " এজন্যই তোকে এতদিন কথাটা জানাইনি। তুই কাঁদছিস কেন! মাত্র তিনমাসেরই তো ব্যাপার! আমি ঢাকায় তোর জন্য একটা ঘরের ব্যবস্থা করেছি। কাল শুধু কাপড় চোপড় নিয়ে রেডি হয়ে থাকিস। " ভাঙা ভাঙা গলায় কথাগুলো বললেন হবি ভাই। তারও যে কষ্ট হচ্ছে, সেটা তার কথার ধরনে না বোঝা গেলেও কণ্ঠে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। উঠে বসে হুঁ হুঁ করে কাঁদছি, এমন সময় হবি ভাইও উঠে বসে আমাকে টেনে তার বুকে জড়িয়ে নিলেন।
- " আপনাকে ছাড়া থাকবো কী করে এতোদিন!" কাঁদতে কাঁদতে কোনরকমে কথাটা বলতেই হবি ভাই বললেন,
- " আমি যাবো তো সেখানে। তুই কাঁদিস না প্লিজ!" তার কণ্ঠে অনুরোধের আকুলতা। কোনরকমে কান্না চেপে চোখের জল মুছে হবি ভাইয়ের দিকে তাকাতেই বললেন,
- " দাড়া, আমি আসছি। " বলেই উনি রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। এ সুযোগে আমি হবি ভাইয়ের কালো ডায়েরীটা নিয়ে নিলাম। ঢাকায় গিয়ে তো আর কোন কাজ নেই, তখন বসে বসে হবি ভাইয়ের ডায়েরী পড়বো। ডায়েরীর কথায় অন্তত উনাকে কাছে তো পাবো! প্রায় আধাঘণ্টা পর হবি ভাই ফিরে আসতেই ডায়েরীটা বালিশের নিচে লুকিয়ে ফেললাম।
- " তোর রুমে ব্যাগ গুছিয়ে দিয়ে এসেছি। যাওয়ার আগে একবার চেক করে নিস সব ঠিকঠাক আছে কিনা।" বলেই আমার পাশে চুপ করে বসে পড়লেন। তার মুখটা মলিন হয়ে আছে। এতোটা কষ্ট উনি সেই হলুদের দিন থেকে ভেতরে চেপে রেখেছেন। সেজন্যই তো হলুদের দিন উনার চোখমুখ এমন লাগছিলো! এতোকিছুর মাঝে আমার থাকার ব্যবস্থা, ব্যাগ গোছানো সব কাজই উনি করলেন! এখন তো উনার চেহারাটা দেখলেই আমার কান্না পাচ্ছে। আস্তে করে হবি ভাইয়ের কাছে গিয়ে বসলাম। আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবারো মাথাটা নিচু করে ফেললেন। তার চোখদুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। উনি কি আবারো কেঁদেছেন?
- " হবি ভাই! " আস্তে করে ডাকতেই হবি ভাই হুট করে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।
- " যদি এটা তোর স্বপ্ন না হতো তাহলে কোনদিনও আমি তোকে যেতে দিতামনা।" আবারো এই একটা কথাই। হবি ভাই এতোটাই চাপা স্বভাবের যে নিজের মনের কথাটাও কখনো খুলে বলতে পারেন না। কিন্তু উনার ভেতরে যে কী চলছে, সেটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি। এবার আমি নিজেকে শক্ত করলাম। হবি ভাইয়ের এমন চেহারা দেখলে যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়বে। এর আগে এতোটা অসহায় চেহারায় কোনদিন দেখিনি উনাকে। চোখের জল মুছে মাথাটা সোজা করে বড় একটা দম নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করলাম। টুক করে হবি ভাইয়ের কপালে একটা চুমু দিয়ে বললাম,
- " চুপ করে শুয়ে পড়ুন, আমি ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি। " আমার এই কাজে হবি ভাইয়ের চোখদুটো বড় বড় হয়ে গেছে। আমার কাছ থেকে এমন আচরণ হয়তো উনি আশা করতে পারেননি।
- " কি হলো! এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন! যা বলছি তাই করুন না!" হবি ভাই এবার যেন একদম পাথর হয়ে গেলেন। আস্তে করে উনাকে একটা ধাক্কা দিতেই বেচারা ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। উনার মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর দেখছি উনার এলোমেলো, বোকাবোকা অবাক হয়ে যাওয়া চেহারাটা। আবারো একদফা উনার মায়ায় পড়ে গেলাম। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই হবি ভাই ঘুমিয়ে গেলে উনাকে শুইয়ে দিয়ে আমিও পাশে চুপ করে শুয়ে পড়লাম। হঠাৎই কী ভেবে যেন হবি ভাইয়ের দিকে তাকাতেই দেখলাম তার চোখের কোণা দিয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো বালিশে।

secret admirer (Complete) Where stories live. Discover now