পর্ব ১২

15 2 0
                                    

হঠাৎ সখিনা আন্টি যে কথাটা বলে উঠলেন, তা শুনে আমার পায়ের নিচের মাটি যেন সরে যেতে লাগলো। আমাকে দেখে সখিনা আন্টি ইশারায় উনার কাছে আসতে বললেন। উনার কাছে যেতেই সোফায় বসা লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
- " এই হইলো আমাগো অ্যালোহা। অরণ্য ওরেই বিয়া করতে চাইছে। " বুঝলাম উনারা অরণ্যের বাবা মা। কিন্তু বিয়ে করতে চেয়েছে মানে! এই অরণ্যের সাথে একদিন একটু কথা বলায় ও যে বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে দেবে সে জানতো কে! আর যাই হয়ে যাক, হবি ভাই আমার হোক বা না হোক, অন্যকাউকে বিয়ে করা যে আমার পক্ষে সম্ভব না! অরণ্যের বাবা বললেন,
- " হুম, অ্যালেহাকে তো আমরা আগেই দেখছি। তো আগামী মাসেই একটা দিন দেখে ওকে ঘরে তুলে নেই, কি বলেন সখিনা আপা?" এবার সখিনা আন্টির পুরো মুখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। উনি বললেন,
- " হ হ, মাইয়্যা মানুষ যত তাড়াতাড়ি বিয়া দেয়া যায় ততই মা বাপের চিন্তা কমে।" মা বাবাও যে এ বিয়েতে রাজী তা আমার বুঝতে বাকী নেই। একি হচ্ছে আমার সাথে! কেউ একটিবার আমার মতামত জানার প্রয়োজনবোধ করছেনা! আস্তে করে সেখান থেকে উঠে সিঁড়ি দিয়ে উঠছি, এমন সময় দেখলাম হবি ভাইকে। আমার পাশ দিয়েই নিচে নামছেন। উনাকে দেখার পর চাপা যন্ত্রণাটা যেন অসহনীয় হয়ে উঠলো আরো। সেই ছোটবেলা থেকে এই লোকটাকে ভালোবেসে শেষকালে কিনা এ হওয়ার ছিলো! তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে শাওয়ারের নিচে প্রায় একঘন্টা দাঁড়িয়ে কান্না করে আবার নিচে নেমে এলাম।

দুপুরে খাবারের সময় প্রথম জিন  আর নামজুন ভাইয়ার চেহারা দেখলাম। জিন ভাইয়ার মুখটা একদম চুপসে আছে। চেয়ার টেনে বিরস বদনে চুপ করে বসে পড়লো। এবার সখিনা আন্টি বললেন,
- " কী রে জিন! কাইল তোর বিয়া হইলো, কই মুখে একটা ভেটকি দিয়া রাখবি। কিন্তু তোরে দেইখা মনে হইতাসে কবরের তে টাইন্না হেঁচড়াইয়া তুইল্লা আইনা কেউ চেয়ারে বসায় দিসে। কি হইসে তোর?" জিন ভাইয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে মুখটা অসহায়ের মতো করে বললো,
- " এসব শুনে তোমার কাজ নেই আন্টি। তুমি শান্তিমতো খাও।" বলতেই সখিনা আন্টি দ্বিগুণ উৎসাহের সহিত বললেন,
- " কী হইসে ঐডা কইবি তুই?" এবার জিন ভাইয়া বললো,
- " দুঃখের কথা আর কী বলবো! রাতে রুমে যাওয়ার পর সুজিন সব মেকাপ তুলে ফ্রেশ হয়ে আসলো। আমিও ফ্রেশ হয়ে ওকে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে গল্প করার প্রস্তুতি নিচ্ছি, এমন সময় সুজিন বললো আমাদের নাকি একসাথে কোন সেলফি নেই। ও বায়না ধরলো ওকে মেকাপ করে দিতে, তারপর সেলফি তুলবে। তো আমিও শুরু করলাম মেকাপ করা। সব দেয়ার পর একটা কি স্প্রে যেন দেয়না, ঐটাই খুঁজতেছিলাম। না পাওয়ায় আমার বডি স্প্রে টা নিয়ে এসে ওর মুখে স্প্রে করতেই সুজিন এক চিৎকার দিয়ে উঠলো। কাল যদি তোমরা ক্লান্ত না হয়ে ঘুমাতে, তাহলে সেই চিৎকারে তোমরাও জেগে উঠতে। এরপর সারারাত ও আমাকে বকাবকি করেছে। এমনকি বলেছে আমি নাকি.." বলেই সুজিন আপুর দিকে তাকিয়ে বাকী কথাটা গিলে ফেললো। সখিনা আন্টি কপালে হাত দিয়ে আছে। আমরাও স্তব্ধ। সেটিংস্প্রের বদলে বডি স্প্রে মুখে লাগিয়ে দিয়েছে সুজিন আপুর মুখে! এ ছেলের দ্বারা কিছু হবেনা! এবার সখিনা আন্টি বললেন,
- " আরে গাধা, তোর কাছে না থাকলে আমার কাছে আইতি। আমার নিজের  সরিষার তেল আর কমলার রস দিয়া বানানো ১০০% প্রাকৃতিক স্প্রে টা দিয়া দিতাম!" সখিনা আন্টির কথা শুনে সুহি,  না না সুহি ভাবী বলে উঠলো,
- " না গো আন্টি। ঐ স্প্রে দিলে সুজিন বেশি সুন্দরী হয়ে যাবে। " কথাটা যে ও ব্যঙ্গ করে বলেছে সেটা আমরা বুঝলেও সৌভাগ্যবশত সখিনা আন্টি বুঝেননাই। এবার সবার মাথা ঘুরলো নামজুন ভাইয়ার দিকে।
- " কিরে নামু, তোর কেমন কাটলো?" সখিনা আন্টি হেসে হেসে জিজ্ঞেস করতেই নামজুন ভাইয়া বললো,
- " কেন গো আন্টি! আপনি এমনে জানতে চাইতেসেন কেন! আমার সুহি যে লাজুক মেয়ে ঐটা জানেননা! " ওর কথা শেষ হওয়ার আগেই সুহি ভাবী বলে উঠলো,
- " মিথ্যা কথার একটা সীমা থাকে নামজুন! মেয়েদের মতো লজ্জা তো পাও তুমি! বলি কাহিনী?" এবার নামজুন ভাইয়ার মুখটাও চুপসে গেলো। ইশারায় সুহিকে না করায় সুহি ঠোঁট টিপে হেসে চুপ করে গেলো।

secret admirer (Complete) Where stories live. Discover now