রাতে খাবারের পর আজও হবি ভাই আমাকে তার নিয়মমতো কোলে তুলে ছাদের দিকে নিয়ে চললেন। ছাদের গেটের সামনে আসতেই সামনের দিকে কি একটা দেখে যেন হবি ভাই আমাকে তার কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে সেদিকে অদ্ভুতভাবে কিছু দেখতে লাগলেন। উনার দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকাতেই যা দেখলাম, তাতে আমি নিজেও অবাক হয়ে গেলাম। দেখলাম, অরণ্য পেছন ঘুরে দাঁড়িয়ে কাউকে জড়িয়ে ধরে আছে, আর তাকেও কেউ একজন জড়িয়ে ধরে আছে। আর সে যে একজন মেয়ে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। হেই নাকি! হেই এতো তাড়াতাড়ি অরণ্যের লেজ ধরে ফেললো! যাক, বাঁচা গেলো - এই ভেবে চোখ সরিয়ে ফেলতে গিয়ে একঝলকে যেই চেহারাটা চোখে পড়লো, তাতে আমার মাথা চক্কর দিলো। জরিনা! তাহলে এতোক্ষণ জরিনা অরণ্যকে জড়িয়ে ধরে ছিলো! আর আমি কিনা হেই চিপকি ভেবেছিলাম! সেদিন জরিনার মায়ের হাবভাব দেখে মনে হয়েছিলো অরণ্যকে না পারে টেনে নিয়ে জরিনার সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। আজ তাহলে সত্যিই তাই হলো! যাক, এই জরিনার আর অরণ্য এক হলে আমি আর জিন ভাইয়া অন্তত বেঁচে যাবো। হবি ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি, সে নিচের দিকে তাকিয়ে পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে ঠোঁট টিপে হাসছে।
- " কি হলো হবি ভাই! এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো নাকি?" বলতেই হবি ভাই আমাকে আবারো কোলে তুলে নিয়ে নিচে নিজের রুমে নিয়ে এলেন।গতকাল তো ছাদেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু আজ! আজ কি সজ্ঞানে হবি ভাইয়ের সাথে আমার ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে হবে! ভাবতেই লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছি। এ লোকের দিকে তাকালেই যে আমার শ্বাস আটকে আসে, চিন্তা ভাবনা এলোমেলো হয়ে যায়! বর্তমানে সে তার বিখ্যাত কালো কুচকুচে ডায়রীটায় কিছু একটা মনোযোগ দিয়ে লিখছেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই। আর আমি তাকে দেখছি। আমাকে কোলে নিচে ওপর নিচে সিঁড়ি ভেঙে নামায় সামান্য ঘেমে গিয়েছে লোকটা। ঢিলা কালো টিশার্টের গলা আর পিঠের দিকটা ঘামে ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। বিন্দু বিন্দু ঘাম নাকের ডগায় আর কপালের দুপাশে চুলের থেকে বেয়ে পড়ছে। ওয়ারড্রবের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হাতে রেখেই ডায়েরীতে মনোযোগ দিয়ে কিছু লিখছেন। কিন্তু কী লিখছেন এই সময়ে, যার কারণে আমার দিকে তাকিয়ে পর্যন্ত দেখছেন না! রেগে মেগে ডায়েরীটার দিকে মাথা উঁচু করে তাকাতেই হবি ভাই হাত উঁচু করে ডায়েরীটা ওপরে তুলে নিলেন।
- " এই ডায়েরীতে কী এমন আছে? ঘরে ঢুকেই আপনি এই ডায়েরী নিয়ে পড়েছেন! " এবার হবি ভাই মুচকি হেসে কলম রেখে একহাতে আমার কোমড়টা জড়িয়ে ধরে তার কাছে টেনে এনে বললেন,
- " এই ডায়েরীর কথা তোর জানার কোন দরকার নেই। " বলেই হুট করে আমার কোমড় ছেড়ে দিয়ে ডায়েরীটা ওয়ারড্রবের ভেতরে রেখে দিলেন। বহুরূপী! ভেবেছিলাম কী, আর করলো কী! মেজাজের বারোটা বাজিয়ে গিয়ে বারান্দায় গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছি, এমন সময় পেছন থেকে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে কাঁধে উনার থুতনী ঠেকাতেই কেঁপে উঠলাম। এ লোকের শরীরে বোধয় কারেন্ট আছে। নাহলে উনার সাথে স্পর্শ লাগলেই এমন ঝটকা লাগার কী-ই বা মানে! কিছুক্ষণ আগে উনার করা কাজের কথা মনে হতেই এক ধাক্কা দিয়ে সরে যেতে নিলেই একটানে আমাকে আমার আগের মতো দাঁড় করিয়ে দিলেন।
- " আপনি গিয়ে ডায়েরী লিখুননা! এখানে আমাকে নিয়ে টানা হ্যাঁচড়া করছেন কেন!" হবি ভাই এবার বললেন,
- " তুই এতো বলদি কেন রে অ্যালোহা! " অদ্ভুত! এ লোক আমাকে বলদি কেন বলছে!
- " যদি কোনদিন এই ডায়েরী তোর হাতে চলে যায়, সেদিন আমার আর কিছু বাকী থাকবেনা।" আনমনেই আস্তে আস্তে কথাটা বললেন হবি ভাই।
কিন্তু উনার কথার আগাগোড়া কিছুই আমার মাথায় ঢুকলো না। কী আছে এই ডায়েরীতে! হঠাৎ হবি ভাই আমার কাঁধে তার ঠোঁট স্পর্শ করাতেই এসব চিন্তা মাথা থেকে ফুস করে উড়ে গেলো। হাত পা থরথর করে কাঁপছে, আর উনি আমার ঘাড়ে নাক মুখ ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। বাইরের হালকা বাতাসে উনার সিল্কি চুলগুলো এসে আমার মুখে বাড়ি খাচ্ছে। এই কি সেই হবি! একটা সময় উনার ধারে কাছে ঘেঁষলেও একগাদা বকাঝকা শুনে রুমে এসে কান্না করতাম, আর আজ! হঠাৎই হবি ভাই আমাকে কোলে তুলে নিলেন।
- " কী করছেন হবি ভাই! "এবার হবি ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
- " ভবিষ্যতে যেন এই 'ভাই' ডাকার আগে আমি যে তোর স্বামী সেটা মাথায় থাকে- তার ব্যবস্থা করছি। " হায় খোদা! আবারো আমি সেই একই ভুল কী করে করলাম! আজ বুঝি আর বেঁচে থাকবোনা। ছোটবেলায় তো কথা দিয়েই আধমরা করে ফেলতো এ লোক, আজ কী করবে তার ধারণাও আমার আমার নেই। বিছানায় এনে আমাকে ফেলেই আমার দিকে ঝুঁকে এসে বললেন,
- " কী বলছিলি যেন! ডায়েরীর সাথে সময় কাটাই। আর কী! আমি তোর ভাই! "
- " না না, ঐ ভাই তো ভুলে.." বলতেই হবি ভাই আমার ঠোঁটে টুক করে একটা চুমু খেয়ে বসলেন। চোখ গোলগোল করে তার দিকে তাকাতেই বললেন,
- " আজ ছেড়ে দিলাম, এরপর যদি আর কোনদিন ভাই ডাকতে শুনেছি তো.." বলেই আমার দিকে আবার ঝুঁকে আসতেই আমি পিছিয়ে গিয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেললাম। কিছুক্ষণ পর মাথাটা একটা শক্ত কিছুর সাথে বাড়ি খেতেই চোখ খুলে দেখলাম আমি হবি ভাইয়ের বুকে শুয়ে আছি। আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেই বললেন,
- " আজ যদি গুঁতোগুঁতি করেছিস, তাহলে নাক কেটে রেখে দেবো তোর।" লজ্জায় মাথাটা যতটা পারা যায় নিচু করে তার বুকেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
YOU ARE READING
secret admirer (Complete)
Fanfictionআসসালামু আলাইকুম। এটি সম্পুর্ণ কাল্পনিক গল্প। কারো সাথে মিল পেলে লেখক বা পোস্ট দাতার কোনো দোষ নেই। ভুল গুলো ক্ষমা সুলব দৃষ্টিতে দেখবেন ff : sceret admirer jung hoseok ( jhope) Writer -Alloha Sarsalmaz গল্পটা আমার লেখা নয় আমার এক বড় আপুর লেখা।...