পর্ব ১৭

12 2 0
                                    


পুরো বাড়ি তন্নতন্ন করে খোঁজার পরেও যখন হেই কে পেলামনা, তখন ওকে খোঁজার জন্য বাড়ির বাইরে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে বাড়ির পেছনের পুকুরটার সামনে এসে যা দেখলাম, তাতে আমার মুখ থেকে অজান্তেই " ইন্নালিল্লাহ্ " শব্দটা বেরিয়ে এলো। এসব কি চলছে এ বাড়িতে। পুকুরে হেই কে সাঁতার শিখাচ্ছে শেফালির ভাই। হেই আর শেফালির ভাই হেসে কুটিকুটি হচ্ছে আর পানিতে লাফালাফি করছে। এদিকে গতকালই হেই এর মা সখিনা আন্টির সাথে শেফালির বাবার যুদ্ধ চললো। একদিকে মা, অন্যদিকে মেয়ে! এই হেই চিপকি সারাগ্রাম খুঁজে শেষমেশ এই শেফালির ভাইকেই পেলো! এবার সখিনা আন্টি যদি হেইয়ের সাথে শেফালির ভাই কে দেখে নেয়, তাহলে গতকালের বাবার প্রতিশোধটাও এই ছেলের ওপর থেকে নিয়ে নিবে। ওরেই কালা ভুনা করে ফেলবে। তাড়াতাড়ি হেইকে ডেকে বললাম,
- " হেই, তাড়াতাড়ি উঠে এসো। কথা আছে। " বলতেই হেই পুকুর থেকে উঠে এসে বললো,
- " দেখো অ্যালোহা, এতদিন পর হবিকে ভুলে থাকার মতো একজনকে পাইছি, এবার ওরেও ছেড়ে দিতে বইলো না। " ওর কথা শুনে আমারো মায়া হলো। সত্যিই তো! ভালোবাসা কী আর জাতপাত দেখে হয় নাকি! আমি বললাম,
- " ঠিক আছে। তবে যা করবে সাবধানে। গতকালের কাহিনী তো দেখেছোই। " বলে আমি আবার বাড়িতে ফিরে এলাম।

ঘরে বসে বসে বিরক্ত হচ্ছি, এমন সময় মনে হলো, হবি ভাইয়ের একটা খোঁজ নেয়া দরকার। তাড়াতাড়ি ফোনটা নিয়ে তাকে একটা কল দিতেই ফোন ধরে গড়গড় করে বলে উঠলো,
- " ১০মিনিটের মধ্যে একটা শাড়ি পরে রেডি হয়ে বাড়ির সামনে দাঁড়া। "
- " কিন্তু হবি ভাই, এই দুপুরে, তাও আকাশ মেঘলা, যখন তখন বৃষ্টি হতে পারে - এমন সময় বাইরে কেন দাঁড়িয়ে থাকবো? তার ওপর বাড়িতে কত কাজ! আজ চার চারটে বিয়ে বলে কথা!" কথাটা বলতেই হবি ভাই এক ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,
- " হহ্, ঘরে তো তুই একমাত্র কামলি! তুই না থাকলে বিয়েই হবে না! আর একটা কথা বলেছিস তো দেখিস!" বলেই খট করে কেটে দিলেন। এ কেমন লোকরে বাবা! ফোন দিয়েছিলাম তার খোঁজ নিতে, উল্টা আমাকেই ধমকে কাজে লাগিয়ে দিলো! তাড়াতাড়ি করে কালো পাড়ের একটা হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি পরে চুলগুলো খোঁপা করে নিয়ে রেডি হয়ে নিলাম। আজও আমি ঠিকমতো শাড়ির কুঁচি করতে পারলামনা। তাও কোনরকমে ঠিকঠাক করে বাড়ির বাইরে এসে দাঁড়াতেই দেখি হবি ভাইয়ের হাতে কয়েকটা ব্যাগ। আমাকে বাইকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে নিজে বাড়ির ভেতরে দৌঁড়ে গেলো ব্যাগগুলো নিয়ে। আমি হাবলির মতো বাইকের সামনে দাঁড়িয়ে মহারাজের জন্য অপেক্ষা করছি। দুইমিনিটের মধ্যেই হবি ভাই ফিরে এসে আমাকে বাইকে উঠতে বললেন। বাইকে বসবো, এমন সময়,
- " দাঁড়া! " শুনেই চুপ করে দাঁড়িয়ে গেলাম। হবি ভাই বাইক থেকে নেমে আমাকে নিয়ে টানতে টানতে এক কোণায় নিয়ে এলেন। অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি, আর হবি ভাই ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত আমাকে ঘুরে ঘুরে দেখছেন।
- " কি করছেন হবি ভাই? এভাবে ঘুরে ঘুরে কী দেখছেন?"
- " প্রতিবার কাপড় চোপড়ে একটা না একটা গণ্ডগোল করা তো তোর মুদ্রাদোষ। তাই আজকে আবার কী কী খুলে এসেছিস সেটা দেখছি। " ছিহ্, আবারো সেই অপমান! এ লোক সারাজীবন আমাকে এভাবে অপমান করার জন্যই বিয়ে করেছে বুঝি! এবার আমি তার দিকে ভালো করে তাকালাম। একি! দু মিনিটের মধ্যে সে কাপড়ও চেন্জ করে নিয়েছে! এখন তার পরনে একটা সাদা শার্ট, কালো জিন্স, আর হাতে চেইনের মোটা ঘড়ি। চুলগুলো বাতাসে উড়ছে, আর উনি আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে নিজের অবাধ্য চুলগুলোকে বারবার হাত দিয়ে উল্টাচ্ছেন। আজও উনার বুকের দিকের বোতাম দুইটা খোলা। উফফ্, দেখলেই উনার দিকে চোখ আটকে যায়। এতো সেজেগুজে বের হওয়ার কী দরকার উনার! ভেতরে একটা জ্বলন হচ্ছে আমার। এবার হবি ভাই শার্টের হাতা ভাঁজ করতে করতে বললেন,
- " উল্টা ঘুরে দাঁড়া। " কোন কথা না বলে উল্টা ঘুরে দাঁড়াতেই হবি ভাই ব্লাউজের ফিতেটা বাঁধতে বাঁধতে ভারী গলায় বললেন,
- " এসব স্বাভাবিক জামাকাপড় পরার কোন অধিকারই নেই তোর। যেই মেয়ে নিজের জামাকাপড়ের খবরই ঠিকঠাকমতো রাখতে পারেনা, তার জন্য রেনকোট আর সোয়েটার পরে ঘুরাফেরা ঠিক। " বলেই আমাকে একটানে তার দিকে ফিরিয়ে হাঁটুগেড়ে বসে শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দিতে লাগলেন। চুপ করে মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, এমন সময় রাস্তায় দিয়ে কয়েকটা কলেজের মেয়েকে দেখলাম দূর থেকেই হবি ভাইকে হা করে দেখতে দেখতে আসছে। হবি ভাই আমার কুঁচি ঠিক করে নিজের জামা কাপড় ঝেড়ে আবার চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করছেন, আর মেয়েগুলো তাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। এবার আর নিজের রাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলাম না। হাতে একটা আচারের প্যাকেট ছিল, সেটা ছুঁড়ে ফেললাম সামনের ডোবায়, আর সেই ডোবার পানি ছিটকে এসে পড়লো সেই মেয়েদের গায়ে। মেয়েগুলো আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই মুখ ভেঙচে হবি ভাইয়ের দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি হাসছেন। উনার হাসি দেখে আমার রাগ যেন মাথায় চড়ে গেলো। হাত উঁচু করে তার চুলগুলে এলেমেলো করে দিয়ে বললাম,
- " এই চুলগুলো এতো গুছিয়ে রাখার কী দরকার! " বলে উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম এলোমেলো চুলে উনাকে আরো বেশি মোহময় লাগছে। যাকে বলে পাগল করা হ্যান্ডসাম। এবার নিজের কুকর্মের জন্য নিজের ওপরেই রাগ হতে লাগলো। চুপ করে গিয়ে বাইকে বসে পড়লাম। এবার হবি ভাই এসে আমার দুপাশে হাত রেখে আমার দিকে ঝুঁকে এসে কানের সাথে ঠোঁট লাগিয়ে ফিসফিস করে বললেন,
- " এই হবি তার অ্যালেহাতেই আসক্ত। শুধুমাত্র অ্যালেহাই তার একমাত্র নেশা। আর কোনকিছু তাকে এই নেশা থেকে সরাতে পারেনি, আর না পারবে। তাই অ্যালোহার উচিত তার স্বামীকে নিয়ে চিন্তামুক্ত থাকা। " বলেই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে একটা মুচকি হাসি দিলেন। উনার কথাগুলো শুনার সাথে সাথেই মনে হলো রাগটা যেন ফুস করে উবে গেলো। এতো সুন্দর করে কী করে কথা বলে এ লোক! নিজের করা কাজে নিজেই লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বসে আছি, এমন সময় হবি ভাই আমার মুখটা উঁচু করে টুক করে ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বললেন,
- " দেখ, রাস্তাঘাটে ভুলেও লজ্জা টজ্জা পাস না। তোকে লজ্জা পেতে দেখলে আমার লজ্জা উড়ে যায়। " বলেই উনিও বাইকে উঠে বসলেন। কী নির্লজ্জ লোকরে বাবা! রাস্তাঘাটে যখন তখন যা-তা করে বসে!

secret admirer (Complete) Where stories live. Discover now