পর্ব - ৮

16 3 0
                                    


কি করে হতে পারে এমন! হবি ভাই হানাকে বললো,
- " একদম শুরু থেকে সব বল।" হানা একটা বড় শ্বাস ছেড়ে বললো,
- " তাহলে শোন। অ্যালোহা হয়তো জানে যে জাংকুক পড়াশোনার জন্য শহরে চলে যাওয়ায় আমাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আসলে কিন্তু তা না।" আমি এবার প্রচণ্ড অবাক হলাম। তাহলে আমি এতোদিন কিছুই জানতাম না! হানাকে বললাম,
- " তার মানে? তোদের ভিতরে অন্য কোন ঝামেলা চলছিলো এতদিন?" হানা একটা শুকনো হাসি দিয়ে বললো,
- " হুম। ভেবেছিলাম সেটা আমার মনের ভুল বা সন্দেহ। কিন্তু কাল যখন নিজের চোখে দেখলাম, তখন সবকিছু একদম পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিলো। " বলেই ফুস করে একটা শ্বাস ছাড়লো হানা। এটুকু একটা মেয়ের মনে এতো কষ্ট! হানা এবার একটু প্রস্তুত হয়ে বসে বলা শুরু করলো,
- " গত এক বছর যাবৎ আমার আর জাংকুকের সম্পর্কটা খুব একটা ঠিক নেই তা তো দেখছোই। এর পেছনে মূল কারণ ওর বান্ধবী রাহা। " এবার আমি বললাম,
- " সেই রাহা? যাকে জাংকুক  আমাদের বাড়িতে এনেছিলো?" হানা বললো,
- " হুম, সেই রাহা। গত বছর ঠিক এইদিনে আমি আর জাংকুক কোন একটা বিষয় নিয়ে খুব হাসাহাসি করছিলাম। সবকিছু খুব সুন্দর চলছিলো আমাদের মধ্যে। হঠাৎই হাসির মাঝে একটা কল আসে ওর, আর সাথে সাথে জাংকুক ফোন নিয়ে চলে যায় বাইরে। বিষয়টা আমার খুব অবাক লেগেছিলো। আমরা ছোটবেলা থেকেই একে অপরের সব জানতাম, এমনকি জাংকুকের সব বন্ধুদেরও আমি ভালোভাবে চিনি। কিন্তু সেদিন আমার থেকে এভাবে লুকিয়ে ফোনে কথা বলাটা আমার ঠিক লাগেনি। এরপর যেদিন রাহাকে নিয়ে আমাদের বাড়ি এলো, সেদিন লিয়া আমাকে একটু ইঙ্গিতে বলেছিলো যে রাহার ভাবসাব ভালোনা। আমি কষ্ট পাবো বলে ও আমাকে সবটা খুলে বলেনি। এরপর থেকেই আস্তে আস্তে আমার আর জাংকুকের সম্পর্কে ভাঙন ধরতে থাকে। শহর থেকে কিছুদিনের জন্য বাড়িতে আসলেও ও বেশিরভাগ সময়ই ফোনে কথা বলে কাটাতো। আর ও যে রাহার সাথেই কথা বলে, সেটা অনেকবারই ধরেছি আমি। এরপরেও আমি ভাবতাম একটা সময় সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু গতকাল রাতে যা দেখলাম, এরপর আমার মনে হয়না আর কিছু ঠিক হওয়ার আছে। " বলেই হানা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো। হবি ভাইয়ের মুখ একদম গম্ভীর, তার কপাল থেকে ভ্রুকুটি সরছেই না। বোঝা যাচ্ছে না তার ভেতরে কী চলছে। হানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, এমন সময় কান্না থামিয়ে মাথা তুলে ও আবার বলা শুরু করলো,
- " কাল সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানটা নিয়ে আমি খুব খুশি ছিলাম। মেহেদী দিবো বলে ফোনটা নিজের ঘরে রাখার জন্য নিচে নেমেছি, এমন সময় একটা ম্যাসেজের শব্দ পেয়ে সেটা অন করার পর দেখলাম কেউ একটা ছবি পাঠিয়েছে। ছবিটা দেখার সাথে আমার মনে হচ্ছিলো তখনই মরে যাই। জাংকুক আর রাহার খুব ঘনিষ্ঠ একটা ছবি! এতটা গভীর সম্পর্কে ওরা থাকবে সেটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। জাংকুক তো আমায় একবারের জন্যও হলেও সবটা বলতে পারতো! তাহলে আমি আস্তে আস্তে নিজেকে সামলে নিতাম। ছবিটা দেখার পর জাংকুকের সাথে কথা বলতে গিয়ে দেখি তখনো তার কানে ফোন, আর সে হেসে হেসে কথা বলছে। এতোকিছুর পর আমি আর কীই বা করতে পারতাম!" এবার হবি ভাই হানার মাথায় একবার হাত দিয়ে শান্তনা দিয়ে বললেন,
- " তুই খুব সরল হানা। সবকিছু বোঝার মতো বয়স আর বুদ্ধি তোর হয়নি। কিন্তু মরার জন্য একদম পারফেক্ট জায়গা আর বেছেছিস।" শেষের কথাটা যে উনার আসল হবিস্টাইলে বলেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। এরপর দুমিনিট কপালে আঙুল বুলাতে বুলাতে কি যেন একটা ভেবে হানাকে বললেন,
- " আবার যদি মরার কোন প্ল্যান থাকে, তাহলে এতো কষ্ট করে দড়ি-টড়ি বেঁধে ঝুলার দরকার নাই, আমাকে একবার বলিস। আমি নিজ দায়িত্বে তোরে ঐপাড়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করবো।" মুখটা যথেষ্ট গম্ভীর রেখে খুব স্বাভাবিকভাবে কথাগুলো বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন হবি ভাই। এ লোকটা এমন কেন! সবসময় উনার আজব কথাবার্তা চলতেই থাকে! আমি হানাকে বললাম,
- " আমার সবটুকু শুনে মনে হচ্ছে কোথাও একটা গোলামাল আছে। তুই একটু সময় দে, আমি সবটা ঠিক করে দিবো।" বলেই ওকে গায়ে হলুদের প্রোগ্রামের জন্য রেডি হতে বলে নিজের রুমে চলে এলাম।

secret admirer (Complete) Where stories live. Discover now