পর্ব - ১০

20 3 0
                                    

সবাই যার যার রুমে ফিরে যাচ্ছে, আমিও সিঁড়ি দিয়ে উঠছি, এমন সময় ড্রয়িংরুমের কোণায় চোখ পড়তেই যা দেখলাম, তাতে জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেলাম। এই মানুষটার এমনরূপ! দেখলাম- হেইরান শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে হবি ভাইকে, আর হবি ভাই তার মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এমন দিনও যে দেখতে হবে তা কল্পনাও করতে পারিনি কোনদিন। আর যাই হোক, হবি ভাইকে কোনদিন দেখিনি হেইরানকে প্রশ্রয় দিতে। কিন্তু আজ! আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখেও হবি ভাই হেইরানকে বুক থেকে তুললেন না। আর দেখতে পারলাম না। একদৌঁড়ে সোজা ওপরে গিয়ে বিছানায় পড়ে কান্না শুরু করলাম। কেন! কেন উনি এমন করলেন! সেই ছোটবেলা থেকে উনাকে ভালোবেসে আসছি, আর তার বদলে কখনো অপমান, কখনো বকা আবার কখনো বা হালকা করে কাছে এসে আমাকে গুড়িয়ে দিয়েছেন উনি। এতসব কিছুর পরেও উনার পিছু ছাড়িনি। আজ রাতে এতসব কাহিনীর পর একমুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিলো হবি ভাইও বোধয় আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছেন। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও উনি আমাকে শেষ করে দিলেন। কেন বারবার এমন করেন আমার সাথে! কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলে গেলো, তবুও মনকে শান্তনা দেয়ার কোন উপায় খুঁজে পেলামনা। তবে এর নামই কি ভালোবাসা! আজ জিন ভাইয়ার বিয়ে। বিয়েটা সুুজিন আপুর মামাবাড়িতে হওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু পরে জিন ভাইয়ার ইচ্ছে পূরণের জন্য কমিউনিটি সেন্টারেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সকালে টেবিলে বসে বসে পাউরুটি চিবাচ্ছি, এমন সময় সখিনা আন্টি এসে বললেন,- " তোর চোখে কী মৌমাছি কামড়াইসে নাকি অ্যালোহা?" এমনিতেই সারারাত কেঁদে কেটে ঘুম হয়নি, মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছে, তার মাঝে উনার এই গোয়েন্দামার্কা কথা সহ্য করার মতো ধৈর্য্য আমার আর রইলোনা।- " জ্বি আন্টি। কাল রাতে আপনাদের মারামারির আওয়াজে মৌমাছিদের ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো।তখন রেগে গিয়ে ওরা আমাকে কামড়েছে।" সখিনা আন্টি একটু চিন্তিত মুখে বললেন,- " দাঁড়া, একটা ব্যবস্থা কইরা আইতাসি।" বলেই উনি কই যেন চলে গেলেন। আমি আবার সেই বিস্বাদ পাউরুটি চিবাতে শুরু করলাম। - " অ্যালোহা শোন, আজ আমরা কয়েকটা চুমু পোজে ছবি তুলতে চাই। তুই তুলে দিবি?" কথাটা শুনে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলাম চৌষট্টিপাটি দাঁত বের করে দাঁড়িয়ে আছে লিয়া এবং জিমিন। - " অনেকদিন থেকে এই প্ল্যান করছি, কিন্তু কেউ ছবি তুলে দিতে রাজী হচ্ছেনা। " আমি বললাম,- " সমস্যা নাই। আমি না পারলে সখিনা আন্টিকে বলে দিবো,উনি তুলে দিবে।" জিমিন এবার হাসিহাসি মুখ করে,- " ধন্যবাদ অ্যালো.." এটুকু বলার পরেই দুজন একসাথে " নাআআআআ" বলে এমন এক চিৎকার দিলো, যার কারণে পুরো বাড়ির সবাই এসে হাজির হয়ে গেলো। মা এসে " কি হয়েছে?" জিজ্ঞেস করায় আমি কিছু একটা বলতে যাবো এমন সময় কোন একটা ধোঁয়ায় পুরো ড্রয়িংরুম অন্ধকার হয়ে গেলো, সাথে শুরু হলো কাশি। সবাই সমান তালে কাশতেই আছি, ওদিকে ধোঁয়ার চোটে চোখ খুলে তাকাতে পর্যন্ত পারছিনা। বাড়িতে কোথাও আগুন লেগেছে নাকি। কোনরকমে দৌঁড়ে রান্নাঘরের দিকে যেতেই দেখলাম রান্নাঘরের বেসিনের পাশের উঁচু জায়গায় বসে বসে পা দোলাচ্ছেন সখিনা আন্টি। - " আইজ দেখমু কেডা জিতে। ঐ মৌমাছি, নাকি সখিনা বেগম।" মুখে কঠিন চ্যালেন্জের ভাব নিয়ে কথাটা বললেন উনি। - " তারমানে এসব আপনি করেছেন? কি দিয়েছেন এগুলো?" জিজ্ঞেস করতেই সখিনা আন্টি বললো,- " পুরান কাপড় কেরাসিন তেলে চুবাইসি। এরপর এর ওপর মশা মারার এরোসল আর লগে একবাটি মধু দিয়া আগুন ধরায় দিসি। এখন দেখমু মৌমাছি কেমনে বাইচ্চা ফিরে।ও সখিনার লেজে পাড়া দিছে,এবার বুঝবো।" বলেই পাশের বাটি থেকে আমের আচার খেতে লাগলেন। আমি দৌঁড়ে গিয়ে ঐ আগুনের থালা খুঁজতে লাগলাম ধোঁয়া বন্ধ করার জন্য। নাহলে এই ধোঁয়ায় মৌমাছি মরুক বা না মরুক,মানুষ ২/৩ জন মরবে এটা নিশ্চিত। আমার ঐ এক কথায় যে এতোবড় কাহিনী ঘটায় ফেলবেন উনি তা কে জানতো! সকালে বাড়ির সবার চেহারা দেখলেও হেইরান আর হবি ভাইয়ের চেহারা আমার চোখে পড়েনাই। আমিও চাইনা উনাকে আর দেখতে। যত দেখবো ততই নিজের পাওয়া এতো বছরের জমানোর কষ্টগুলো নাড়া দিয়ে উঠবে।দুপুর থেকে শুরু হলো আসল কাহিনী। সবাই নিজের রুম ছেড়ে আমার রুমে এসে ঢুকছে বারবার। কিন্তু কেন! আমার রুমেই কেন!- " দেখতো অ্যালোহা, এই গোলাপী জামাটা পরবো,নাকি লালটা?" বললো ইউনা।- " এই জামাগুলো পেলি কোথায় রে? এগুলো তো তোর আগে ছিলোনা! আর মার্কেটে গিয়ে তো বিয়ের জন্য তুই অন্য জামা কিনেছিলি!" আমার কথা শুনে ইউনা একটু লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বললো,- " ও দিসে। মানে ঐ তেয় আরকি।" আহ্, কি কপাল! সবারই সব ঠিক চলতেসে, ঠাডাপরা কপাল শুধু আমার আর সুহিরই! - " তাহলে তেয় কেই জিজ্ঞেস কর না, ও যেটা পছন্দ করে দিবে, সেটাই পড়িস।" বলতেই ইউনা দৌড়ে গেল তেয় এর দরবারে। এবার হাজির লিয়া। ওর হাতে আপাতত কোন কাপড় চোপড় নেই। কিন্তু ওর চেহারার ভাবসাব সুবিধার লাগছেনা। - " কী ভাবলাম আর কী হয়ে গেলো! আমার কপালটাই খারাপ! " কান্না করতে করতে বলতে লাগলো লিয়া। " কী হয়েছে? " জিজ্ঞেস করতেই বললো, - " ভেবেছিলাম আজ হাজার হাজার ছবি তুলবো চুমু পোজে, কিন্তু একটু আগে সখিনা আন্টির ঐ ধোঁয়ায় পাশের পেয়ারা গাছের মৌমাছি এসে জিমিনের ঠোঁটে কামড়ে দিয়েছে।" বলেই দ্বিগুণ জোরে কান্না করতে লাগলো। একে তো নিজেই আছি মহিলা দেবদাসের মনমানসিকতা নিয়ে, তার মাঝে এসব উটকো, অদ্ভুতসব বিষয় নিয়ে আমার কাছেই এই জীবদের কেন আসতে হচ্ছে এ সময়ে! কোনরকমে শান্তনা দিয়ে ওকে বের করেই ঘরের দরজা আটকে দিলাম। আজ মনে মনে ঠিক করলাম, এতোদিন আমি যা ভোগেছি, আর সেসব সহ্য করবোনা। একতরফাভাবে আর কতদিনই বা ভালোবাসা যায়! সন্ধ্যায় যখন জামাইয়ের বেশভূষায় জিন ভাইয়া বাড়ি থেকে বের হলো গাড়িতে উঠবে বলে, তখনই দেখলাম জরিনা এসে জিন ভাইয়াকে একটা কালো কাজলের ফোঁটা লাগিয়ে দিলো ঘাড়ের কাছে। যাক, বেচারী তাহলে এই বিয়েটা নিয়ে আর ঝামেলা করছেনা। আসলে এই জরিমার মা আর জরিনা দুজনেই খুব ভালো। এমনিতে মাঝে মাঝে একটু বেশিই উল্টাপাল্টা করে ফেলে, তবুও এতোকিছুর পর আমাদের পিছু ছাড়েনা কোনদিন। গাড়িতে সবাই বসে অপেক্ষা করছে সুহির জন্যে, কিন্তু ওর আর খবর নেই। কই গেলো এই মেয়েটা! আমি তাড়াতাড়ি ওপরে গিয়ে দেখি ও এখনো রেডিই হয়নি।- " তোর এই অবস্থা কেন সুহি? রেডি হসনি কেন?" জিজ্ঞেস করতেই ও বললো, - " ভালো লাগছেনা। যাবো না আমি " বলে কি এ মেয়ে! সব কিছু হয়েছে ঐ নামজুন ভাইয়ার কারণে। রেগে ওকে ফোন করে বলতেই ও এসে সুহিকে এক ধমক দিয়ে বললো, - " তাড়াতাড়ি রেডি হও, এবং সেটাও মেকাপ সহ। আমি সবাইকে সামলাচ্ছি। " বাপরে! সুহির ভয়ে ইঁদুরের মতো লুকিয়ে থাকা নামজুন এতো ধমকে কথা বলা শিখলো কোত্থেকে! আমি নিচে নামার জন্য সিঁড়ি দিয়ে নামছি, এমন সময় দেখলাম, বাড়ির দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোন টিপছেন হবি ভাই। অফ হোয়াইট কালারের শার্টের হাতা ভাঁজ করে কনুই অব্দি তুলে রাখা। বরাবরের মতোই বুক দেখানোর জন্য ওপরের দুইটা বোতাম খুলে রেখেছেন। ফর্সা হাতে কালো ঘড়িটা বেশ মানিয়েছে। বা হাতে কালো স্যুটটা ঝুলিয়ে ধ্যান দিল দিয়ে ফোনে মাথা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কী দরকার এতো সুন্দর হওয়ার! উনাকে দেখলে কেন বারবার উনার দেয়া সব অপমান, উনার করা কাল রাতের এতোবড় জঘন্য ঘটনাটা ভুলে যাই আমি! এতোটা নির্লজ্জ কী করে হলাম আমি! হুঁশ ফিরতেই আবার নিজের আসল প্রতিজ্ঞায় ফিরে এলাম আমি। দরজার সামনে আসতেই খপ করে আমার হাত ধরে হাঁটতে লাগলেন হবি ভাই। হাতটা ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করছি, এমন সময় উনি বললেন,- " সমস্যাটা কি তোর! এভাবে জোঁকের মতো মোচড়ামুচড়ি করছিস কেন? আরেকবার নড়বি তো.."- " তো? তো কি করবেন আপনি! মারবেন? মারলে মেরে ফেলুননা! এমনিতেও খুব শান্তিতে বেঁচে নেই আমি!" একশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলাম আমি। কষ্টে, অভিমানে সবকথা যেন গলায় এসে আটকে যাচ্ছে। হবি ভাইয়ের চোখে মুখে আশ্চর্যের ছাপ। হোক উনি অবাক। তাতে আমার কিছু আসে যায়না আর। কিছুক্ষণ মাথাটা নিচু করে রেখে আবার আমার হাত ধরে আমাকে নিয়ে গাড়িতে বসে গেলেন। না চাইতেও হবি ভাইয়ের জোরে তার পাশে বসতে হলো আমার।গাড়িতে বসেই উনি আমার একটা হাত নিজের হাতের মাঝে ঢুকিয়ে বসে আবার সেই ফোন টিপতে লাগলেন। আমি এক ঝটকায় উনার থেকে নিজের হাতটা মুক্ত করতেই হবি ভাই আরেকদফা অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। আমি পাত্তা না দিয়ে জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলাম।কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছেই দেখলাম সেখানে কনেপক্ষ, মানে সুজিন আপুর নানুবাড়ির সব মেহমানরা এসে হাজির। আজ আমি একটা কালো জর্জেটের শাড়ি পরেছি। সাথে কালো পাথরের টিপ, চুলগুলো হালকা খোঁপা করে নিয়েছি। আজ আমার ব্লাউজের গলা বড় থাকার পরেও চুল খুলে দিয়ে অপমান করেননি হবি ভাই। আর করবেই বা কেন! কি হই আমি উনার! স্টেজের সামনে গিয়ে জিন ভাইয়া আর সুজিন আপুকে দেখছি। ইশশ্,কী সুন্দর মানিয়েছে ওদের! এত ঝড়ের পর আজ জিন ভাইয়ার মুখে হাসি দেখছি। হঠাৎই কারেন্ট চলে গেল,নাকি অন্যকিছু সেটা বুঝতে পারলামনা। তবে একমিনিটের জন্য সব লাইট অফ হওয়ার পর সাথে সাথেই আবার লাইট জ্বলে উঠলো। লাইট আসতেই দেখলাম সবাই কেমন যেন অবাক হয়ে জিন ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটা বোঝার জন্য জিন ভাইয়ার দিকে তাকাতেই বুঝলাম কাহিনী কি। ওর গালে একজোড়া লাল ঠৌঁটের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ওদিকে সুজিন আপু ভদ্রমহিলার মতো মাথা নিচু করে বসে আছে। তবে কাহিনী যে কে করেছে সেটা কি আর বোঝার বাকী আছে! হঠাৎই সখিনা আন্টি কোত্থেকে এসে যেন বললেন,- " কীরে জিন! আবার তোর গালে চুমার নিশান! ঐ চুমাওয়ালীর কাম না? বুঝসি, ও এনেও আইসে। আইজ ওর ঠোঁট কাইট্টা যদি কাউয়ারে না খাওয়াছি, আমার নাম সখিনা না।" বলেই রাগে ফুঁসফুঁস করতে করতে এদিক ওদিক সেই চুমাওয়ালীকে খুঁজতে লাগলো। এদিকে উনাকে যদি বলা হয় যে বিয়ের আগে সুজিন আপু এই কাজ করেছে, তাহলে বিয়ে বদলে এখানে জানাযা পড়ানো লাগবে। তার চেয়ে ভালো উনি খুঁজতে থাকুক। এমন সময় জরিনা আন্টি স্টেজের ওপর উঠে নিজের আঁচল দিয়ে জিন ভাইয়ার গাল থেকে লিপস্টিকের দাগ মুছতে মুছতে সুজিন আপুকে বললেন,- " বিয়া করতাসো ঠিক আছে, একটু দেইখা রাইখো জামাইরে। আমার জরিনা কইলাম জিনরে ভালোবাসে! ওর থেইকা সাবধানে রাইখো।" বলে নিচে নেমে এলো।এদিকে জিন ভাইয়া একটা শুকনো ঢোক গিলে সুজিন আপুর দিকে তাকাতেই সুজিন আপু ফিসফিস করে যেন কী বললো জিন ভাইয়ার কানে। - " ঐ অ্যালোহা, তেয়কে দেখেছিস?" ইউনা এসে জিজ্ঞেস করলো আমায়। - " এতো খোঁজা লাগে নাকি গো! একবার আমার নাম ধরে ডাক দিতে, আমি উড়ে আসতাম তোমার কাছে।" একটা হাসি দিয়ে পেছন থেকে কথাটা বলেই ইউনার হাত ধরে নিয়ে গেলো ছবি তোলার জন্য সাজানো জায়গাটায়। যাওয়ার সময় পেছন তাকিয়ে তেয় বললো,- " অ্যালোহা তুমিও একটু আসো তো! একটা কাজ আছে।" তাই আমিও ওদের পেছন পেছন এলাম।হঠাৎই তেয় ইউনার সামনে হাঁটুগেড়ে বসে পড়তেই ইউনা ছিটকে গিয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো। বেচারী অবাক হয়ে গেছে, হওয়ারই কথা। তেয় একটা আংটির বাক্স বের করে ওর সামনে ধরে একদম সিনেমার মতো কয়েকটা ডায়লগ দিলো। আর সেগুলো শুনে ইউনাও খুশিতে গদগদ। তেয় আংটিটা পরিয়ে দিতে ইউনা একলাফে তেয় এর ঘাড়ে চড়ে বসলো। আমি আর সেখানে দাঁড়ালাম না। আসলে ওদের সম্পর্কটা খুব মিষ্টি ধরনের। পাগল ধরনের ইউনার সাথে দুষ্ট তেয় এর জুটিটা অসম্ভব মিষ্টি। আমি ফিরে আসছি, এমন সময় তেয় পেছন থেকে বললো,- " অ্যালোহা, তোমাকে কিন্তু সাক্ষী রেখেছি। ইউনার তো ঠিক নেই, কবে না আবার বলে দেয়া আমাকে চিনেই না। তুমি কিন্তু এটা মনে রেখো।" আমি একটা হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে এলাম। স্টেজের সামনে আসতেই যা দেখলাম, তাতে আমার মনে হলো, আমি কি ভুলই দেখছি, নাকি যা হচ্ছে তা সত্যিই! দেখলাম-স্টেজে পাশাপাশি বসে আছে নামজুন এবং সুহি, আর তাও পুরোপুরি বর বউয়ের বেশে। এই আধাঘণ্টার মধ্যে কী এমন হয়ে গেলো! তাড়াতাড়ি সবাইকে সরিয়ে নামজুন ভাইয়ার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, - " কী হচ্ছে এসব?" ও বললো,- " যা দেখছিস তাই হচ্ছে। আমার আর সুহির বিয়ে!" আমি অবাক হয়ে সুহির দিকে তাকাতেই ভাইয়া আবার বললো,- " কাল রাতেই তো আমারে হুমকি দিয়ে গেলি ওরে বিয়ে করার জন্য, আজ এতো অবাক কেন হচ্ছিস?" - " তুমি নাকি ওরে পছন্দ করোনা, ওকে বিয়ে করবানা -ঐসব তাহলে কী ছিলো! আর আজকে এসবে মা বাবা রাজী কী করে হয়ে গেলো! এই কাপড়ই বা কই পেলে?" এবার নামজুন ভাইয়া হাসতে হাসতে বললো,- " নিজের ভাইরে এখনো চিনলি না রে! আমি যে ইউনিক বাচ্চা সেটা জানিস না! আমি সারপ্রাইজ বিয়ে করবো বলে আগে থেকেই নিজের বিয়ের সব কিনে রেখেছি, মা বাবকেও রাজী করিয়ে রেখেছি।হুহ! আমি যে কত ট্যালেন্ট ছেলে সেটা তোরা কোনদিনই বুঝবি না।" বলেই সুহির কাঁধে হাত দিয়ে ওকে নিয়ে একটা ভাব নিয়ে বসলো।- " সুহি তুইও আমারে বললি না!" আমার প্রশ্নে সুহি বললো,- " আমি নিজেই জেনেছি আধা ঘন্টা আগে! যদি জানতাম এই কাহিনী হবে, তাইলে কাল রাতে হুদাই এতো কানতাম নাকি! তবে এর শাস্তিও নামু পাবে। " বলেই ভাইয়ার দিকে ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকালো।আসলেই ওর শাস্তি পাওয়া উচিৎ। নিজের একমাত্র ভাইয়ের বিয়ে, সেটাও আমার এভাবে জানতে হলো!বিয়ে পড়ানো শেষে জিন আর নামজুন ভাইয়ার অনুরোধে শুরু হলো নাচের আয়োজন। সব ভাইবোনদের এ নাচে অংশ নিতে হবে। যদিও আমি নাচ পারিনা, তবুও আজ আমি নাচবো, আর সেটাও অরণ্যের সাথে। অরণ্য আজ আমার মতোই কালো রঙের শার্ট পরে এসেছে। ওকেও বেশ লাগছে, তবুও আমার চোখ চোরের মতো সেই হবি ভাইয়ের দিকেই তাকাচ্ছে। কি হ্যান্ডসাম লাগছে উনাকে! ঐ হেইকে দেখলাম চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে উনাকে। সদ্য বিবাহিত দুই দম্পতি বাদে বাকী পাঁচ জোড়ার নাচ শুরু হলো, কিন্তু সেই জোড়ায় আমার সাথে হবি ভাইয়ের বদলে আছে অরণ্য। বাকী সুগা আর ইনহা ঘুরে ঘুরে নাচছে। তেয় আর ইউনা তো মাশাল্লাহ, এই এলাকায় ওরা বাদেও যে আরো মানুষ আছে, তা তো বোধয় ভুলেই গেছে। হানা আর জাংকুক দুজনেই নাচ শিখেছে ছোটবেলায়, তাই ওদের নাচ একদম প্রোফেশনালদের মতোই। আর সবচেয়ে ভয়ানক পর্যায়ের নাচ করছে লিয়া আর জিমিন। জিমিনের ঠোঁট ফোলা কিছুটা কমেছে,আর সেটাই এখন সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়। স্টেজে সবার সামনে যদি ভুলেও ওরা নিজেদের আসল কাজটা শুরু করে, তাহলে সোজা আগুন ধরিয়ে দিবে সবাই মিলে। আজ আমি নিজ ইচ্ছাতেই অরণ্যের সাথে নাচতে চেয়েছি, অরণ্য খুব খুশি এতে। আমাদের নাচ দেখে সবাই বেশি খুশি হচ্ছে। অরণ্যের কাঁধে হাত দিয়ে নাচছি আর আড়চোখে হবি ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছি। তার চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে। মনে হচ্ছে এখনি খেয়ে ফেলবে আমায়। আমি পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজ করছি, এমন সময় দেখলাম ঐ হেই চিপকি এসে হবি ভাইকেও টেনে স্টেজে এনে নাচতে লাগলো। এবার শুরু হলো আমার অশান্তি। হবি ভাইয়ের ওপর রেগে থাকার পরেও উনার সাথে কাউকে সহ্য করতে পারিনা। নাচছি অরণ্যের সাথে, আর হা করে তাকিয়ে আছি হবি ভাইয়ের দিকে। হঠাৎই নাচের মাঝে ইউনা একটা জুসের গ্লাস এনে ফেললো হেই এর গায়ে। সাথে সাথেই দুঃখী দুঃখী ভাব করে " সরি হেই!" বলে আবার তেয় এর সাথে নাচতে লাগলো। এটাও যে ও ইচ্ছে করেই করেছে, সেটা আমি জানি। এমনিতেই ও হেইকে সহ্য করতে পারেনা, তার ওপর আমি কষ্ট পাই এমন কিছুই ও মেনে নেয়না। যদিও কাল রাতের ঘটনাটা আমি কাউকেই বলিনি। হেই মুখটা পেঁচার মতো করে চলে গেলো ওয়াশরুমের দিকে। নাচ শেষে সবাই যখন বলছিলো," অরণ্য আর অ্যালোহাকে বেশ মানিয়েছে," তখন মনে একটা পৈশাচিক শান্তি পাচ্ছিলাম। এতবছর এ লোক আমাকে কষ্ট দিয়ে এসেছে, এবার বুঝুক! অবশ্য বুঝবেই বা কি! আমাকে নিয়ে আদৌ উনার কোন অনুভূতি আছে নাকি! দিব্যি তো হেইয়ের সাথে নেচে বেড়ালো! আজও নাচার কারণে শাড়ির কুঁচিটা ঢিলা হয়ে আসছে। খুলে যাওয়ার আগেই তাড়াতাড়ি গিয়ে লেডিস ওয়াশরুমে ঢুকলাম। আর তার সাথে সাথেই ঘটলো.....

চলবে.....

[ বি.দ্রঃ আমার ওয়ানশটগুলো যারা পড়েছেন, তারা হয়তো বুঝতে পেরেছেন আমি সবটুকুই বাংগালী ধাঁচে লিখার চেষ্টা করি। আর সে হিসাবে দয়া করে বিয়ের নিয়মে খ্রিষ্টান / হিন্দু / মুসলিম / বৌদ্ধ বিচার করতে যাবেন না। যেহেতু আমি মুসলিম, তাই অন্য ধর্মের নিয়ম - কানুন তেমন জানিনা। তাই নিজ ধর্মের হিসাবেই সব কল্পনা করে লিখি। আর যেহেতু ফফ জিনিসটা সম্পূর্ণই কল্পনার বিষয়, তাই আশা করি বিটিএস এর সদস্যদের নিয়ে আমার এটুকু কল্পনা কারোর চিন্তায় ব্যঘাত ঘটাবে না। আর আমার লিখায় কোন বিষয় যদি খারাপ লেগে থাকে, নির্দ্বিধায় স্পষ্টভাবে কমেন্টে জানাতে পারেন। হ্যাপি রিডিং }

-Alloha Sarsalmaz




secret admirer (Complete) Where stories live. Discover now