তাও হবি ভাইয়ের খোঁজ নিতে আস্তে করে দরজাটা খুলে যা দেখলাম, তাতে আমি সেখানেই জ্ঞান হারালাম। দেখলাম-
হবি ভাইয়ের রুমে ওপরে ফ্যানের সাথে উড়না বেঁধে ঝুলছে হানা। সে হাত পা গুলো প্রচণ্ড বেগে ছোঁড়াছুড়ি করছে। এ দৃশ্য দেখার পর আমি নিজের ওপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি। "হানাআআ" বলে এক চিৎকার দিয়ে সেখানেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম।যখন আমার জ্ঞান ফিরলো, আমার বা পাশে হবি ভাইকে বসা দেখলাম। তার ভ্রুকুটি আর বারবার কপালে আঙুল ঠোকা দেখেই বুঝতে পারলাম সে খুবই চিন্তিত। মাথা ঘুরিয়ে ডানে তাকাতেই দেখলাম আমার পাশে হানা শুয়ে ঘুমিয়ে আছে। আমরা হবি ভাইয়ের রুমে, আর ঘরের দরজা বন্ধ। কিছুক্ষণ আগের কথা মনে হতেই পাগলের মতো হানার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম। হবি ভাই আমাকে হানার ওপর থেকে সরিয়ে সোজা করে শুইয়ে দিলেন। এবার আমি বললাম,
- " কী হয়েছিলো হানা হবি ভাই? " আমার কথায় হবি ভাই বললেন,
- " সেসব পরে বলা যাবে। তোর শরীর ভালোনা। চুপ করে ঘুমা।" বলেই উনি উঠে যেতে নিলে আমি উনার হাতটা খপ করে ধরে বললাম,
- " প্লিজ হবি ভাই! বলুননা হানার কী হয়েছিলো? বাড়ির কেউ কি জানে এ ঘটনার কথা?" হবি ভাই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার আমার পাশে বসে বললেন,
- " তোর চিৎকার শুনেই আমি এখানে আসি। আর এসে দেখি হানার গলায় দড়ি। আর কিছুক্ষণ দেরী হলে...। যাই হোক, এখন সব ঠিক আছে। ও একটু ঠিক হলে সব জানা যাবে। প্রায় দু-ঘন্টা পর তোর জ্ঞান ফিরেছে অ্যালোহা, তোর বিশ্রাম নেয়া জরুরী।" কিছুক্ষণ আগেই এতো বকাঝকা দেয়া লোকটার এতো কেয়ার দেখে আগের সব রাগ যেন উবে গেলো মন থেকে। চুপ করে শুয়ে হানার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছি, কী এমন ঘটলো যে এই ছোট্ট মেয়েটা এতো বড় একটা পদক্ষেপ নিয়ে নিলো! কেমন বোন আমি, যে সারাক্ষণ পাশে থেকেও ওর ভেতরের এতো দুঃখের বিষয়ে টের পেলাম না! চোখ বেয়ে পানি পড়ে বালিশ ভিজে গেছে। এমন সময় হবি ভাই এসে পেছন থেকে আমার কাঁধে হাত রাখলেন। চোখ মুছে ফিরে তাকাতেই মুখের সামনে স্যুপভর্তি একটা চামচ তুলে বললেন,
- " হা কর।" আমি মুখটা সরিয়ে নিয়ে বললাম,
- " আমার এসব ভালো লাগেনা, খাবোনা আমি। " চামচটা মুখের সামনে থেকে সরিয়ে মাথাটা প্রায় ৩মিনিটের জন্য নিচু করে রাখলেন। যখন মাথা তুলে তাকালেন আমার দিকে, আমি অবাক হয়ে গেলাম। হবি ভাইয়ের চোখ দেখে মনে হচ্ছে এখনি গলগল করে রক্ত পড়া শুরু হবে, এতোটাই লাল হয়ে আছে। আবার স্যুপের চামচটা আমার মুখের সামনে তুলে একদম শান্ত কণ্ঠে বললেন,
- " হা কর অ্যালোহা।" আজ প্রথমবারের মতো ভয়ে না, কেন যেন প্রচুর মায়ার কারণে নিজের অনিচ্ছা স্বত্বেও স্যুপটা খেয়ে নিলাম। যে মানুষটার মুখের ওপর না শব্দ আজ অব্দি কেউ করেনি, আমিও না,আজ সেই মানুষটাকে সোজা খাবোনা বলার পরেও এতোটা শান্ত থাকতে দেখে আমি অবাক হচ্ছি। উনার দিকে তাকালেই আমার প্রচণ্ড মায়া লাগছে কেন যেন। পুরো বাটির স্যুপ যে কখন শেষ করে ফেলেছি তা নিজেও জানিনা। কী থেকে কী হয়ে গেলো! কেন এই হানা এমন করলো! এখনো হানা ঘুমাচ্ছে। আর ঐদিকে পুরো বাড়ির মানুষ ছাদে আনন্দ করছে। এতোক্ষণ অনেক কষ্টে কান্না চেপে রাখলেও এবার আমি হবি ভাইয়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে জোরে জোরে কান্না শুরু করলাম। কেন যেন আজ নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। মা যখন জানবে হানার এই কথা, তখন কি হবে! হবি ভাইকে শক্ত করে জাপটে ধরে কাঁদছি, এমন সময় মনে হলো হবি ভাই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। উনার আস্কারা পেয়ে আমার কান্নারা যেন লাগামছাড়া হয়ে গেলো। বেড়ে গেলো কান্নার গতি। এবার হবি ভাই আমার মাথাটা উনার বুক থেকে তুলে অস্থির হয়ে বললো,
- " মাথা ব্যথা করছে অ্যালোহা? খুব কষ্ট হচ্ছে? তুই চুপ করে শুয়ে একটু ঘুমা, আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।" এ কি সেই হবি! কী হয়েছে উনার! অসুস্থ হানা, অথচ উনি সেই কখন থেকে আমাকে নিয়েই পড়ে আছেন! আমি বালিশে মাথা দিতে গেলেই হবি ভাই টান দিয়ে আমার মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে এসে আমার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললেন,
- " এখন আর কোন চিন্তা নয়।চুপ করে ঘুমা। এখন যদি একবার মুখ খুলিস তো.." আমি আজ আর উনার অবাধ্য হলামনা। চুপ করে উনার কোলে ঘুমিয়ে পড়লাম।
YOU ARE READING
secret admirer (Complete)
Fanfictionআসসালামু আলাইকুম। এটি সম্পুর্ণ কাল্পনিক গল্প। কারো সাথে মিল পেলে লেখক বা পোস্ট দাতার কোনো দোষ নেই। ভুল গুলো ক্ষমা সুলব দৃষ্টিতে দেখবেন ff : sceret admirer jung hoseok ( jhope) Writer -Alloha Sarsalmaz গল্পটা আমার লেখা নয় আমার এক বড় আপুর লেখা।...