লেখা : নীলা মনি গোস্বামী
কয়েক মিনিট পর হঠাৎ করেই আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেলো। ইরা মুখ টিপে হেসে বলল : - " কি বাছা,বিশ্বাস হলো এইবার? "
তোতলাতে তোতলাতে বলে উঠলাম - " কি ছিল এটা দোস্ত? এটা কি সত্যিই ঘটেছে? নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি?? "
স্বপ্ন দেখছিস তুই। চিমটি কেটে দেখ। ব্যাথা পাবি না। বলেই জোরসে একটা চিমটি কেটে দিল আমার হাতে।
চিৎকার দিয়ে উঠলাম ব্যাথায়। হতচ্ছারি মেয়েটা বড্ড পাজি। এক চিমটিতে চামড়া তুলে ফেলেছে আমার।- তোর হাতের ওটা কি?
নীরা একগাল হেসে জবাব দিল - " জোজাক। ম্যাজিক্যাল লিকুইড। ইউনিকর্ন ব্লাড, স্যামনিক মাছের অশ্রু, তিনচোখ ওয়ালা মুরগীর ইউরিন দিয়ে বানানো এটা। জিনিসগুলা যোগার করতে অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল আমাদের। দাদির রেসিপি বই দেখে বানানো। শুধুমাত্র যারা আমাদের মত ডাইনি, তাদের ওপরই এটা প্রভাব ফেলে। তুমি একজন জাদুকরনী, সেজন্যই একটু আগে তোমার অবস্থা এমন হয়েছিল। সাধারন মানুষের ওপর এটার কোন প্রভাবই পড়ে না।
আসলে তোকে দেখেই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে তুই আমাদেরই একজন। তোমার কপালের ঐ কাঁটা দাগটাই তোমাকে চিনিয়ে দিয়েছিল। আমাদের প্রত্যেকের একটি চিহ্ন থাকে - যা আমাদের পরিচয় প্রকাশ করে। "
ইরা উল্লসিত হয়ে হাততালি দিয়ে বলে উঠল - " চল তাহলে সেই এক্সপেরিমেন্টটা করেই ফেলি,যেটা দেকেছিলাম দাদির বই এ।""কিন্তু এর আগে ওর ভেতরের শক্তিগুলাকে জাগিয়ে তুলতে হবে। বুঝতে হবে নিজেকে। চিনতে হবে নিজেকে। শিখতে হবে অনেক কিছু। অনেক কাজ বাকি আমাদের " - ইরাকে থামিয়ে বলে উঠল নীরা।
এতক্ষন হা করে শুনছিলাম ওদের কথা। এইবার মুখ খুললাম।- কি বলছিস তোরা এসব? আমি তো কিছুই। বুঝতে পারছি না।
" ব্যাপারটা তাহলে খুলেই বলি তোকে। " - বক্তৃতা দেয়ার ভঙ্গিতে বলে উঠল নীরা।
"যাদুবিদ্যার প্রতি মানুষের আগ্রহ সেই আদিমকাল থেকে। অতিন্দ্রিয় ও প্রাকৃতিক শক্তিকে বশ করার বিদ্যা এটা। নিজের প্রয়োজনে আর কৌতুহল থেকে মানুষ আবিষ্কার করেছিল নানান কৌশল আর মন্ত্রতন্ত্র। বহুবছর সাধনা করে মানুষকে এসব অর্জন করতে হতো।
তবে হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ জন্ম থেকেই এসব শক্তি নিয়ে পৃথিবীতে আসে। আমরা সৌভাগ্যবান। আমরা এসব ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছি। সাধারন মানুষ যা পারে না, আমরা তা পারি। প্রকৃতি আমাদের সে ক্ষমতা দিয়েছে। আমরা মানুষের মনের কথা বুঝতে পারি। আমরা ভবিষ্যত দেখতে পারি। আমরা অন্যভূবনের অশরিরীদের অস্তিত্ব বুঝতে পারি। দেখতে পারি।কথা বলতে পারি। আমরা শূন্যে ভাসতে পারি, স্পর্শ না করেই যেকোন জিনিস নাড়াচাড়া করতে পারি। আরও অনেক শক্তি আছে আমাদের। শুধুমাত্র জাগিয়ে তুলতে হয়,ব্যাবহার করতে জানতে হয়,চিনতে হয় নিজেকে।
কিন্তু অন্যভূবনের ওরা চায়না আমরা সে ক্ষমতা অর্জন করি। ওরা ধ্বংস করে দিতে চায় আমাদের। এজন্যই সেদিন তোমার প্রতিচ্ছবি মারতে চেয়েছিল তোমাকে । কিন্তু পারেনি। তোমার ভেতরের শক্তিটা ওকে বাঁধা দিয়েছিল। তোমাকে ধ্বংস করতে এসে সে নিজেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল সেদিন।দাদির সংগ্রহে অনেকগুলা আদিম পুথিপত্র ছিল।ছিল নানান রকম পাথর, যাদিসামগ্রী, পবিত্র জল,দুর্লভ মন্ত্র। ঘাটাঘাটি করতে করতে হঠাৎ সেদিন এক্সপেরিমেন্টটার খোঁজ পেয়ে গেলাম আমরা। যে এক্সপেরিমেন্ট বানিয়ে দিবে আমাদের সর্বশক্তিমান। অমর। আমরা তখন যা ইচ্চে তাই করতে পারবো। চাইলেই বদলে দিতে পারবো অতীত- বর্তমান - ভবিষ্যৎ। কেউ বাঁধা দিতে পারবে না আমাদের। কিন্তু তার আগে খুঁজে বের করতে হবে চার নম্বর ডাইনিটাকে। যাকে ছাড়া অসম্পূর্ন আমাদের চক্র। "
আঁতকে উঠলাম আমি। চার নম্বর ডাইনি?????
চলবে.......
YOU ARE READING
প্রতিচ্ছবি
Paranormalইহা একটি প্যারানরমাল গল্প।ডাইনীদের নিয়ে লিখা এই গল্পটি পড়ে মাঝে মাঝে চমকে উঠবেন পাঠকরা,মাঝে মাঝে ভয় পাবেন।আবার হালকা পাতলা রোমান্সের স্বাদও পেয়ে যাবেন। দুই খন্ডের এই গল্পটি ধারাবাহিকভাবে পোস্ট করবো আমি। 😊