লেখা : নীলা মনি গোস্বামী
বুঝলাম মৃত্যু আসন্ন। টের পেলাম কিছু একটা পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে আমার। ওটার হিম শীতল নিঃশ্বাস আমার ঘাড়ের ওপর এসে পড়ছে। ওটা গা থেকে একটা বিদঘুটে গন্ধ ভেসে আসছে। অনেকটা মাংস পোড়ার গন্ধ।
কপালের কাটা দাগটা হঠাৎ চিন চিন করে উঠল। চোখের সামনের সব অন্ধকার হয়ে গেল। তারপর আর কিছু মনে নেই।যখন জ্ঞান ফিরল, তখন নিজেকে হাত - পা বাঁধা অবস্থায় আবিষ্কার করলাম। আমি নাকি মানসিকভাবে অসুস্থ!! বদ্ধ উন্মাদিনী। ফারিহা আর কাজের মহিলাটাকে নাকি আমি মেরেছি নিজের হাতে!!!
চিৎকার করে ওদের বার বার বললাম সব কাহিনী। কেউ মানল না। কেউ শুনল না আমার কথা। মাকে দেখতে পেলাম। এক কোনে বসে চোখ মুছছে। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল কয়েক ফোটা পানি।
চিৎকার করে বললাম - " বিশ্বাস কর মা।আমি এমন কিছু করি নি। আমি পাগল না। "মা উঠে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। চোখের পানি গুলো মুছে দিল শাড়ির আঁচল দিয়ে। তারপর কানের কাছে ফিস ফিস করে বলল, " আমি সব জানিরে মা। বিশ্বাস করি তোর কথা। কিন্তু আমি অসহায়। ওরা কেউ বিশ্বাস করবে না আমাদের। বাঁচতে হলে তোকে সারাজীবন পাগল সেজেই কাটাতে হবে। কষ্ট করে মেনে নে মা। সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন। "
তারপর যা হবার, তাই হলো। আমাকে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হলো সেখানে। এখন আমি পাগলদের সাথে থাকি। খারাপ লাগে না। অন্য রকম একটা পরিবেশ। হরেক রকম মানুষ। হরেক রকম কাহিনী। আরাম আয়েশের কোন কমতি নেই এখানে। মা সব কিছুর ব্যাবস্থা করে দিয়েছে। মাঝে মাঝে মা আমাকে দেখতে আসে। বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসে। নিজে হাতে খাইয়ে দেয়। কপালে চুমো এঁকে দেয়। চুলে বিলি কেটে দেয়। মাথায় তেল দিয়ে বিনুনি বেঁধে দেয়। তারপর দু'ফোটা চোখের জল ফেলে চলে যায় মা।
আমার বন্দী জীবনটায় হঠাৎ করেই দু'জন বান্ধুবী জুটে গেলো। ইরা - নীরা। দুই বোন। ওরাও আমার মতই সুস্থ স্বাভাবিক। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কারনে আজ এখানে।
হাসি খুশি চন্ঞল দুটি মেয়ে। একজনের বামগালে বিশাল একটা কাটা দাগ। আমার কপালের কাটা দাগটার মত। জন্মের দাগ ওটা। আরএকজনের নাকের ডগায় কালোমত কুচ্ছিত একটা মোটা তিল। দূর থেকে দেখলে মনে হয় একটা কালো পোকা।
সব সময় কালো কাপড় পড়ে ওর। কালো ওদের প্রিয় রঙ।
বেশ চলছিল আমাদের দিনগুলো। আমার প্রতিদিন একসাথে আড্ডা দিতাম। মজা করতাম।প্রায় সময় ওরা আমার কালো অতিতের কথা জানতে চাইতো। বলতে চেয়েও বলতে পারতাম না আমি। ভয় হতো। যদি ওরাও দূরে সরে যায়!! তাহলে তো আবার একা হয়ে যাবো আমি।
মাঝে মাঝে আমিও জানতে চাইতাম ওদের অতিতের কথা। এড়িয়ে যেতো ওরা বিষয়টাকে। তারপর একদিন সাহস করে বলে ফেললাম সব। যা থাকে কপালে। ইরা - নীরা কতক্ষন হা করে তাকিয়ে থাকলো। তারপর মুখ খুলল নীরা - " তুই যা বলছিস... সব সত্যি? "
- হু। সব সত্যি।
- তুই কি জানিস... তুই আসলে কে?
- জানবোনা কেন?? আমি তপা। না জানার কি আছে? আজব।
- না। তুই তপা না। তুই একটা উইচ। জাদুকরনী। সহজ ভাষায় যাকে বলে ডাইনী।জানতাম ওরাও ভুল বুঝবে আমাকে। সবাই এক। রাগে - দুঃখে মাথা নিচু করে ফেললাম।
-"কী বিশ্বাস হচ্ছে না আমাদের কথা? দাড়াঁও এখনি প্রমান করে দিচ্ছি। " -
কথাটা শেষ করেই শার্টের পকেট থেকে একটা ছোট কাঁচের বোতল বের করলো ইরা। সাদামত ছোট একটা গোল বোতল।বোতলের সোনালী তরলটা ছিটিয়ে দেয়া হলো আমার ওপর।
তারপর হঠাৎ কি যেনো হলো। কপালের ব্যাথাটা চিনচিন করে উঠলো। প্রচন্ড গরমে দরদর করে ঘামতে লাগলাম। তৃষ্ঞায় গলা ফেটে যাবার উপক্রম। দূরে রাখা জগটার দিকে চোখ পড়ল। পানি খেতে হবে।
কথাটা ভাবার সাথে সাথেই দেখলাম জগটা শূন্যে ভেসে চলে আসল আমার কাছে। ঢকঢক করে গিলে ফেললাম জগের সবটুকু পানি। শরীরটা হঠাৎ পাখির পালকের মত হালকা হয়ে গেলো।
এবং অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আমি মাটি থেকে কয়েক হাত উপরে দাঁড়ানো। শূন্যে ভাসছি আমি।।চলবে.......
YOU ARE READING
প্রতিচ্ছবি
Paranormalইহা একটি প্যারানরমাল গল্প।ডাইনীদের নিয়ে লিখা এই গল্পটি পড়ে মাঝে মাঝে চমকে উঠবেন পাঠকরা,মাঝে মাঝে ভয় পাবেন।আবার হালকা পাতলা রোমান্সের স্বাদও পেয়ে যাবেন। দুই খন্ডের এই গল্পটি ধারাবাহিকভাবে পোস্ট করবো আমি। 😊