# প্রতিচ্ছবি
পর্ব - ১৩
লেখা: নীলা মনি গোস্বামী
"তবে সাবধান। ভয় পাওয়া চলবে না কোন কিছুতেই। যা-ই হোক না কেন, মাথায় রাখবে সব মায়া। মায়ার দুনিয়ায় প্রবেশ করবো আমরা একটু পর। সামনের আয়নাটিতে একটু পরেই ভেসে উঠবে নানান দৃশ্য। আমাদের সবার সবচেয়ে বড় ভয়গুলো ভেসে উঠবে চোখের সামনে। আর এই ভয়কে জয় করতে পারলেই খুলে যাবে জাদুর দুনিয়ার অসীম শক্তির দরজা। হয়ে যাবো আমরা সর্ব শক্তিমান।
তবে হ্যাঁ, আর একটা কথা, জাদুর দুনিয়ার দরজা সম্পূর্নরূপে বন্ধ না হওয়ার আগ পর্যন্ত চক্র ছেড়ে উঠা যাবে না কিছুতেই। চোখের সামনে কেউ মরে পরে থাকলেও উঠা যাবে না।নাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। " - একনাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলো ইরা।
একটু যেনো নার্ভাস মনে হলো মেয়েটাকে । মৃদু একটা হাসি দিলাম ওর দিকে তাকিয়ে। প্রতিউত্তরে সেও মৃদু হাসি উপহার দিলো।।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে তখন। একঝাঁক কাক তাড় স্বরে চিৎকার করতে করতে উড়ে গেলো মাথার উপর দিয়ে। অনেকক্ষন ধরে বসে আছি। কিছুই হচ্ছে না। বিরক্তি ধরে গেছে। যখন ভাবছিলাম উঠে যাবো, ঠিক তখনি ঘটলো ঘটনাটা। কি যেনো একটা নড়চড়ে উঠলো আয়নার ভেতর। কালোমত ধোয়ার কুন্ডলী। একটু পর পর সাপের মত মোচরাচ্ছে। চোখ সরাতে পারছি না ওটার ওপর থেকে। সম্মোহিত হয়ে গেছি আমি। হঠাৎ কি হলো বুঝলাম না । চক্কর দিয়ে উঠলো মাথার ভেতরটা । দরদর করে ঘামতে লাগলাম।কপালের কাটা দাগটাও চিন চিন করে ব্যাথা করতে লাগলো ।ক্রমশ ব্যাথা বাড়ছে। চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে এলো আমার। তারপর আর কিছু মনে নেই।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে সম্পূর্ন অজানা অচেনা একটি পরিবেশে আবিষ্কার করলাম। চারদিকে ভাঙাচোড়া বাতিল আসবাবপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।দেয়ালের ওপর কিসব যেনো লেখা। নখের আচড়ের দাগ। বিদঘুটে দমবন্ধ করা পরিবেশ। ধীরে ধীরে উঠে বসলাম আমি। আশেপাশে কেউ নেই। বিশাল পুরাতন ঘরটায় আমি একা। অসহায় লাগছে ভীষন। চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে। তলপেটটাও ভীষন ভারী হয়ে আছে। হঠাৎ অনুভব করলাম কি যেনো একটা তীব্রভাবে নড়েচড়ে উঠলো আমার পেটের ভেতর। চমকে উঠলাম আমি।ভয়ে ভয়ে হাত রাখলাম পেটের উপর। ঐতো ওটা নড়ছে আমার পেটের ভেতর। থেমে থেমে আবার লাথিও দিচ্ছে। প্রেগনেন্ট আমি!!!!!
আতঙ্কে শিউড়ে উঠলাম আমি। এ কি করে সম্ভব!!!!!! কুমারী মেয়ে আমি।।।। আর কিছুক্ষন আগেওতো ছাদের ওপর বসে ছিলাম আমি। ইরা - নীরা আর রাফিদের সাথে । তাহলে এই অবস্হা কিভাবে হলো আমার!! নাকি স্বপ্ন দেখছি।। স্বপ্নই হবে । সান্তনা দিলাম নিজেকে। কিন্তু তবুও কেনো যেনো মন মানছে না ।
হঠাৎ ঘাড়ের পেছনে কারো গরম নিঃশ্বাসএর অস্তিত্ব অনুভব করলাম।তিন আঙ্গুল দিয়ে কে যেনে স্পর্শ করলো আমার ঘাড়ে। চমকে ঘুরে তাকালাম পেছনে। এবং আতঙ্কে শিউরে উঠলাম আবার। পেছনের মানুষটা দেখতে পুরো আমার মত। মনে হলো আয়নায় দেখছি নিজেকে । আমার প্রতিচ্ছবিকে । ধীরে ধীরে দু'হাত বাড়িয়ে দিলো ওটা আমার দিকে। হিসহিসে গলায় বলে উঠলো -"ফিরিয়ে দে আমার বাচ্চা আমাকে। "
শিউরে উঠলাম আমি। দৌড়ে পালাতে চাইলাম। ওটা পিছন থেকে জাপটে ধরলো আমাকে । গা গুলিয়ে উঠলো ওটার শীতল হাতের স্পর্শে।বাতাসে হাত -পা ছুড়তে লাগলাম ছাড়া পাওয়ার জন্য। অবশেষে হাতের বাধন একটু আলগা হলো। কোনমতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড় লাগালাম বাইরের দিকে। পেছনে ফিরে তাকানোর আর সাহস হলো না । দরজাটা খোলাই ছিলো ।
বাইরে তখন ফকফকে রোদ। নির্জন মরুভূমি। উত্তপ্ত পরিবেশ। গরম বালিতে পা রাখা যাচ্ছে না। ভীষন কষ্ট হচ্ছে। তবুও কষ্ট করে হেঁটে যাচ্ছি। পুড়ে যাচ্ছে নরম চামড়া। দূরে কোথাও সমুদ্রের গর্জন শোনা যাচ্ছে। হাটার গতি বাড়িয়ে দিলাম। যদি কোন সাহায্য পাই সে আশায়।
রাস্তা আর শেষ হয় না। মনে হচ্ছে যেনো অনন্তকাল ধরে হেটে চলেছি। এদিকে পেটের ব্যাথাটাও পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। খেয়াল করলাম দ্রুত বড় হচ্ছে আমার পেট। আস্বাভাবিক ভাবে ঝুলে যাচ্ছে ওটা নিচের দিকে। আর হাঁটা সম্ভব না । ধপ করে পেট চেপে ধরে বসে পড়লাম আগুন গরম বালির উপর। টের পেলাম পেটের এপাশ থেকে ওপাশে কিযেনো একটা দ্রূত দৌড়ে চলে গেলো। কেঁপে উঠলাম আমি।
কি ছিলো এটা!!!
তীব্র ব্যাথায় চোখ বন্ধ হয়ে এলো আমার। ঠিক তখনি তীব্র একটা কান ফাটানো বিষ্ফোরনের শব্দ শুনতে পেলাম। এবং অবাক হয়ে দেখলাম ফেটে গেছে আমার পেট। রক্তে ভেসে গেছে চারদিক। পেটের ভেতর থেকে লতাপাতার মত কি যেনো বের হয়ে আসছে ধীরে ধীরে। অনেকটা অক্টোপাসের মত। আবার দেখতে কিছুটা মানুষের মত। পাখির মত ডানাও আছে ওটার। গায়ের চামড়াগুলো মাছের আঁশের মত। কানগুলো বাদুরের মত। ধারালো নখ।কপালের মাঝখানে চোখা একটা শিং। কি কিম্ভূতকিমাকার।।।
পুরোপুরি বের হয়ে আসলো ওটা আমার পেটের ভেতর থেকে। স্থির হয়ে একটানা দেখতে লাগলো আমাকে। কি শীতল দৃষ্টি। শিউরে উঠলাম আমি। তারপর হঠাৎ উড়ে এসে বসলো আমার ক্ষতবিক্ষত পেটের ওপর। ওটার শূচালো নখের থাবায় ছিড়ে নিলো আমার পেটের নাড়িভুড়ি। টেনে ছিড়ে ফেললো আমার হৃদপিন্ড। তারপর এক থাবা বসিয়ে দিলো আমার চোখের ওপর। চোখ বন্ধ করে ফেললাম ভয়ে। ওটার শূচালো নখ আমার চোখের পাতা ভেদ করে ঢুকে গেলো চোখের মনির ভেতর। মারা যাবো এখন আমি। আফসোস হতে লাগলো নিজের এমন পরিনতির জন্য। কিন্তু পরক্ষনেই ইরার বলা কথাটা মনে পড়ে গেলো। সে বলেছিলো এসব মায়া ছাড়া আর কিছুই না। সাহস ফিরে এলো মনের ভেতর। দূর হয়ে গেলো সব ভয়। টের পেলাম কে যেনো আমার হাত ধরে ঝাকাচ্ছে। নাম ধরে ডাকছে আমার।তড়িৎ গতিতে চোখ খুলে তাকালাম। ঐতো ইরা আমার হাত ধরে বসে আছে। পাশে রাফি আর নীরা। স্বস্তির একটা নিশ্বাস ফেললাম আমি। তাহলে এটা স্বপ্নই ছিলো।
হাতে মৃদু একটা চাপ দিলো। উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিগ্গেস করলো, "ঠিক আছিস তুই? "
কিছু বললাম না। আমার চোখ তখন আয়নার দিকে। মৃদু একটা কোমল আলো ঠিকড়ে বের হচ্ছে আয়নাটার ভেতর থেকে। আবছা আবছাভাবে দেখা যাচ্ছে একটি দরজার ছায়া। বিশাল নাকশা করা দরজা। ধীরে ধীরে খুলে যাচ্ছে দরজাটা। আনন্দে চিৎকার করে উঠলো নীরা। খুশি হয়ে উঠলাম আমরা সবাই।
এবং ঠিক তখনি ঘটলো অঘটনটা। কোথা থেকে যেনো ছাদে চলে এলো ছেলেটি।হালকা পাতলা গড়নের ফর্সা সুদর্শন যুবক। খোঁচা খোঁচা দাড়ি। অনবরত লালা ঝড়ছে তার মুখ থেকে। তার এক হাতে বিশাল একটি দা ধরা। আর অন্য হাতে একটি কাটা মুন্ডু। ওটা থেকে টপ টপ করে তাজা রক্ত ঝড়ছে। মর্জিনা খালার মাথা ওটা। ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো নীরা।কেউ বললে দিলো না, তবু ও বুঝে গেলাম "ছেলেটা কে। পাশের রুমের খুনি সাইকোটা।
মূহুর্তের মধ্যেই বিশৃঙ্খল হয়ে উঠলো পরিবেশটা। ভয়ে জমে গেছে সবাই। কাটা মুন্ডুটা দোলাতে দোলাতে চক্রের একদম কাছে চলে এলো সে। তারপর মুন্ডুটা ছুড়ে মারলো আয়নার দিকে। আয়না ভেদ করে দরজার ওপাশে ছিটকে পড়লো কাটা মুন্ডুটা। তারপর নীরার চুলের মুঠি ধরে টেনে হিঁচড়ে বের করে নিয়ে এলো চক্রের ভেতর থেকে। ভেঙে গেলো আমাদের চক্র।
চলবে.........

ESTÁS LEYENDO
প্রতিচ্ছবি
Paranormalইহা একটি প্যারানরমাল গল্প।ডাইনীদের নিয়ে লিখা এই গল্পটি পড়ে মাঝে মাঝে চমকে উঠবেন পাঠকরা,মাঝে মাঝে ভয় পাবেন।আবার হালকা পাতলা রোমান্সের স্বাদও পেয়ে যাবেন। দুই খন্ডের এই গল্পটি ধারাবাহিকভাবে পোস্ট করবো আমি। 😊