পর্ব-১০

111 5 0
                                    

#প্রতিচ্ছবি 

লেখিকা : নীলা মনি গোস্বামী

পর্ব :১০

বিস্ময়ে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আমার। রাশিদ ওটা। বিড়ালের মত পা টিপে টিপে কখন যে পিছনে এসে দাঁড়িয়েছিলো, বুঝতে পারিনি একদম। বিড়বিড় করে মন্ত্র আওড়াচ্ছে সে আর চারপাশে একটা একটা করে পাথর রেখে দিচ্ছে। একসময় পাথর ছিটানোর কাজ শেষ হলো। রাফিয়ানের মৃতদেহের কাছে গিয়ে বসলো সে ।  টান দিয়ে ছিড়ে ফেলল তার ডানহাতটা।তারপর চামড়া ছাড়িয়ে নিলো। কুচি কুচি করে কেটে ফেলতে লাগলো  লাগলো মাংসগুলো।  মাংসগুলো ছিটিয়ে দিলো আমার চারপাশে, মাংসখেকো বাঘকে ধরার জন্য যেমন ফাঁদ পাতা হয়, ঠিক তেমন অবস্হা মনে হচ্ছিলো । 
থমকে দাঁড়ালো সে। তারপর লম্বা একটা শ্বাস নিলো।
হতবাক আমি। কি হচ্ছে, ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। আমার থেকেও বেশি অবাক রাফি।রাগত স্বরে বলে উঠলো," কি হচ্ছে এসব রাশিদ?  "

- উৎসর্গ দিবো একে। থুয়ুলরা ছিড়ে খুড়ে খেয়ে ফেলবে একে। তারপর তৃপ্ত হয়ে আশির্বাদ করবে আমাদের। আবার ফিরে পাবো আমরা আমাদের হারানো শক্তি।

- কি যা-তা বলছিস তুই.? মাথা ঠিক আছে? 

- হ্যাঁ। একদম ঠিক আছে আমার মাথা। ঐতো আসছে ওরা। আর মাত্র কয়েকটা মূহুর্ত। তারপরই বদলে যাবে সব। ফিরে পাবো আমরা আমাদের শক্তি। তারপর হয়ে যাবো অসীম শক্তিশালী আর এই মেয়েটার স্হান হবে নরকে।

কথাটা শেষ করেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো রাশিদ। রাগে লাল হয়ে গেছে রাফির মুখ। আর আমি অসহায়ের মত বসে আছি মাটিতে।হাত - পা বাঁধা অবস্হায়।
দমকা একটা বাতাস এসে ঝটকা মারলো মুখের ওপর। হাজার হাজার শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছি। বড়ই কর্কশ সে শব্দ। কানে তালা লেগে গেলো সে শব্দে। মাংসপোড়া গন্ধ ভেসে এলো নাকে।

" ঐতো এসে পড়েছে ওরা। " -রাশিদের উত্তেজিত কন্ঠ শোনা গেলো। উত্তেজনায় রিতিমত হাপাচ্ছে ছেলেটা।

দ্রুত গতিতে উঠে দাঁড়ালো রাফি। জোড়ে একটা ধাক্কা দিলো সে রাশিদকে। ছিটকে পড়লো সে আমার পাশে। বৃত্তের মাঝে। টেনে হিচড়ে আমাকে বৃত্ত থেকে বের করে ফেললো রাফি। দ্রুত হাতে খুলে দিলো হাত পায়ের বাধন। তারপর আমাদের চারপাশে এঁকে নিলো ছোটখাটো একটি চক্র। লবনের চক্র।  শয়তানের হাত থেকে বাঁচার নিরাপত্তা চক্র।

রাশিদের অবস্হা তখন করুন। নিজের পাতানো ফাঁদে নিজেই ফেসে গেছে সে। হাত জোড় করে বলতে লাগলো, "দোহাই লাগে..... দিয়ে দে এই মেয়েটাকে। নাহলে মেরে ফেলবে ওরা আমাকে। তুই কি চাস..  এই সামান্য মেয়েটার জন্য জানে মারা পড়ুক তোর ভাই??? "

একটু যেনো হাসলো রাফি। ভয় পেয়ে গেলাম। খামচে ধরলাম ওর ডানহাতটা। করুন স্বরে বলে উঠলাম, " প্লিজ ওর কথা শুনো না। আমি মরতে চাই না। " কেঁদে দিলাম আমি।
মলিন একটা হাসি ফুটে ওঠলো ওর মুখে। চোখের পানি মুছে দিয়ে মাথাটা চাপড়ে দিলো । হাতে আলতো একটা চাপ দিয়ে বললো, "বোকা মেয়ে, ভয় নেই। শুনছি না আমি ওর কথা। "
তারপর রাশিদের দিকে তাকিয়ে বললো, " এখনও সময় আছে।দৌড়ে চলে আয় আমাদের কাছে। প্রানে বেঁচে যাবি। "
আর উপায় নেই। রাশিদও বুঝে গেছে ব্যাপারটা। দৌড়ে আসতে চাইলো সে আমাদের কাছে। কিন্তু অনেক দেরী হয়ে গেছে ততক্ষনে।। ওরা এসে পরেছে।  হাজার হাজার কোটি কোটি থুয়ুল চক্রাকারে ঘুরপাক খাচ্ছে ওর মাথার ওপর। ছোট্ট শিশুর দেহ।দূর থেকে  দেখলে কেমন যেনো মায়া মায়া লাগে। গুলু গুলু গালগুলো একটু টেনে দিতে ইচ্ছা করে। কোলে তুলে নিতে মন চায়। কিন্তু ভালো মত একটু খেয়াল করলে ওদের চেহারার বিভৎসতা  টের পাওয়া যায়। কেমন যেনো একটা হিংস্রতা লুকিয়ে আছে ওদের চেহারার মাঝে। ধীরে ধীরে ঢেকে ফেলল ওরা রাশিদকে। এখন আর ওকে ভালো মত দেথা যাচ্ছে না। মরন চিৎকার শুনতে পেলাম ছেলেটার। সে চিৎকার কাপন ধরিয়ে দেয় বুকের ভেতর। খারাপ লাগলো অনেক। একসময় পছন্দ করতাম ছেলেটাকে আমি।

আমাদের সামনেই মেরে ফেললো ওরা রাশিদকে। আমরা কিছুই করতে পারলাম না।শুধু অসহায়ের মত তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম।

কয়েক ঘন্টা পর.......

সকাল হয়ে গেছে। রাশিদের রক্ত মাংস দিয়ে তৃপ্তি মিটিয়ে চলে গেছে অপদেবতাগুলো ।  কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো রাফি।। তার সামনে দুই ভাইয়ের মৃতদেহ। শান্তনা দেয়ার মত ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আসলে এমন মূহুর্তে শান্তনা দেয়ার মত কোন ভাষা থাকে না।ওর পাশে  বসে পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলামগভীর মমতায়।

হঠাৎ ঝড় শুরু হলো। প্রচন্ড বাতাস বইতে লাগলো  বাতাসের তোড়ো শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো প্রচুর।দেখতে পেলাম দূর থেকে ধোয়ার কুন্ডলীর মত কালচে কি যেনো একটা এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে। দ্রুতবেগে কাছে চলে আসছে ওটা।

বুকটা কেঁপে উঠলো অজানা আশঙ্কায়। আবার নতুন কি বিপদ এসে জুটলো কপালে ......... কে জানে .....!!! 

চলবে...

প্রতিচ্ছবি  Tempat cerita menjadi hidup. Temukan sekarang