#৭

584 19 0
                                    

#আলোছায়া
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_৭

স্নিগ্ধ বিকেল। প্রকৃতি মনের সকল মাধুরি মিশিয়ে সেজেছে নিজের মনের মতো করে। আকাশের বুকে মেঘেরা খেলছে। কখনো তারা নীল আকাশের উপরে ভেসে বেড়াচ্ছে আবার কখনো আলতো করে সরে যাচ্ছে সেখান থেকে। পরিবশে অদ্ভুত সুন্দর এক মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিয়ে হালকা বাতাস ভেসে বেড়াচ্ছে চারিদিকে। সেই বাতাসে মিশে রয়েছে মিষ্টি এক সুভাস। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বুক ভরে খানিকক্ষণ শ্বাস নিয়ে আকাশের সৌন্দর্য উপভোগ করলো উল্লাসী। তারপর হাতের কফির মগ নিয়ে চেয়ারে শরীর এলিয়ে দেবার আশায় কয়েক কদম পিছিয়ে পড়লো সে। আজও সে ক্লাস করেনি। কোচিংয়ে ঢুকে অস্বস্তিকর এক পরিবেশে পড়ে ফিরে এসেছে নিজ গৃহে। তবে এভাবে আর কতদিন? লোকটি কেনো এমন অদ্ভুত ব্যবহার করছে? সে কি বুঝেও বুঝে উঠতে পারছে না তার কোনটি করা উচিৎ আর কোনটি নয়? কফির মগে চুমুক দিয়ে লম্বা একটি শ্বাস ছাড়লো উল্লাসী। টি-টেবিলের উপর থেকে ফোন উঠিয়ে ডায়েল করলো জ্যোতির নাম্বারে। অসহায় এই মুহূর্তে কেনো যেনো বারেবারে তাকেই শুধু মনে পড়ছে তার..

"তোমার শরীরের কী অবস্থা?"
"চলছে মোটামুটি।"
"খাওয়াদাওয়া ঠিক ভাবে করতে পারছো?"
"হু.."
"আর বাবু? ও কতদিন পর আসবে?"
ফোনের ওপাশ থেকে একদন্ড থেমে জ্যোতি বললো,
"কিছুক্ষণের মাথায় তুমি একই প্রশ্ন দুইবার করেছো উল্লাসী। তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও যা বলতে দ্বিধা কাজ করছে তোমার? তবে আমি বলবো নিঃসংকোচে তুমি বলতে পারো। এতটা স্পেস আমি তোমায় একয়বছরে অবশ্যই দিয়েছি!"
"হ্যাঁ.. তা দিয়েছো।"
"তবে এত কীসের জড়তা?"
উল্লাসীর দিক থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ছাড়লো জ্যোতি। খানিকটা নড়েচড়ে বসে দৃঢ় গলায় বললো,
"তুমি একটা জিনিস খেয়াল করলে দেখবে আমাদের আলাদা হবার পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকলেও এক হবার পেছনের কারণ ছিল একটি। আমাদের মেয়ে, মৌমি। তাই বলে যে আমরা আমরা মনের বিরুদ্ধে সংসার করছি তেমনটা নয়। আমি আমার ভুলগুলো শুধরোচ্ছি, মাজহার তার ভুল গুলো শুধরোচ্ছে। হয়তো এই ভুলগুলো আমরা আজীবনই শুধরোতে থাকবো। তারপরও আমরা ভালো আছি। কেনো জানো? আমি যেমন ওকে দিচ্ছি তেমনটা পাচ্ছিও। ও আমায় নিয়ে ভাবছে.. আমাকে ভালো রাখতে প্রতিটি কদম দেখে শুনে ফেলছে। একটি সম্পর্কে যে জিনিস না থাকলে চলেইনা সেটি হলো গুরুত্ব.. একে অপরকে দেয়া গুরুত্ব। আই সেই সুত্রটি ধরেই কিন্তু আমরা এগোচ্ছি।"
এই একই কথা তো জাভেদ ভাইও তাকে বলেছিল। তবে কি আসলেই লোকটি খারাপ চায়না তার? বুকের ভেতটা কেঁপে কেঁপে উঠতেই ঢোক চেপে কফির মগ টেবিলে রাখলো উল্লাসী। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে রেলিঙের দিকে পা বাড়িয়ে বললো,
"তোমার কী মনে হয়? তোমার কাছ থেকে বড় ভাই কোনো কথা গোপন করলে সেটা কোন ক্যাটাগরিতে পড়বে? গুরুত্ব দেয়ায় নাকি গুরুত্বহীনতায়?"
"তার আগে আমি বলে নেই গোপন করা শব্দটি নিয়ে দুটো কথা। আগে এই গোপন শব্দটি নিয়ে আমার এলার্জি ছিল.. তবে আজকাল সে এলার্জিটা কমেছে। এখন আমি এই গোপন শব্দটির নতুন এক নাম আবিষ্কার করেছি।"
"নতুন নাম?"
"হ্যাঁ.. গোপনীয়তার অপর নাম যত্ন। সিক্রেট ইকুয়েল টু কেয়ার!"
"কীভাবে?"
"তোমার দিকটা বিবেচনা করে সে যদি তোমার কাছে একটি কথা লুকোয় তবে তাকে তো আমি তোমার প্রতি যত্নবানই বলবো তাই না?"
মাথা নেড়ে অশান্ত গলায় উল্লাসী বললো,
"আমার দিক বিবেচনায় হোক বা না হোক! স্ত্রী হিসেবে আমি কি সবটা জানার অধিকার রাখি না?"
"অবশ্যই রাখো.. তবে একটা মজার ঘটনা শুনবে? তোমাদের ওখান থেকে আসার সময় মাজহার আমার জন্য একটি শাড়ি নিয়ে এসেছে। তবে ও সেটা আমাকে এখনো দেখায়নি। গোপন রেখেছে। হয়তো রাতে জানাবে বলে প্রহর গুনছে।"
"আমাকে উনি কখনোই এমন সারপ্রাইজ দেয় না জানো?"
বিষন্ন মনে উল্লাসী জবাব দিতেই ভ্রু কোঁচকালো জ্যোতি।
"মেসবাহর কথা বলছো?"
"হ্যাঁ.. আর কে আছে আমার? অথচ সেও বোঝে না আমায়। বোঝে না আমি কখন কী চাই তার কাছ থেকে।"
উদ্বিগ্ন হলো জ্যোতি। উল্লাসীকে আস্বস্ত করার চেষ্টায় বললো,
"মেসবাহ আগে থেকেই ইন্ট্রোভার্ট স্বভাবের মানুষ। সেই সাথে সারাদিনের ব্যস্ততা তো রয়েছেই।"
"কিন্তু আগে গম্ভীর হলেও কথাবার্তায় রসকষ ছিল। এখন নেই.."
"তাহলে তো খারাপ.. আমি কি কিছু বলবো ওকে?"
একমুহূর্ত ভেবে উল্লাসী বললো,
"না.. থাক। এমনিতেই কাল থেকে রেগে আছে আমার উপরে।"
"তবে তুমি তোমার ক্ষোভগুলো ওর কাছে প্রকাশ করো। খুলে বলো ওকে.. তারপর দেখো মেসবাহর দিক থেকে কোনো এফর্ট পাও কিনা! তোমাদের মাঝে বয়সের পার্থক্যটা অনেক। যেখানে আমরা দুজনেই পূর্ণবয়স্ক হয়েও ভুল করে ফেলেছিলাম.. সেখানে তোমাদের সম্পর্কটি আরও জটিল। সময় দাও এর পেছনে। তবে চুপ করে থেকো না। সকলেই যে তোমার নীরবতার অর্থ বুঝবে তেমন নয়!"
জ্যোতির কথার যৌক্তিকতা খুঁজতে জাভেদের লেখা চিরকুটের কথাগুলো স্মরণ হতেই তার কথা জ্যোতিকে জানাবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেলো উল্লাসী। জ্যোতি তাকে প্রায়সময়ই ভালো পরামর্শ দেয়। যা তাকে জীবনটা দেখার ধরনে প্রায়সময়ই পরিবর্তন আনে। আবার মাঝেমাঝে তার মতোই বুঝদার হবার চেষ্টায় সে অনুসরণের চেষ্টাও করে তাকে। তাহলে সেই জ্যোতিকেই সবটা খুলে বললে সমস্যা কোথায়? সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে উঠে জাভেদের কথা জ্যোতিকে জানানোর পায়তারা করতেই বন্ধ হয়ে গেলো তার ফোন।

আলোছায়া Where stories live. Discover now