#১১

497 10 1
                                    

#আলোছায়া
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_১১

জানালার পর্দার ফাঁকে রোদ্দুর উঁকি দিয়ে দিয়ে উঠছে। বাকি দিনগুলোর মতো পাখির কলরব কানে না এলেও কানে আসছে চারপাশের কোলাহল ধ্বনি। তীব্র সেই শব্দে চোখমুখ কুঁচকে চোখের উপরে হাত মেলে দিল উল্লাসী। কাল মাঝরাতে বাড়িতে ফিরেছে তারা। বাইরে খানিকক্ষণ ঘুরেফিরে রেস্টুরেন্টে বসে খাবার ঝামেলা সেরে গাড়ি নিয়ে তারা গিয়েছিল ঢাকার বাইরের দিকে। সেখান থেকে ফিরতে ফিরতেই বেজে গিয়েছিল রাত একটার উপরে। গভীর এক নিঃশ্বাস ছেড়ে আলসেমি কাটাতে নিস্তেজ শরীর ঝাকিয়ে দ্রুত বেগে উঠে পড়লো উল্লাসী। চোখ কচলাতে কচলাতে পাশ ফিরে মেয়ের দিকে তাকাতেই তার কানে এল করিমুন্নেসার গলার স্বর।

চুলে হাত খোঁপা করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এল উল্লাসী। আশেপাশে নজর বুলিয়ে মেজবাহকে খোঁজার চেষ্টা করতেই রান্নাঘর থেকে করিমুন্নেসা বললেন,
"ভাইজান নাই.. বাইরে কোনহানে জানি গেল!"
"কখন গেছে? আর তুমি কখন এসেছো?"
"আমাগো কি বেলা অব্দি পইড়া পইড়া ঘুম পারার সুযোগ আছে? আইছি আমি সক্কালেই.. ভাইজান দরজা খুইলা দিছে।"
হাই তুলে উল্লাসী দেয়াল ঘড়ির দিকে নজর দিতেই চোখজোড়া তার গোলগোল হয়ে এল। সর্বনাশ! বেলা বাজে একটা? অথচ সে আর তার মেয়ে আরামসে ঘুমিয়েই যাচ্ছে!
"মৈত্রীর বাবা খেয়ে বেড়িয়েছে তো? কী করেছিলে সকালের জন্য?"
"রুটি.. ভাইজান রুটি করতে কইছিলো। তয় আমি কিন্তু একবার আপনারে ডাকবার চাইছিলাম। ভাইজান বললো থাইক। আজ তো শুক্কুরবার.. পারুক একটু ঘুম।"
"শুক্রবার তাতে কী? আমার যে কোচিংয়ে পরীক্ষা আছে সে খেয়াল তার আছে?"
মেসবাহর কাজে বিরক্ত হয়ে শোবার ঘরের দিকে এগুলো উল্লাসী। মৈত্রীকে ডেকে উঠিয়ে ব্রাশে পেস্ট ভরিয়ে দিয়ে সে আবারও এল রান্নাঘরে।
"দুপুরের জন্য কী করছো?"
"কিছুই না.. ভাইজান বললো কোনহানে জানি দাওয়াত আছে।"
"আশ্চর্য! উনি বললো আর তুমি কিছুই করলে না? উনার না হয় দাওয়াত আছে, আমাদের তো নেই! তো কি আমরা না খেয়েদেয়ে থাকবো?"
"খোদা! আপনারা না খাইয়া থাকবেন কেন! আপনারাও সাথেই যাইবেন! স্বামীরে দাওয়াত দিব আর বউ মেয়েরে দিব না! কোনকার ফকিন্নি দাওয়াত এইডা?"
"তুমি চুপ থাকো.. আর ফ্রিজ থেকে মুরগীর মাংসটা বের করে ভিজিয়ে রাখো। না.. আমি আর এসব নিয়ে পারিনা! একজনের হুজুগ উঠলো নিয়ে চলে গেল! আবার হুজুগ উঠলো দাওয়াত নিয়ে পড়লো! এদিকে আমার পড়াশোনা যে গোল্লায় যাচ্ছে সেদিকে তার কোনো তাল নেই!"
বিরক্তে চোখমুখ কুঁচকে উল্লাসী বিরবির করতেই পাশ থেকে করিমুন্নেসা ঠোঁট বাঁকিয়ে বললেন,
"আপনে ভাইজানরে বকতেছেন কেন? ভাইজের মতো স্বামী কালে কালে প্রার্থনা কইরা তারপর মাইয়াদের কপালে জুটে। আপনার না চাইতেই জুটছে জন্য কি হেলাফেলা করবেন?"
"মায়ের চেয়ে কি মাসীর দরদ বেশি? যত্তসব! আর একটাও কথা বলবে না তুমি আমার সাথে।"
রাগ দেখিয়ে হন্য পায়ে আবারও ঘরে ফিরে এসে মৈত্রীকে সেভাবেই ওয়াশরুমে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেজাজ সপ্তমে উঠে গেল উল্লাসীর।
"তুই এখনো ব্রাশ করিসনি? তোকে যে আমার কী করতে মন চায় মাঝেমাঝে!"
মেয়ের পিঠে একটি চড় বসিয়ে দিয়ে তাকে ব্রাশ করিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের করে নিজেও ফ্রেশ হয়ে নিল উল্লাসী। তারপর দ্রুত এসে খুলে বসলো বইখাতা। পড়ার চাপে মাথার ভেতরটা ঘুরছে তার। রাতের সেই ভ্রমণ শেষে বাড়ি ফিরে ক্লান্ত শরীর নিয়ে পড়ার প্রতি ঝোঁক না আসায় ভেবেছিল ভোরে উঠেই সবটা কমপ্লিট করে ফেলতে পারবে। অথচ সেসবে এখন সেগুড়ে বালি! বাকি এই অল্প কিছু সময়ের মাঝে এখন কী করবে সে? নিজেই গোছগাছ হবে নাকি একবার বই দেখবে?
"ঘুম কেমন হলো?"
উল্লাসীর উদ্দেশ্যে মেসবাহ প্রশ্নখানা করে বিছানায় এসে বসতেই তার উপর চড়ে বসলো উল্লাসী। তার পরনের সবুজ রঙের টি-শার্টের কলার টেনে ধরে বললো,
"ভোরে ডাকেননি কেনো?"
"এই! কী হচ্ছে? নামো.. মৈত্রী আছে।"
বলে উঠলো মেসবাহ।
সে কথায় কান না দিয়ে ক্ষোভ দেখিয়ে উল্লাসী আবারও বললো,
"ভোরে কেনো ডাকেননি?"
"কেনো আবার? তুমি আরাম করে ঘুমোচ্ছিলে বলেই ডাকিনি।"
উল্লাসীকে টেনে বিছানায় নামিয়ে দিয়ে মেসবাহ নিজের বাহুডোরে জড়িয়ে নিল তাকে। তারপর খুব সাবধানে তার চুলের খোঁপা খোলার চেষ্টায় তাতে দাঁত লাগিয়ে বললো,
"সেদিন পুষ্পদের বাড়ি গিয়ে অভিযোগ করলে না চুল কেনো খাচ্ছি না? এসো, আজ তোমার চুল খেয়ে খেয়ে টাক করে দেই।"
"ছি! এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলবেন না প্লিজ।"
গলার স্বরে পরিবর্তন এনে উল্লাসী কথাখানা বলায় ভ্রু কোঁচকালো মেসবাহ।
"আহা! মেয়েটাকে ভালোবাসি না বলে এত সমস্যা! আর আজ বেশি ভালোবাসতে চাইছি বলেও সমস্যা?"
"আমি কখনোই এমন পঁচা ভালোবাসার কথা বলিনি।"
"এটাও বিশ্বাস কর‍তে হবে আমার? উল্লাসী মানেই যে বড় আদর আর ছোট আদর চাইবার গোডাউন সেটা কি আমার অজানা?"
লাজুকলতা পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়তেই চোয়ালের পেশীতে অদ্ভুত এক টান অনুভব হতেই মেসবাহর বুকে মুখ লোকালো উল্লাসী।
"ধুত্তোরি! আপনি না!"
"কী?"
"জানি না.. ছাড়ুন। রেডি হতে হবে। কোচিংয়ের দেরি হয়ে যাবে।"
"আজও কোচিংয়ে যাবে?"
"আজ কেনো যাবো না? আপনার কাছ থেকে এই পঁচা ভালোবাসা পাওয়ার জন্য?"
"বললাম না তোমার মনে সারাদিন এই ঘোরে?"
"ধুর!"
মেসবাহকে ছেড়ে উঠে পড়লো উল্লাসী। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে মৈত্রীকে টেলিভিশনের দেখে খাবার খেতে দেখে স্বস্থির সাথে সে আলমারির দিকে এগুতেই উঠে বসলো মেসবাহ।
"শিতলের ব্যাপারটা তো কাল রাতে বললে না আমায়!"
"কোন ব্যপার?"
"তুমি যে ওর জন্য মেয়ে দেখেছো.."
"আমি?"
"হ্যাঁ.. আজ সবাই আসছে অথচ তুমিই কিনা কোচিংয়ে যাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছো! মুন্নি ভাবি জানলে মন খারাপ করবে না?"
বুকের ভেতরটা হঠাৎ আঁতকে উঠলো উল্লাসীর। খোলা আলমারির পাল্লা বন্ধ করে সে দ্রুত পায়ে এগুলো মুন্নি সরকারের ফ্ল্যাটের দিকে।

আলোছায়া Unde poveștirile trăiesc. Descoperă acum