#আলোছায়া
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_২৭আকাশ বেয়ে পড়ছে ঝিরিঝিরি পানি। মুষলধারের সেই বৃষ্টি এখন আর নেই। চারপাশটায় গভীর নীরবতা বিরাজ করলেও খানিকক্ষণ পরপর দমকা হাওয়া এসে জানিয়ে দিচ্ছে নিজেদের অস্তিত্ব। এর মাঝেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো মুবিন। আজ সে চৈতালির সাথে কাটিয়েছে বেশ কিছু সময়। দুজনের মাঝের সেই প্রাণ জুড়োনো ভালোবাসা খুঁজতে বারেবারে উঁকি দিয়েছে অতীতের মিষ্টি কিছু স্মৃতির পাতায়। তবে কোথাও কি পেয়েছে তার সন্ধান?
বাসার সামনে এসে সিএনজি থামতেই ভাড়া মিটিয়ে তা বিদায় করে দিল মুবিন। ধীর পায়ে গেইটের দিকে এগিয়ে দারোয়ানকে কয়েকবার ডেকে উঠায় ভেতর থেকে গেইট খুলে তিনি হাই উঠিয়ে বললেন,
"স্যার ওই আপা আসছিলো। মেলাকক্ষন আপনার জন্য দাঁড়াইয়া ছিল।"
এই ভয়টাই পাচ্ছিলো সে। অস্থির মন বারেবারে বলছিলো পুষ্প আসবে তার খোঁজে.. অবশ্যই আসবে। বুকের ভেতরটা ধুকপুক করে উঠতেই ভেতরের দিকে এগুলো মুবিন। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে দরজা খুলে ঘরের ভেতরে ঢুকতেই পায়ে বাজলো কিছু। কপাল কুঁচকে কয়েক কদম এগিয়ে এল সে। ঘরের আলো জ্বেলে পাশ ফিরে চাইতেই দেখতে পেল একটি প্যাড।প্যাডটি উঠিয়ে সময় নিয়েই চরণ তিনটি কয়েকবার আওড়ালো মুবিন। তারপর তা টেবিলে রেখে পরনের ভেজা শার্ট খুলতে খুলতে এগুলো ওয়াশরুমের দিকে। পুষ্প.. যার উপস্থিতি তাকে আনন্দ দেয়। যার গলার স্বর তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সুখের এক জগতে৷ যার একটা ফোন কলে সে শান্তি পায়। যার পাশে চলতে গিয়ে তুচ্ছ মনে হয় পুরো পৃথিবীকে। কেনো এমন হয় তার সাথে? সে নতুন করে পুষ্পকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিল বলে? তবে কি মেজভাই ঠিক বলেছিল?চৈতালির প্রতি তার যা রয়েছে তা শুধুমাত্রই অপরাধবোধ? দায়িত্ববোধ?
গোসল সেরে টাউয়েল বেলকনিতে মেলে দিয়ে একটি সিগারেট ধরালো মুবিন৷ অপরাধবোধ, দায়িত্ববোধ থেকে চৈতালিকে আপন করে নেয়াটা কি আসলেই তাকে ঠকানো হবে? নাকি চৈতালির প্রতি তার ভালোবাসায় ধুলো পড়েছে? যা সময়ের সাথেসাথে একসময় ঠিকঠাক হয়ে যাবে? সিগারেটের লাল আগুনের দিকে তাকিয়ে ছোট একটা শ্বাস ছাড়লো সে। চৈতালি এখন একজনের মা। আর দশটা মায়েদের মতো তার চিন্তাভাবনায় এখন সর্বপ্রথম আসে চমক। তবে কি এখানে সে স্বার্থপরতার পরিচয় দিচ্ছে? শুধু তার ছেলের কষ্ট নিয়ে ভেবেই তার কাছে ফিরে এসেছে চৈতালি? একটাবারও কি ভাবছে না মুবিনের ভেতরে কী চলছে? সে কেমন আছে বা সে কী চায়? শুধু বারবার কেনো বলছে সে নিজে ভালো নেই? কেনো তাকে বারবার বিব্রত করতে পুষ্পর কথা তুলছে? কেনো তাকে বারবার অপরাধী প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছে? তবে কি সে শুধু নিজের জন্য অবলম্বন খুঁজছে? নিজের ছেলের একটি সুস্থ স্বাভাবিক ভবিষ্যতের জন্য আঁকড়ে ধরতে চাইছে তাকে? মনে চলা প্রশ্নগুলোর নেতিবাচক জবাব আসায় লম্বা আরেকটি দম ছাড়লো মুবিন। চৈতালির এমন ভাবনা রাখাটা কি ভুল? চৈতালি তাকে ভালোবাসে.. মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। তবে কেনো সে তাকে নিয়ে ভাবতে পারেনা সুন্দর গোছানো একটি জীবনের স্বপ্ন? এখন তো তার নেই বিবাহ বন্ধনে জড়ানো সেই পিছুটানও! কিন্তু পুষ্প? তার দোষ কোথায়?