#২২

451 15 1
                                    

#আলোছায়া
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_২২

কোচিংয়ে যাবার জন্য তৈরি হয়ে বইপত্র গুছিয়ে ব্যাগে ভরে নিল উল্লাসী। ফোনের সুইচ অফ করে ড্রয়ারে রেখে এগুলো সদর দরজার দিকে। মনমেজাজ অসম্ভব খারাপ তার। মেসবাহর কারণে আজ না সে মৈত্রীর স্কুলে যেতে পারলো! আর না রশ্নির মাকে শোনাতে পারলো দুটো কথা। মহিলাটি দিনকে দিন এত বাজেবাজে কথা ছড়াচ্ছে যে তার দু'গালে দুটো চড় মারলেও কম হবে। চোখমুখে একরাশ ক্ষোভ নিয়ে বিচলিত মনে দরজা খুলতেই তার সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়লো মুন্নি সরকার। নিজেকে কোনোমতে সামলে তিনি উল্লাসীর কাঁধে হাত রেখে বললেন,
"শীতল বিয়ে করে বাসায় বউ নিয়ে এসেছে।"
ভ্রু কোঁচকালো উল্লাসী।
"মানে? শীতল ভাই? বিয়ে করেছে?"
"হ্যাঁ.. আয় না! আয়।"

বিভ্রান্তের মতো ছটফটিয়ে বেড়ানো মুন্নি সরকারের পিছুপিছু তাদের ফ্ল্যাটে ঢুকতেই ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো উল্লাসী। ঢোক চেপে সে দু'কদম এগুতেই পাশ থেকে মুন্নি সরকার বললেন,
"দুই মিনিটের দেখায় ওদের প্রেম ভালোবাসা হয়ে গেল.. আজ আবার বিয়েও করে ফেললো! ও আল্লাহ! আর কী দেখার বাকি আছে আমার? এই দুই চোখ দিয়ে আর কী কী দেখতে হবে?"
"তুই বিষয়টিকে নরমালভাবে নে। আমরা দুজনেই প্রাপ্ত বয়স্ক। যা করেছি বুঝেশুঝে চিন্তাভাবনা করেই করেছি।"
বলে উঠলো শীতল।
"এই তোমার চিন্তাভাবনা? তুমি জানো না আমার ওর বোনের সাথে কী তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে? তাছাড়া দুইদিনের পরিচয়ে তুমি বিয়ের মতো একটা সিদ্ধান্ত নিলে কী করে?"
"ওর বোনের সাথে যাই ঘটেছে না কেনো সবটাই ছিল একটা ভুল বোঝাবুঝি। আর প্রেম ভালোবাসা? তা তো এক পলকের দেখায়ও হয়ে যায়।"
নাক কুঁচকে উল্লাসীর দিকে চেয়ে মুন্নি সরকার বললেন,
"দেখেছিস কান্ড? প্রেমে পড়ে সে কবি সাহিত্যিক হয়ে গেছে! আর মেয়ে তোমাকেও বলি! তুমি কী দেখে আমার ভাইকে বিয়ে করলে শুনি?"
পাপিয়া মেঝের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তা শীতলে স্থানান্তর করে ক্ষীণ স্বরে বললো,
"আপু আমার বিয়েশাদি নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা ছিল না.. আমাকে সেদিন এখানে এনেছিলও জোর করে। ভেবেছিলাম দেখে এসে বলবো ছেলেকে আমার পছন্দ হয়নি।"
"তো তুমি ওর ভেতর কী এমন দেখে ফেললে যে নিজের সিদ্ধান্তও পরিবর্তন করে ফেললে? তুমি জানো আমার ভাই বেকার? কিছুই করেনা?"
মাথা নাড়লো পাপিয়া।
"জানি.."
"তাহলে? সুস্থ আছো তুমি?"
"ওর কিছুই করতে হবে না। আমি মাস গেলে নিজেই যথেষ্ট স্যালারি পাই। যা দিয়ে আরামসে আমাদের চলে যাবে দিন।"
বিস্ময়ে চোখজোড়া গোলগোল করে ফেললেন মুন্নি সরকার।
"বোকা মেয়ে বলে কী!"
"আমাদের সমাজের নিয়মে শুধু ছেলেরাই জব করবে আর মেয়েদের ঘর সামলাতে হবে কেন? আর কোথাও কোথাও মেয়েরা জব করলেও কেন ছেলেদের পজিশন থেকে সবসময় নিচুতে থাকতে হবে? স্বামীর চেয়ে স্ত্রী উঁচু পজিশনে থাকলে কি স্বামীর জাত যাবে? নাকি স্বামী ঘরে বসে থাকলে স্ত্রীর জাত যাবে? আমাদের ক্ষেত্রে হোক না পরিবর্তন! আমরা না হয় আমাদের মতো করে ভালো থাকি।"
"এভাবে ভালো থাকা যায় না। তুমি দেশের বাইরের রীতিনীতি দেখে হয়তো ভাবছো এসব আমাদের দেশেও সম্ভব। তবে আমাদের দেশে এসব সম্ভব নয়। প্রতিটি মুহূর্তে তোমাকে সমাজের মানুষ চোখে হাত দিয়ে দেখিয়ে দেবে তোমার স্বামী নিষ্কর্মা। তখন দেখবে তুমিও মানতে পারবে না এসব। প্রচুর অশান্তি হবে। তাছাড়া ভাইয়া তো.."
থেমে গেলেন মুন্নি সরকার। শীতলের জীর্ণশীর্ণ মুখের দিকে তাকিয়েই কষ্টে বুকটা ভরে উঠলো তার।
"জানি.. ও ড্রিংকস করে। তবে ও আমায় কথা দিয়েছে যে ও আর এসব ছোবে না। হ্যাঁ, জানি বলা যতটা সহজ করে দেখানো তার চেয়ে হাজারগুণ কঠিন। তবে আমি মনে করি নিজের প্রতি ওর আত্মবিশ্বাসটা বাড়লে বা ওকে বোঝার মতো একটি মানুষ পাশে থাকলে ও ঠিকই পারবে।"
পাপিয়ার কথায় পুরো ঘরজুড়ে থমথমে পরিবেশ বিরাজমান হওয়াই কয়েক কদম এগিয়ে সোফায় এসে বসলো উল্লাসী। পাপিয়ার কথা এতক্ষণ যাবৎ মুগ্ধতা নিয়ে শুনলেও সকলের মাঝের নীরবতা ভেঙে সে বললো,
"আপনি এত সুন্দর করে যুক্তি দিয়ে কথা কীভাবে বলেন? আপনার বলা সবগুলো কথাই আমার মনে ধরেছে। কেউ যদি আপনার পাশে না থাকে আমি আছি। কী করতে হবে বলুন? আপনার গোঁফওয়ালা বোনকে মানাতে হবে?"
বলেই জিহ্ব কাটলো উল্লাসী। দ্রুত ঠোঁটের কোণায় হাসি ফোটালো পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আশায়।
"ইয়ে মানে পিংকি ভাবি.. উনাকে মানাতে হবে তো?"
"হ্যাঁ.."
"প্যারা নেই। আমি আর মুন্নি ভাবি মিলে ঠিকই একটা রাস্তা বের করে ফেলবো।"
মুন্নি সরকারের দিকে তাকালো উল্লাসী। তবে তার দিক থেকে কোনো সাঁড়া না পেয়ে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সে। পাপিয়াকে মনে ধরেছে তার। তাছাড়া জ্ঞানী জ্ঞানী চেহারা করে মহিলাটি যে কথাগুলো বললো তাও তো ফেলনা নয়!
"আমার কোচিং শেষ করে আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে.. তবে চিন্তা নেই। আমি সাথে করে আপনাদের বাসর সাজানোর ফুলটুল নিয়ে আসবো। তবে কথা হচ্ছে আমরা জিনিসটা করবো একটু ইউনিকভাবে। বাসর ঘরে আগে গিয়ে বসে থাকবে শীতল ভাই। আর আমরা বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দেবো। তারপর পাপিয়া আপুকে আমাকে ঘড় সাজানোর বকশিস দিয়ে বাসর ঘরে ঢুকতে হবে। বলুন রাজী?"
উল্লাসীর কথায় মুন্নি সরকার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালেও পাশ থেকে হেসে উঠলো পাপিয়া। উল্লাসীর দিকে হাত বাড়িয়ে সে বেশ উচ্ছাসিত গলায় বললো,
"ডান.."

আলোছায়া Donde viven las historias. Descúbrelo ahora