#আলোছায়া
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_৩১ (অন্তিম পর্ব)বেলা বাজে বারোটা। সকালের পাখিদের কোলাহল বন্ধ হলেও থেমে নেই জনমানুষের জীবন। নতুন দিনের মধ্যাহ্নে কর্মব্যস্ত মানুষেরা লেগে পড়েছে তাদের নিত্যকার কাজে। আশেপাশের সৃষ্ট এই কোলাহল বাসে কিংবা ভিড়ভাট্টায় সর্বদা কানে স্বাভাবিক ভাবে লাগলেও আজ কাঁটার মত বিঁধছে উল্লাসীর কানে। অসহনীয় লাগছে চারিপাশের এই কোলাহল। হাসপাতালের করিডর ঘিরে পায়চারী করা ছেড়ে দিল উল্লাসী। এক নজর কেবিনের দিকে দিয়ে পাশ ফিরতেই হন্য পায়ে মুবিনকে তাদের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো সে। তবে তার এই স্বস্তি দ্বিগুণ বেড়ে গেল মুবিনের পেছনে থাকা চৈতালির উপস্থিতিতে। মনের ভেতরটায় এক উৎফুল্লতা ছেয়ে যেতেই কয়েক কদম এগিয়ে চৈতালির হাত শক্ত করে চেপে ধরলো সে। চোখমুখে তার এক তৃপ্তির ঢেউ খেলে যেতেই নজরে পড়লো খানিকটা দূরে মুবিনকে নিয়ে এগুনো মেসবাহর দিকে। তৎক্ষনাৎ বুকের ভেতরটায় কূ ডেকে উঠলো তার। তবে কি চৈতালিকে সাথে করে নিয়ে আসায় মুবিনকে বকবে মেসবাহ? ভাইয়ে ভাইয়ে ঝামেলা হবে? দ্রুত চৈতালির হাত ছেড়ে দিল উল্লাসী। কপালে চিন্তার রেখা ফুটিয়ে দ্রুত পায়ে এগুলো সে মেসবাহদের দিকে।
"এটা কি রাইট প্লেস চৈতালিকে সাথে নিয়ে আসার? তুই তোর লাইফের ডিসিশন নিয়েছিস.. এন্ড দ্যাটস এনাফ। বাট ইউ হ্যাভ নো রাইট টু হার্ট সামওয়ান ওর হার ফ্যামিলি।"
ভাইয়ের কথায় মাথা নীচু করে মেঝের দিকে দৃষ্টি দিল মুবিন।
"আমি তাহলে চৈতালিকে কোথায় রেখে আসতাম?"
ভ্রু কোঁচকালো মেসবাহ।
"হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করে দিয়েছে?"
"হ্যাঁ.."
"তাহলে বাসায় রেখে আসতি!"
"আমার মাথায় কাজ করেনি ভাইয়া। আর না আমার এতটা ধৈর্য ছিল।"
"কেনো ধৈর্য ছিল না? পুষ্প কে? পুষ্প মরুক বাঁচুক তাতে তোর কী?"
"থামুন না! এখন এসব থাক.."
দুই ভাইয়ের মাঝে কথোপকথনে বাঁধ সাধলো উল্লাসী। মিনতির সুরে মেসবাহর উদ্দেশ্যে কথাখানা বলতেই প্রতিত্তোরে বেশ ঝাঁজালো স্বরে মেসবাহ বললো,
"আমি ওর কাজে রীতিমতো অবাক! চৈতালিকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিস, পুষ্পকে ছেড়েছিস, পুষ্পও তোর মানসম্মানের খাতিরে নীরব আছে। তাহলে তুই আবার কেনো নিজেকে বেজ্জতি করতে চৈতালিকে এখানে নিয়ে এসেছিস?"
"আসলে সময়টাই ওমন ছিল। আমরা মৈত্রীকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে যখন বাসায় ফেরার প্লান করছিলাম তখন যেমন পুষ্পর ভাবির কল পেয়ে একদন্ড অপেক্ষা করিনি তেমন মুবিন ভাইও করেনি। পরিস্থিতিটাই অন্যরকম ছিল.. মুবিন ভাই হয়তো ব্ল্যাংক হয়ে পড়েছিল। কী করবে ভেবে না পেয়ে দ্রুত হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল।"
"ব্ল্যাংক কেনো হয়ে পড়বে? তাও এমন একটি মেয়ের জন্য যাকে জীবন থেকে সরালেই নিস্তার পায় সে?"
মেসবাহর প্রশ্নে ব্যাকুলতা নিয়ে মুবিন বললো,
"নিস্তার পাইনা ভাইয়া.. আমি নিস্তার পাই না। আমি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলেও পুষ্প বা চৈতালি কেউ আমার জন্য কষ্ট পাক তা কখনোই চাই না।"
"কিন্তু মুবিন ভাই আপনাকে তো একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হবে.. কষ্ট একজনকে পেতেই হবে। তবে আপনার এই সিদ্ধান্তহীনতা কারণে আপনারা তিনজনই কষ্ট পেয়ে যাচ্ছেন। আর বেচারি পুষ্প তো..."
বুকের ভেতরটা হু হু উঠলো মুবিনের। অসহায় মুখে সে উল্লাসীর দিকে তাকাতেই সে আবারও বললো,
"জ্ঞান ফিরেছে। জ্বরের পরিমাণ বেশি হয়ে পড়ায় অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল।"