#আলোছায়া
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_২০চমক একটু ঘুমের মতো আসায় পাশের বেডের এক মহিলাকে তাকে দেখার অনুরোধ করে করিডোরে বেরিয়ে এল চৈতালি। দুপুরে হঠাৎ চমক অচেতন হয়ে পড়ায় সুরুজ চাচাকে ডেকে আনার পরই চমকের গায়ের জ্বর মাপা হয়েছিল। জ্বর উঠেছিল ১০৩° ফারেনহাইট। সাথেসাথেই তার সাহায্যে গ্রামের একটি হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হলেও তাদের পরামর্শে সন্ধ্যায় ভর্তি করা হয়েছে সদর হাসপাতালে। দিয়ে রাখা হয়েছে স্যালাইন। তবে সময়ের সাথেসাথে তার অবস্থা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ডাক্তার তাকে ঢাকায় নিয়ে যাবা পরামর্শ দিয়েছেন। তাছাড়া গণরুমের যে বেডটিতে চমক রয়েছে সেটিও বেশ অপরিষ্কার। মশা-মাছির আড্ডা লেগে রয়েছে চারিদিকে।
করিডোরের এককোনায় দাঁড়িয়ে বারবার বেজে উঠা ফোনটি রিসিভ করলো চৈতালি। আশেপাশে লোকজনের উপস্থিতি দেখে ক্ষীণ স্বরে বললো,
"বলো.."
"এখন কী অবস্থা চমকের?"
"ডাক্তার ধারণা করছে ডেঙ্গু হয়েছে। তবে ডেঙ্গু শনাক্তর রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা না করে উনারা বলছে ঢাকায় নিয়ে যেতে।"
"তবে নিয়ে এসো.. এখনো বসে আছো কেনো?"
"চাচা তো কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।"
"ছেলে যেহেতু তোমার, আগ্রহটাও তোমাকেই দেখাতে হবে। কিন্তু উনারা এমনটাই বা কেনো করছে?"
উদ্বিগ্ন স্বরে বলে উঠলো মুবিন।
জবাবে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চৈতালি বললো,
"লোকটি যতদিন বেঁচে ছিল তাকে জ্বালিয়েছে। আর আজ যখন উনি মরে গেছেন তখন তার ছেলের দিকে নজর দিয়েছে। ওরা চায়না আমার ছেলেটা সুস্থ থাকুক। আমার ছেলের কিছু হলে সবুজের সম্পদে তো আর কারো হাত থাকবে না। ওদিকে সবুজের চাকরিটাও টুটুলকে দেয়ার চেষ্টা করছে ওরা.. আমার সাথে টুটুলকে জড়িয়ে সম্পত্তির ভাগটা নিজেদের কাছেই রাখতে চাইছে। কিন্তু এদের কি মন নেই? এদের কি ছোট্ট ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়েও মায়া হয়না? কষ্ট লাগেনা?"
ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো চৈতালি। ওড়নায় নিজের মুখটা যথাসম্ভব ঢাকার চেষ্টা করে বললো,
"আমি কী করবো মুবিন? ছেলেটার জ্বর কাল রাত থেকে এলেও বেশ কিছুদিন হলো ও অসুস্থ ছিল। কিছু খেতে চাইতো না। জোর করে খাওয়ালেও বমি করে ভাসিয়ে দিত। প্রস্রাবে সমস্যা হচ্ছিলো। কেমন যেনো নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল ছেলেটা। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি। সারাদিন এটাসেটা নানান কাজ করে যখন রাতে ছেলের পাশে বসেছি তখন আমি এসবে পাত্তা দেইনি। অথচ আজ দেখো এই অবস্থায় আমার পাশে কেউ নেই। ছেলেটাকে ভর্তি করিয়ে নিজেদের নামমাত্র কর্তব্য শেষ করেই চলে গেছে তারা... আমার ছেলেটার কিছু হলে আমি মরে যাবো মুবিন.. জীবন নিয়ে আমার আর কোনো আশা ভরসা নেই তবে আমার ছেলেটাকে আমি প্রচুর ভালোবাসি। ওকেও যদি আল্লাহ আমার কাছ থেকে কেড়ে নেয় তাহলে আমি বেঁচে থাকবো কী নিয়ে?"
চৈতালির আর্তনাদ বুকে এসে লাগায় তাকে আস্বস্ত করতে মুবিন বললো,
"কাঁদবে না.. একদম কাঁদবে না। তুমি চমককে নিয়ে ঢাকায় চলে এসো। তুমি এখন সদরে আছো তাই তো?"
"হ্যাঁ.."
"আমি যদি রফিককে বলে এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেই তাহলে কি তোমার আসতে অসুবিধে হবে? এদিকটার কোনো চিন্তা তোমাকে করতে হবে না। আমি সবটা সামলে নিব।"
বুকের ভেতরের কম্পন ক্রমশ বাড়তেই ঢোক গিললো চৈতালি।
"কিন্তু আমি তো এককাপড়ে বেরিয়েছি। হাতে কোনো টাকা পয়সাও নেই।"
"কিছুই লাগবে না.. আমি রফিককে বলে দিচ্ছি। তুমি আসার প্রস্তুতি নাও।"
চৈতালির কল কেটে তার বাল্যকালের বন্ধু রফিককে কল করে সবটা বুঝিয়ে দিল মুবিন। তারপর গম্ভীরমুখে এসে বসলো বিছানায়। চৈতালির ঢাকায় আসা নিয়ে গ্রামে বাজেভাবে কথা ছড়িয়ে পড়বে। তাদের চরিত্র উঠবে নানান কথা। কিন্তু তাই বলে তো চৈতালির বিপদে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারেনা সে! চৈতালি তার প্রথম ভালোবাসা, তার মুখের হাসি দেখতেই তো একসময় কতটা ছটফট করেছে তার মন!