#আলোছায়া
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_২৬হাসপাতালের রাউন্ড শেষে চেম্বারে এসে বসলো মেসবাহ। চেয়ারে হেলান দিয়ে বুজলো চোখজোড়া। গতরাতের ধকলের রেশ এখনো কাটেনি৷ শরীরের ভেতরটা অস্বাভাবিক এক ব্যথায় ভরে আছে। ইচ্ছে হচ্ছে দ্রুত বাসায় গিয়ে গভীর এক ঘুম দিতে। তবে আরও ঘন্টাখানেক থাকতে হবে তার। জরুরী একটি রিপোর্ট দেখে তারপর বেরুতে হবে হাসপাতাল ছেড়ে। ভেবে লম্বা একটি দম ছাড়লো সে। সোজা হয়ে বসে রফিক মিঞার আনা খানিকক্ষণ আগের চায়ের কাপের দিকে দৃষ্টি দিতেই বেজে উঠলো ফোনের রিংটোন।
"আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আপনি কি ব্যস্ত ছিলেন? বিরক্ত করলাম?"
স্ক্রিনে পুষ্পর নাম দেখে ফোন রিসিভ করলেও কোথাও একটা খটকা লাগছিলো মেসবাহর। তবে পুষ্পর স্বাভাবিক গলার স্বরে তা কেটে গেলো নিমেষে। চায়ের কাপে একবার চুমুক দিয়ে সে বললো,
"ওয়ালাইকুম সালাম। না না.. ব্যস্ত ছিলাম না। কী খবর তোমার? ভালো আছো?"
"আছি ভালো.. আপনার শরীর ভালো?"
"আলহামদুলিল্লাহ। স্যারের শরীরের কী অবস্থা?"
"বাবাও ভালো আছেন। আচ্ছা ভাইয়া, আপনাদের মাঝে কি কিছু হয়েছে? কোনো ঝামেলা হয়েছে আমাদের বিয়ে নিয়ে?"
ভ্রু কোঁচকালো মেসবাহ। চায়ের কাপ হাত থেকে নামিয়ে রেখে উদ্বিগ্ন স্বরে বললো,
"না তো.. কেনো? কিছু হয়েছে?"
"আপনার বাবা গতরাতে ফোন দিয়ে হঠাৎ বিয়ের ডেইটটা এগিয়ে আনতে বললো। আর আজ মুবিন..."
থেমে গেলো পুষ্প। বুকের ভেতরের অস্থিরতা ঢাকার চেষ্টায় কিছুটা সময় নিয়ে অসহায় গলায় আবারও বললো,
"ভাইয়া উনি আমাকে কেনো একথা বললো? আমি বা আমার পরিবার কি ভুল কিছু করেছি? আপনি তো আমার বড় ভাইয়ের মতো। আমার বাবা আপনাকে নিজের ছেলের মতোই দেখে। আপনি অন্তত আমায় বলুন!"
"মুবিন কী বলেছে তোমায়?"
"উনি আমায় বিয়ে করবেন না.."
ঢোক চেপে উঠে দাঁড়ালো মেসবাহ। অনুভব করলো তার চিপের কোণা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে ঘামের ধারা।
"কী হয়েছে ভাইয়া? এই স্টেজে আসার পর উনি আমায় এই কথা কেনো বললো? আমি কি ব্যাংকে একবার যাবো? ভাইয়া কোনো ঝামেলা হলে আমায় খুলে বলুন।"
উৎকন্ঠা নিয়ে বললো পুষ্প।
জবাবে মেসবাহ স্বাভাবিক সুরে বললো,
"কোনো ঝামেলাই হয়নি.. আমার মনে হচ্ছে কোথাও একটা মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে। তুমি কোনো টেনশন করো না। বিয়েশাদিতে এমন খুটিনাটি ঝামেলা হয়।"
"এটা খুটিনাটি ঝামেলা নয়.. আমি যে কী পরিমাণের অস্থিরতার মাঝে আছি তা বলে বোঝাতে পারবো না আপনাকে।"
"আমি দেখছি। আমি বাবা মুবিন দু'জনের সাথে কথা বলেই দেখছি। তুমি একটু অপেক্ষা করো। আর স্যারকে এব্যাপারে কিছু জানিয়ো না।"
গলার স্বর বেশ ভারী হয়ে উঠলো পুষ্পর। মেসবাহর কথার পিঠে সে বললো,
"উনি ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছেন। নিজের দুই লাইনের কথা শুনিয়ে আমার কাছ থেকে কিছুই শোনার প্রয়োজন বোধ করলেন না উনি। উনি এর আগেও আমাকে এতটা হয়রানির উপরে রেখেছিল। তবে তখনও আমি কিছু বলিনি। কেনো যেনো উনার সামনে ঠিকভুল বিবেচনা করে একদম কথা বলতে পারিনা আমি..."
ফোনের লাইন কেটে হাত ঘড়ির দিকে তাকালো মেসবাহ। একটা বেজে কুড়ি মিনিট। আর মিনিট তিরিশেক রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করবে সে। এর মাঝে রিপোর্টটি না এলে রওনা হবে মুবিনের খোঁজে। ফোন যেহেতু তার বন্ধ সেহেতু ফোনে চেষ্টা করে লাভ নেই। এবার যা কথা হবে সবটাই হবে মুখোমুখি৷