#আলোছায়া
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_৬"সবুজ স্যার মারা গেছেন তা আপনি আমায় জানাননি কেনো?"
উল্লাসীর প্রশ্নে কপাল কোঁচকালো মেসবাহ। পুষ্পদের বাড়ি থেকে ঘন্টাখানেক হলো এলেও ক্লান্তি কাটেনি এখনো। সেইসাথে গলার ভেতরটায় হালকা ব্যথাও অনূভব হচ্ছে। পরিশ্রান্ত শরীর নিয়ে ঢুলে পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে বিছানায়। তবে বাড়িতে আসা বাবা এবং ভাইদের সঙ্গ দিতেই সকলের মাঝে বসে থাকতে হচ্ছে চুপচাপ। এরইমাঝে হঠাৎ করে উল্লাসীর মুখ থেকে এমন কথা শুনে হতবিহ্বল হয়ে পড়লো মেসবাহ। খানিকটা সময় নিয়ে চারপাশের পরিবেশ পর্যালোচনা করে ক্ষীণ স্বরে বললো,
"তোমায় কে বলেছে এসব?"
"যেই বলুক! আপনি আমায় কেনো জানাননি সেসব? আমাকে কি মানুষ বলে মনে হয়না আপনার?"
"বাজে কথা বলো না উল্লাসী। তুমি এখনও অনেক ছোট। চারিদিকের ঘটা এটাসেটা সবটা শুনে তা নিয়ে ভাবলে তোমার চলবে না।"
"তো চলবে কীসে? আমাকে আপনি কেনো এখনো বাচ্চা ভাবেন? কেনো আমার সাথে সবটা শেয়ার করেন না?"
শান্ত গলায় মেসবাহ বললো,
"আসলে এটা নিয়ে কথা বাড়াতে চাইনি.. তোমার শুনলে খারাপ লাগবে। তুমি কষ্ট পাবে, পড়াশোনায় মন বসবে না ভেবেই.."
অস্থির সুরে উল্লাসী বললো,
"কিন্তু মুবিন ভাইকে জানানো উচিৎ!"
"আমারও মনে হচ্ছিল জানানো উচিৎ। তবে বাবা যা যুক্তি দিয়েছে তাও ফেলনা নয়।"
"কী যুক্তি দিয়েছেন উনি?"
"চৈতালি নিজের জীবনে এগিয়ে গেছে। তবে কেনো মুবিন পিছুটান নিয়ে তার জীবনটা নষ্ট করবে? পাঁচটা বছর নিয়ে আজ যখন মুবিন নিজের জীবনটা স্বাভাবিক করতে পেরেছে, তখন অতীত নিয়ে জল ঘোলা করার কোনো দরকার আছে বলে মনে হয়না। তাছাড়া মুবিন জানলেই বা কী করবে? সহানুভূতির দুটো কথা ছাড়া আর কিছু করার আছে তার?"
"তাই বলে জানাবেন না? না.. আমি এটা কোনোভাবে মানতেই পারছি না!"
"এইতো! এজন্যই আমি তোমায় কিচ্ছুটি জানাইনি। তোমার পা থেকে মাথা অব্দি সবটা সম্পর্কেই অবগত আমি।"
"আপনি শাক দিয়ে মাছ ঢাকবেন না.. আপনি আমায় শুধু এ-ব্যাপারে নয় আপনার জীবনে ঘটা কোনো ব্যাপারেই কিছু জানান না। কিছুদিন আগে যে আপনার হাসপাতালে প্রেশার বেড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সে ব্যাপারে কিছু জানিয়েছিলেন আমায়? অন্যের মুখ থেকে আমার কেনো সবটা শুনতে হয়? আমার স্বামী অসুস্থ, অথচ আমিই কিনা তা জানি না!"
কপালে চিন্তার রেখা ফুটতেই মেসবাহ বললো,
"কে জানিয়েছে তোমায়?"
"আপনার লাইফের বেটার হাফ.. আরও ভেঙে বলবো? আপনার ইভানা।"
ক্ষিপ্তগতিতে রান্নাঘরে এসে খানিকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো উল্লাসী। মাথার ভেতরটা তার দপদপ করে উঠছে। বুকের ভেতরটা ভারী হয়ে আসছে। মিথ্যা কিছু বলেনি তো জাভেদ ভাই। না মেসবাহ তাকে পাশে বসিয়ে নিজের ভেতরের খারাপলাগা বা ভালোলাগার অনুভূতিগুলো কখনো জানিয়েছে আর না তার কোনো গোপন বিষয় সম্পর্কে তাকে অবগত করেছে। তবে কীসের জীবনসঙ্গিনী সে মেসবাহর? আর কেমনই বা ভালোবাসা তাদের মাঝে? পুরো রান্নাঘরজুড়ে খানিকক্ষণ পায়চারী করার পর লম্বা একটি নিঃশ্বাস ফেলে চুলোয় হাড়ি বসিয়ে তাতে তেল গরম করে পেঁয়াজ, মরিচের টুকরো ছেড়ে দিল উল্লাসী। তা কিছুটা গরম হয়ে বাদামী বর্ণ ধারণ করতেই কুঁড়িয়ে রাখা নারিকেল ঢেলে দিয়ে ভাজতে শুরু করলো। গ্রাম থেকে হাসের মাংস নিয়ে এসেছেন তার শ্বশুর। বায়না ধরেছে তার মেজো বৌমার হাতে খাবেন। অথচ সেই মেজো বৌমার কাছ থেকেই যে তার মেজো ছেলে সবকিছু গোপন করে সে খবর কি রাখেন তিনি? মনের ভেতরে চলা খচখচানি নিয়ে বাটা মসলাসহ সব উপাদান ঢেলে নারিকেলটা সামান্য কষিয়ে নিয়ে তাতে হাসের মাংস ছেড়ে দিল উল্লাসী। তারপর আলতো আঁচে তা ঢেকে অপেক্ষা করতে লাগলো মিনিট পাঁচেক।