#২

893 16 2
                                    

#আলোছায়া
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_২

লাইটারের আগুনে সিগারেট জ্বালিয়ে চেয়ারে বসলো মেসবাহ। নীরব দৃষ্টিতে স্ফুলিঙ্গের মতো লাল আগুনের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর তাতে কয়েকবার টান দিয়ে আবারও উঠে দাঁড়িয়ে ব্যালকনির আলো জ্বেলে দিল। চারিপাশে অসহনীয় গরম পড়লেও খানিকক্ষণ পরপর মৃদু বাতাস বইছে। যা পুরো শরীরে আলতো করে ছুঁয়ে দেয়ায় গরমের আভাস কমে যাচ্ছে। পরিবেশ শীতল হয়ে উঠছে ধীরেধীরে। এমন এক ক্ষণেই উল্লাসী এসেছিল তার জীবনে। তার বুকের ভেতরটায় অদ্ভুত এক তুফানের সূচনা করে বলেছিল, আমার বাবা মাকে যতটা ভালোবাসে আপনিও কি আমায় ততটাই ভালোবাসেন? সেপ্রশ্নের জবাবে দীর্ঘশ্বাস ছেড়েছিল মেসবাহ। বলেছিলো, ভালোবাসা মানে বোঝো তুমি? উল্লাসী বলেছিলো, উহু.. তবে এটুকু জানি বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর দুজন দুজনকে ভালোবাসতে হয়।

"বসবো?"
পাশ থেকে আসা উল্লাসীর গলার স্বরে স্মৃতিচারণ ছেড়ে বাস্তবে ফিরে এল মেসবাহ। এশট্রেতে সিগারেট ফেলে গম্ভীরমুখে বললো,
"বসো.."
হাতে থাকা আমের থালা নিয়েই বসে পড়লো উল্লাসী। পরিবেশ স্বাভাবিক করতে বললো,
"মৈত্রীর স্কুল কেমন চলে?"
"ভালো.."
"টিচারদের তো ওকে নিয়ে কোনো কমপ্লেইন নেই?"
"না.."
মেসবাহর স্বল্প বাক্যে অন্যসময় উল্লাসীর রাগ লাগলেও এমুহূর্তে মায়া হলো। লম্বা একটি দম ছেড়ে মেসবাহর দিকে তাকিয়ে সে নরম সুরে বললো,
"মুবিন ভাইকে কিন্তু নাম্বার দিয়ে দিয়েছি।"
তবে বিপরীত দিক থেকে মেসবাহর কোনো সাড়া না পেয়ে সে হতাশ হয়ে আবারও মুখ খুললো সে।
"মন খারাপ?"
"না।"
"তবে আমার দিকে তাকান।"
পাশ ফিরে তাকালো মেসবাহ।
উল্লাসী কাটা চামুচে আমের এক টুকরো মেসবাহর দিকে তুলে ধরে বললো,
"হা করুন.."
"আমি খেয়ে নিতে পারবো।"
"আমিও খাইয়ে দিতে পারবো.."
ঠোঁটে হাসি ফুটলো মেসবাহর। বাতাসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে সে মুখে নিল আমের টুকরোটি।

"মেয়ে কই?"
"মুন্নি ভাবিদের ওখানে। আল্লাহ যে কেনো ভাবিদের কোনো সন্তান দিচ্ছেন না! আর আপনিও যে কোন আধপাগলকে সাজেস্ট করলেন! কিচ্ছু হলো না.. ওদিকে ইন্ডিয়া থেকেও ঘুরে আসলো। তবে কাজের কাজ শূন্য!"
"হবে.. আল্লাহ চাইলেই হবে।"
আম খেতে খেতে জবাব দিল মেসবাহ।
উল্লাসী বললো,
"আর ওদের চাওয়া?"
"হবে.. সব হবে।"
"কচু হবে! একটা কথা বলুন তো.. "
"কী?"
"উনারা বাচ্চা পালক নিলেও তো পারে। তা কেনো নিচ্ছে না?"
"তা আমি কী করে বলি!"
"আপনি সারাদিন যেভাবে হাসান ভাইয়ের সাথে লেগে থাকেন! আর এখন বলছেন কীভাবে বলি! হাসান ভাই কী এসব নিয়ে আলোচনা করেনা?"
ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ফেললো মেসবাহ। প্রসঙ্গ পালটে বললো,
"উনাদের নিয়ে কথোপকথন আপাতত বাদ। আমাদের নিয়ে কিছু বলি.."
"বলবেন? বলুন.."
"চলো রোযার আগেই একদিন বের হই। সারাদিনের উদ্দেশ্যে.. ঘোরাঘুরি করে বাইরে খাওয়াদাওয়া করে একদম রাতে বাড়ি ফিরলে কেমন হয়?"
উচ্ছাসিত কন্ঠে উল্লাসী বললো,
"যাওয়া যায়.. কবে যাবেন বলুন?"
"এই শুক্রবার?"
"পরীক্ষা আছে কোচিংয়ে।"
"তবে মঙ্গলবার?"
"উহু.. হবে না। কাল চলুন না!"
"না.. কাল আমার সময় হবে না।"
হতাশ হলো উল্লাসী। চোখমুখ ছোট করে মেঝের দিকে তাকাতেই হাতে হালকা চাপ অনুভব করলো। মেসবাহ প্রায়ই এমনটা করে। তার এই কাজের অর্থ হতাশ হবার কিছু নেই। আমি তোমার পাশে আছি। মাঝেমাঝে তার এই কাজের দ্বারা বিরক্ত হলেও মাঝেমাঝে লোকটির উপর প্রচুর ভালোবাসা পায়। ছোট বাচ্চাদের মতো বসতে ইচ্ছে হয় তার কোলের ভেতরটায়। ধীরেধীরে তার শার্টের বোতামগুলো খুলে বুকের মাঝে নাক ঘষতে ঘষতে বলতে ইচ্ছে হয়, ছোট আদর চাই। অবশ্য বড় আদর দিলেও কিছু মনে করবো না। ভাবামাত্রই চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে উঠে মেসবাহর কোলের মাঝে বসে তার চুলে হাত বুলিয়ে দিল উল্লাসী। আহ্লাদী গলায় বললো,
"মাঝেমাঝে হঠাৎ আপনার প্রতি আমার এত আদর পায়! মনে হয় আপনাকে কামড়ে কামড়ে খেয়ে ফেলি।"
হাসলো মেসবাহ। উল্লাসীর গালে বৃদ্ধাঙ্গুল ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,
"মেয়েটাকে আজ একটু তুমি খাইয়ে দিও।"
"কেনো? ও কিছু বলেছে?"
"হু.."
কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠতেই উঠে দাঁড়ালো উল্লাসী। ক্ষীণ স্বরে বললো,
"কী বলেছে?"
"চিন্তিত হবার মতো কিছু নয়.. রিল্যাক্স!"
"তবে আপনি থাকুন.. আমি ওকে ডেকে আনি।"
উল্লাসী দরজার দিকে পা বাড়াতেই তাকে থামিয়ে দিল মেসবাহ। নিজেও উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
"হাসান ভাই একবার যেতে বলেছিল। চলো, একসাথেই যাই।"

আলোছায়া Onde histórias criam vida. Descubra agora