জরুরি অবস্থার মধ্যে এই রকম হয়, হতে পারে। রবিবার সকাল আটটা ষোলো থেকে আটটা চব্বিশ এই আট মিনিটে তিনবার ঘটনাটা ঘটে। জিন্সের পকেটে রাখা মোবাইল ফোনে পরপর তিনটা কল আসে। কোনো বিরতি না দিয়ে পরপর ফোনে ভাইব্রেশন হলে আমার ধারণা হয় যে, হয়তো একই ব্যক্তি তিনটা কলই করছে। এত সকালে তিনজন ভিন্ন ব্যক্তির উপর্যুপরি আমার কথা মনে পড়ার সম্ভাবনা নেই। পরপর তিনবার কোনো বিরতি না দিয়ে ফোন আসায় আমার ধারণা হয়, খুব জরুরি দরকারে ফোনটি আসতে পারে। হয়তো কোনো দুঃসংবাদ দেয়ার জন্য কেউ আমাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। কিন্তু এমন সব ক্রান্তিকালে ফোন বাজে যে, ধরা তো দূরে থাক, দেখার ফুরসতও পাই না যে কে এই সকালে আমার কথা মনে করে বার বার ফোন দিচ্ছে। বাসা থেকে বেরিয়ে মোহাম্মদপুরে বাবর রোডের মাথায় রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে মিরপুর রোড ক্রস করার জন্য আমি যখন ডানে-বামে ক্রমান্বয়ে তাকাচ্ছি তখন প্রথম কলটি আসে। অত্যন্ত সাবধানে রাস্তার ডিভাইডারের ওপর দাঁড়িয়ে আমি যখন বাম দিক থেকে আসা বাসগুলো দেখে দেখে কলেজ গেটের দিকে পা বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছি তখন ভাইব্রেশন মোডে রাখা ফোনটা দ্বিতীয়বারের মতো ক্রমান্বয়ে কেঁপে ওঠে।
রাস্তায় স্বাভাবিক যান চলাচল শুরু হয়নি। সিটি কর্পোরেশনের সবুজ ওভারকোট পরা ঝাড়ুদার দল ফুটপাথের পাশে আলতো করে ঝাড়ু বোলাচ্ছে। ময়লা পরিষ্কার হোক বা না হোক, যথেষ্ট ধুলা উড়ছে তাতে। ফাঁকা রাস্তা পেয়ে ট্রাক-বাসগুলো দ্রুত চলে যাচ্ছে। ভিড়ের রাস্তায় সাবধানতা একটু কম থাকলেও চলে, কিন্তু ফাঁকা রাস্তায় অতি সাবধানে রাস্তা পার হতে গিয়েও শিশুমেলার দিক থেকে আসা একটি আন্তঃনগর বাস আমাকে প্রায় চাপা দিয়ে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু দ্রুত ডিভাইডারে ফিরে প্রাণ রক্ষা করি আমি। বাসের গতি এবং বামে তাকিয়ে রাস্তা পার হতে নেয়া সময়ের মিল না হওয়ায় ঘটনাটা প্রায় ঘটতেই যাচ্ছিল। কিন্তু ড্রাইভার হালকা ব্রেক করায় আমি দ্রুত রোড ডিভাইডারের ওপর নিজেকে ফিরে পেলাম। রোড ডিভাইডার থেকে বামে তাকিয়ে রাস্তায় আবার পা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্যান্টের পকেটে ফোনের কম্পন টের পেলাম। রাস্তা পার হওয়ার পুরোটা সময় ধরে ফোন আসার ঘটনা ঘটলে আমার মধ্যে একটু অস্বস্তি তৈরি হয়। সাধারণত মিটিংয়ে না থাকলে ফোন না ধরার ঘটনা ঘটে না। কিন্তু আজ এমন অসময়ে ফোন এলো যে তিনবার বাজার পরও আমি ফোন ধরতে পারলাম না।