মাঝে মাঝে মনে হতো যেন সেই শৈশবে পড়ে আছে সুপর্ণা। বলত, ব্রহ্মপুত্রের ওপারে গেলে দেখবে একটা বড় বটগাছ। এত বড় একটা বটগাছ। সেবার কলকাতা থেকে পিসিরা এলো, তো বাবা অনেকদূর পথ হেঁটে সেই বটগাছটার কাছে নিয়ে গেল আমাদের। পিসি ছিল, পিসতুতো বোনেরা ছিল। বটগাছটার ধারে অনেক মটরশুঁটির ক্ষেত। আমরা চুরি করে মটরশুঁটি তুললাম। সেগুলো খেতে খেতে ভ্যানে করে আবার নদীর কাছে ফিরলাম। ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে গেছে। কখন সূর্য ডুবল খেয়াল করিনি কেউ। ব্রহ্মপুত্রে সূর্য একদম অন্যরকম করে ডোবে, জানো? একদম ঝুপ করে ডুবে যায়। তুমি ময়মনসিংহ গেলে সবকিছুই দেখতে পাবে।
শীতকাল ছাড়া তো আর মটরশুঁটির ক্ষেত পাব না, তাই না?
সুপর্ণা হাসে আমার দিকে চেয়ে, বলে, মটরশুঁটি না পেলে অন্যকিছু পাবে। হাত আঁকড়ে ধরে সুপর্ণা। বলে, তুমি কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো? আমি বলি, আমি জানি না আমি তোমাকে ভালোবাসি কি-না। আই অ্যাম নট সিওর। কিন্তু তোমার কথা আমি ভাবি। তোমার কথা ভাবলে আমার ময়মনসিংহ যেতে ইচ্ছা করে। রিকশায় যেতে যেতে ওর কথা শুনতে শুনতে ওকে কাছে টেনে চুমো খেয়ে বসি। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে লোকে যেভাবে ডাব উঁচু করে ধরে ডাবের রস খায়, সেভাবে সুপর্ণার মুখ উঁচু করে ধরে আমি সুপর্ণার ঠোঁটে চুমো খাই। সুপর্ণা বলে, তুমি আমার দিদির ছবি দেখেছো? দিদি কিন্তু অনেক সুন্দর। আমার থেকে সুন্দর। কিন্তু জানো তো, দিদি অনেক আগে বিয়ে করে ফেলেছে। বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে একটা বেকার ছেলেকে বিয়ে করেছে। দিদি যখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ত তখন। এ রকম কেন করল বলো তো? দিদি পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল। জানো, দিদি পালিয়ে বিয়ে করার পর বাবা বলত, আমি ধরে নিচ্ছি আমার মেয়ে একটাই। তুমি মুসলিম যে এটা কিন্তু একটা বড় সমস্যা। আমি যদি তোমাকে বিয়ে করি তাহলে বাবা কোনোদিন মেনে নেবে না। আর আমি কি দিদির মতো করতে পারব?
সুপর্ণা কেঁদে ফেলে। কাঁদলে ফোঁস ফোঁস করে গোখরা সাপের মতো মাথা দোলাতে থাকে। ওকে বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরি আমি। কোনো যুক্তিসঙ্গত কথা মাথায় আসে না। সুপর্ণা আমার বাহুতে হেলান দেয়।