নওরোজ ভাই বলেন, মি. শুভ, আপনাকে একটা কথা বলি। আমার জীবনের একটা শিক্ষা আপনাকে উইদাউট এনি ফি জানিয়ে রাখি। আপনার কাজে লাগলেও লাগতে পারে। যদি কখনো কাজে লাগে জাস্ট একটা মেসেজ করে জানাবেন। সিম্পল একটা থ্যাংকস জানাবেন। আমি যা বোঝার বুঝে নেবো। জীবনের সেই শিক্ষাটা কী জানেন? চারদিকে যা ঘটছে সবটাই একটা খেলার অংশ। লাইফ ইজ আ গেম। আপনাকে কেউ গোল দিচ্ছে অথবা আপনি কাউকে গোল দিচ্ছেন। আপনি জানেন বা না জানেন, আপনি এই খেলার অংশ। যারা টেস্ট খেলে মজা পায় তাদের আমি বলি, আমি টুয়েন্টি টুয়েন্টির প্লেয়ার। বিশ ওভারের জীবন, যা রান করবেন, যা উইকেট নেবেন, সবই বিশ ওভারের মধ্যে। জীবনে কোনো উইকেট নিয়েছেন? নাকি বৃথাই বলের পেছনে দৌড়ে গেছেন?
আমি সরাসরি কোনো উত্তর দেই না। বলি, নওরোজ ভাই, ইন ফ্যাক্ট আমি ক্রিকেট খেলাটা ভালো বুঝি না।
কী বলেন? ক্রিকেট বোঝে না এমন লোক কি দুনিয়ায় আছে নাকি? আমার অভিজ্ঞতা শুনলে আপনি চমকে উঠবেন। আমি আগে ফার্স্ট ডিভিশন লীগে খেলতাম। আকরামরা আমাদের জুনিয়র ছিল। একদিন ভাবলাম, ধুর এইসব খেলে কী হবে? জীবনের খেলাটাই তো খেলা হলো না। সবকিছু একেবারে তেতো হয়ে যাচ্ছিল। রাতের পর রাত ঘুম হতো না। আমি প্রত্যেক রাতে বসে বসে কাঁদতাম। আপনার ভাবী গভীর রাতে উঠে দেখত আমি কাঁদছি। বলেছি না, ও আমাকে খুব ভালোবাসে। ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে সে রাত জেগে বসে আমার কান্না দেখত। আমি বলতাম, রওনক, ঘুমাতে যাও। ও বলত, কী হয়েছে তোমার? ঘুমাও না কেন? কার কথা মনে করে কাঁদো? কারো প্রেমে পড়েছো? আমাকে বলো। আমিও তোমার সঙ্গে কাঁদি। রওনক খুব ভালো মেয়ে। ১৯ বছরের বিবাহিত জীবন আমাদের। প্রতিদিন সে আমার সঙ্গে আছে। আমার আশ্রয়ের মতো। কিন্তু রওনক জানত না, ওর কথা মনে করেই কাঁদি আমি। প্রতিদিন দেখতাম একটাই, মানুষটা আমার পাশে ঘুমায়ে আছে। সকালে ঘুম থেকে জাগলে রওনক আমার সামনে, বিকেলে কাজ থেকে ফিরলে রওনক, রাতে খেতে বসলে রওনক, ঘুমাতে গেলে পাশে রওনক। ওর শরীরের প্রতিটি বাঁক, ওর চলার, কথা বলার প্রতিটি স্পন্দন আমার চেনা হয়ে গেছে। ও একটা মানুষ। রান্নায় বলেন আর দাম্পত্যে বলেন, ওর সৃজনশীলতার তুলনা নেই। তবু মনে হতো, রওনকের মধ্যে কোনো রহস্য নেই। আমাদের প্রতিদিনের যৌনতাও একটা রুটিন হয়ে গেছে ততদিনে। মাঝে মাঝে হয়তো এক মাস পনেরো দিন যৌনতার কথা ভুলে আছি। হঠাৎ রওনক বলে, বিয়ের পর মানুষ কী করে? আমি আনমনে বলি, কী করে? রওনক হাসে, বলে, তুমি দেখি সব ভুলে বসে আছো। আচ্ছা সত্যি করে বলো তো, আমাকে কি তোমার আর ভালো লাগে না? আমাকে কি তোমার সেক্সি মনে হয় না? তোমার কি মনে হয় নতুন কারো সঙ্গে প্রেম করলে তুমি ভালো থাকবা? জীবনে আনন্দ ফিরে পাবা? আমি বলি, কী বলো রওনক! তোমাকে ভালো লাগবে না কেন? ইউ আর দ্য বেস্ট। কিন্তু আর কতদিন। ছেলে বড় হয়েছে, বিদেশে পড়তে গেছে। কিছুদিন পর পাস করে ফিরে আসবে। আর কত বলো তো।