এবং আয়না বেয়ে মেঘ পালকের সারি নেমে যায়/পাহাড়তলীতে

8 0 0
                                    

নাজিয়া দেখা দেয় আবার। ওর গভীর রাতে। আমার সবচেয়ে ব্যস্ততার সময়ে। বলে, কেমন আছো? ওহ সরি, মনে আছে তো তুমি করে বলব বলেছিলাম? ওইদিন থেকেই তোমাকে বন্ধু ভাবছি। তুমি খুব নাজুক একটা সময়ে আমার পাশে ছিলে। জানো তো, তোমার সবচেয়ে খারাপ সময়ে হয়তো দেখবে তোমার নিত্যদিনের সঙ্গীটাই অনুপস্থিত। আর যাকে পেয়েছো তার হয়তো সেখানে থাকার কথাই ছিল না। কিন্তু সে-ই হয়তো তোমাকে রাত জেগে সঙ্গ দিচ্ছে। তোমাকে শুশ্রূষা দিচ্ছে, তোমাকে নিয়ে হাসপাতালের বেডে বেডে দৌড়াদৌড়ি করছে। মাঝে মাঝে আমার কী মনে হয় জানো? জীবনটা কোইন্সিডেন্টাল। জীবনের বেইজটা কোইন্সিডেন্স। অথচ আমরা কত নিশ্চয়তা আর পরিকল্পনা দিয়েই না ভরিয়ে রাখতে চাই জীবনকে। হয়তো অনিশ্চয়তার কথা জানি বলেই সেখান থেকে পালিয়ে বেড়ানোর জন্য আমাদের যত নিশ্চয়তার আয়োজন। থ্যাংকস। থ্যাংকস এ লট।

আমি বললাম, কী যে বলো না! আমি তো কিছুই করতে পারলাম না। জাস্ট বসে থাকলাম। এমন বসা তো প্রতিদিনই বসে থাকি। বরং তোমার কথা শুনে কিছু লাভ হয়েছে। আই লাইকড ইউ। তুমি খুব দৃঢ় একটা মেয়ে। আই লাইকড ইট ভেরি মাচ।

নাজিয়া খুশি হয়ে খুকির মতো বলে, শোনো একটা সুখবর আছে। আমি আর নিউইয়র্কে নেই। সুযোগ এলো, তাই কাজের জায়গা শিফট করে একই কোম্পানির পোস্টিং নিয়ে নিউ জার্সি চলে এসেছি। এখানে বাঙালি কম। যে এলাকায় থাকি সেটা খুব সুন্দর। ঠিক শহর না। শহর থেকে অনেক দূরে। ছোট ছোট বাড়ি। বাগান। বিস্তীর্ণ মাঠ। আমি প্রতিদিন সকালে উঠে ঘাসে ঘাসে পা ফেলি। খালি পায়ে হাঁটি। তুমি কতদিন খালি পায়ে ঘাসের ওপর হাঁটো না? হাঁটবা। খালি পায়ে হাঁটলে তুমি নিজের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারবে। কে যেন বলেছিলেন, হাঁটা হলো নিজেকে আবিষ্কার করার একটা মাধ্যম। তুমি হাঁটছো, বহন করে চলেছো নিজেকে। যত হাঁটবে ততই নিজেকে বহন করতে আরাম অর্জন করতে পারবে। আচ্ছা বলো তো তুমি কি একটু মোটা? একটু মোটা? এখনো বিয়ে করোনি, তাই না? বিয়ে করলেই মোটা হয়ে যাবে। এখন থেকে হাঁটার অভ্যাস করো। কাজে লাগবে। আর শোনো, বিয়ের আগে যখনই সময় পাও নিরুদ্দেশ যাত্রায় বেরিয়ে পড়বে। ট্রেনে করে বেরিয়ে পড়বে। কোনো অজানা স্টেশনে নেমে গ্রামের দিকে অনেক দূর হেঁটে যাবে। সন্ধ্যার দিকে ফিরবে। অনেকক্ষণ ধরে ট্রেনের জন্য বসে থাকবে। খুব ভালো লাগবে। দেশে এমন কখনো করিনি, জানো? এদেশে এসে অনেকবার এমন করেছি। নিরুদ্দেশ যাত্রা। এরা জানো খুব ঘোরে। উইকএন্ডটা ঘরে বসে কাটায় না। আমিও ওদের ফলো করি। এখানে তো গ্রাম নেই। তবু ধরো কোনো এক উইকএন্ডে দূরে কোথাও চলে গেলাম। নাফিসের সঙ্গে থাকার সময় ওকে মাঝে মাঝে বলতাম, চলো কোথাও আউটিংয়ে যাই। ও যেতে চাইত না। জোরাজুরি করলে রাজি হতো। কিন্তু গত কয়েক মাসে এক থাকার সময়গুলোতে কত যে নিরুদ্দেশ যাত্রায় গিয়েছি! তুমি হয়তো বলবে, নিজের কাছ থেকে পালানোর জন্য এইসব নিরুদ্দেশ যাত্রার আয়োজন। হয়তো সেটাই সত্যি। কিন্তু আরেকটা জিনিস আমার মনে হয়। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের অল্প একটু পৃথিবীতেই কেমন অনায়াসে হারিয়ে যেতাম, যেতে পারতাম। আর বড় হয়ে দেখো, কতইবা বড় হয়েছি আমরা, আর হারাতে পারি না। রিয়েল হারিয়ে যাওয়া বলতে যা বোঝায় তেমন পথ হারানোর ঘটনা আসলেই ঘটে না। আমার মনে হয় কি জানো, আমরা আসলে এইসব নিরুদ্দেশ যাত্রার মধ্য দিয়ে হারিয়ে যেতে চাই। হারিয়ে যাওয়ার ক্ষমতাকে ভুলে থাকতে চাই।

ফেস বাই ফেসDonde viven las historias. Descúbrelo ahora