বৃষ্টি নামল আর আমিও এ আশ্চর্য সত্যকে আবিষ্কার করলুম

9 0 0
                                    

সকালে কলেজ গেটে দাঁড়িয়ে আমি ভিজছি। কোনো বাস নেই শহরের রাস্তায়। শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে বাসের অপেক্ষায়। অফিসে পৌঁছানোর সময় চলে গেছে ঘণ্টা দুয়েক আগে। বসকে ফোন দিয়ে জানিয়েছি। আড়াই ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। কোনো সিএনজি, ট্যাক্সিক্যাব পাচ্ছি না। বস বলল, ধীরে ধীরে আসো। সমস্যা নেই। উনিও গুলশানের রাস্তায় আটকা পড়েছেন। গাড়ি আগাচ্ছে না। রাস্তায় পানি জমে অচল হয়ে গেছে শহর। একটা ছাতা আছে হাতে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না। থেকে থেকে চতুর্দিক থেকে বাতাস ঝাপটা দিচ্ছে। একেবারে ভিজে গিয়েছি। একটা ভরা বাস এলেও লোকে দৌড়ে উঠে পড়ছে। কোনো রকমে দরজার হাতল ধরে মানুষকে ঠেলে ধাক্কা দিয়ে চলে যাচ্ছে। কিন্তু আমার কোনো তাড়া নেই। আমি শুধু ভাবছি সুপর্ণার কথা। আমার থেকে থেকে শুধু কান্না পাচ্ছে। কাল সারারাত বৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে প্রচণ্ড নিম্নচাপ শুরু হয়েছে পরশু থেকে। দক্ষিণাঞ্চলে বজ্র, বৃষ্টি আর ঘূর্ণি বাতাস চলছে। একটা বড় ঘূর্ণি ঝড় বঙ্গোপসাগরে ঘুরছে। আমি দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানি না। হঠাৎ ঘুম ভাঙলে দেখলাম আমার ফোন বাজছে। ঘরের লাইট জ্বালানো। কোনো লাইট নিভাইনি। মনে পড়ছে বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। টিভি-লাইট কিছু বন্ধ না করে বিছানায় শুয়ে পড়েছিলাম। টিভিতে ওজন কমানোর বিজ্ঞাপন চলছে। এশিয়ান স্কাই শপের। রাত ক'টা বুঝতে পারছি না। ফোন দেখে চমকে উঠলাম। সুপর্ণা। ফোন ধরলাম। হ্যালো সুপর্ণা। ঘড়ি দেখলাম। রাত তিনটা। সুপর্ণা কোনো কথা বলছে না। ফোঁস করে আওয়াজ হচ্ছে ফোনের ওপার থেকে। কাঁদছে সুপর্ণা। কেন কাঁদছে? ভাবলাম, আমার স্বপ্নের মাঝে সুপর্ণা কাঁদছে। হয়তো আমি এখনও ঘুমাচ্ছি। স্বপ্নেই ফোন করেছে সুপর্ণা। কাঁদছে। আমি বললাম, সুপর্ণা বলো। তুমি কাঁদছো কেন? সুপর্ণা কোনো কথা বলে না। আমি বললাম, সুপর্ণা, কিছু তো বলো। বাসায় কিছু হয়েছে? তুমি কাঁদছো কেন? কাকা ঠিক আছেন তো? সুপর্ণা শুধু হু বলে। তারপর আবার হু হু করে কাঁদতে থাকে। আমি নিজে থেকেই বলি, আমি তো তোমার সঙ্গে দেখা করতেই চেয়েছিলাম। তুমিই তো না বললে। শোনো, কাল দেখা করো। সব ঠিক হয়ে যাবে। আবার আমরা...। বলতে বলতেই আমার মনে পড়ল। আজ শ্রাবণ মাসের ২২ তারিখ। আজই সুপর্ণার বিয়ে। আজ মানে রাত পার হলেই। বললাম, সুপর্ণা, আই অ্যাম সরি। আমি বুঝতে পারিনি। আমার মনে ছিল না। আজই তো তোমার বিয়ে। তাই না? তুমি কোথায় বলো তো? বাসায় লোকজন নেই? আমি কল্পনা করি, সুপর্ণা মানুষ ভরা বাসায় নিজের ঘরে একা বসে কাঁদছে। লোকজনের জন্য আমাকে ফোন করতে পারেনি। ফোন করতে করতে রাত তিনটা বেজে গেছে। ওহ সুপর্ণা, তোমার কাল বিয়ে। তুমি কাঁদছো কেন? আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু বিয়ে তো করতে পারতাম না। তুমি সুখী হবে। খুব সুখী হবে তুমি। শোনো, কেঁদো না। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর শোনো, তোমার খুব ভালো বন্ধু হবো আমি। তুমি দেখো। শোনো, একটু ঘুমাও। কাল অনেক ভোরে উঠতে হবে তোমাকে। সুপর্ণা কোনো কথাই বলে না। শুধু কাঁদে। আমি নিজ থেকে অনেক কথা বলে যাই। অসহায়ের মতো সুপর্ণার কান্না শুনতে থাকি। এভাবে অনেকক্ষণ চলার পর সুপর্ণার ফোন বন্ধ হয়ে যায়।

ফেস বাই ফেসDonde viven las historias. Descúbrelo ahora