কোথাও পড়েছিলাম বা কোনোভাবে শুনেছি, নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় নাকি ঐতিহাসিক স্থান দেখার মতো অনুভূতি তৈরি করে। নাজিয়ার কথা শুনতে শুনতে তেমন একটা অনুভূতি হচ্ছিল। একেকটা মানুষ যেন একেকটা জনপদ। কত ঘটনা যে তাকে কেন্দ্র করে ঘটে! এককথায় বোঝার উপায় নেই। পরিচয়ের মধ্য দিয়ে মানুষ একেকটা ইতিহাস বলতে থাকে। অন্য আরেকজন পরিচিত হতে হতে সেই ইতিহাসের ভেতর পরিভ্রমণ করতে থাকে। নাজিয়ার কথা শুনতে শুনতে টুকটাক দু'একটা কাজ সারি। নতুন বায়ারের সন্ধানে একটা সার্চ দেই গুগলে। খুব দরকারি কাজ নয়, আমার অ্যাসাইনমেন্টও নয়, তবু অফিসের সময়টা হালাল করার একটা ব্যাপার আছে। বস ডেকে পাঠালে বলার মতো একটা কথা থাকতে হবে। একটা বিজি বায়িং হাউসের মার্চেন্ডাইজারের কোনো কাজ নেই এটা অকল্পনীয় ব্যাপার। কিন্তু সত্য হলো আজ কোনো কাজই নেই। কাজের চাপ থাকলেও অবশ্য সমস্যা হয় না। নেটে বসতে বসতে আমি নেট ব্যবহারে অনেকটা দক্ষ হয়ে উঠেছি। বিদেশি সিনেমায় কিছু চরিত্র থাকে, যারা কানে ফোন লাগিয়ে হড়হড় করে কথা বলে যায় আর এখান থেকে ওখানে ঘুরে ঘুরে এটা-সেটা অনেক কাজ করতে থাকে। আমার অবস্থা কিছুটা এ রকমই। কারো সঙ্গে চ্যাটবক্সে আলাপ চলছে হয়তো। এই ফাঁকে আমি নতুন ক্লায়েন্টের সঙ্গে আলাপ করে যাচ্ছি স্কাইপিতে। পুরনো ক্লায়েন্টের অর্ডার নিচ্ছি। অর্ডার প্রিন্ট করে বসের রুমে দিয়ে আসছি। বসের পক্ষ থেকে মেইল লিখে বায়ারকে পাঠিয়ে দিয়ে বসকে একটা সিসি পাঠাচ্ছি। শিপমেন্ট ঠিকঠাক পৌঁছল কি-না খবর নিচ্ছি। কায়েন্টের অভিযোগগুলো নোট করছি। বায়িং হাউসে যা হয়। আমাদের হাউস পুরনো। অলরেডি একটা নেটওয়ার্কের মধ্যে চলে গেছে কোম্পানি। কাজ পেতে সমস্যা নেই। তবু মার্কেট বলে একটা কথা আছে। বস বলে, নতুন বায়ার আনো। নইলে হাউস টিকবে না। তাই মাঝে মাঝে নতুন ক্লায়েন্ট খোঁজা হয়। কোনো অর্ডার পেলে ক্লায়েন্টের চাহিদা বোঝার জন্য স্যাম্পল নিয়ে জোরদার মিটিং ডাকা হয়। ক্লায়েন্টের রিকোয়ারমেন্ট বোঝার চেষ্টা চলে। কোথায় ভালো কাজ হবে তা নিয়ে অ্যানালাইসিস চলে। আর কখনো শিপমেন্টে দেরি হলে, বায়ারের কোনো অভিযোগ এলে বস ঘুম হারাম করে দেয়। দিন নেই, রাত নেই, কখনো কখনো সাভার আশুলিয়া মিরপুর দৌড়াতে দৌড়াতে রাত পর্যন্ত কাবার হয়ে যায়। শিপমেন্টের দিনগুলোতে এই ব্যস্ততা, ছোটাছুটি ছাড়া আমার মূল কাজ, বিয়িং অনলাইন। বস বলে, ইমিডিয়েট রেসপন্স ইজ দ্য বেস্ট পলিসি। ঘুমাতে যাওয়ার আগে একবার মেইলবক্স চেক করবে।