অনেকদিন সুপর্ণাকে অনলাইনে পাই না। হয়তো ফেসবুকে লগইন করে চ্যাটবক্স অফ করে রাখে। ফোনও ধরে না। খুব অদ্ভুত মেয়ে। পরপর দশবার কল দিলেও ধরে না। একটা মেসেজ পাঠায়, বিজি। বুঝতে পারি সুপর্ণা আমাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ভুলে যাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, নওরোজ ভাই একদিন বলেছিল। মি. শুভ, ভালো করে চিন্তা করে দেখলাম বিষয়টা, বুঝলেন? সাপ দেখেছেন? সাপ সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন? শোনেন, সেদিন ন্যাশনাল জিওগ্রাফি দেখছিলাম। মাঝে মাঝে ঘুম আসে না। রওনক বিছানায় পিঠ হেলালেই ঘুমায়ে পড়তে পারে। মানুষের ঘুমানোর এই ক্ষমতাটাকে আমি ঈর্ষা করি। রওনকের এই ক্ষমতা আছে। এজন্য মাঝে মাঝে ওকে আমার মহামানবী মনে হয়। মনে হয়, সবচেয়ে সুখী মানুষটির মহামানব হওয়ার ক্ষমতা আছে। কী ব্যাপার নওরোজ ভাই, আজকে বেশ ভাব আসছে মনে হয়? নওরোজ ভাই একটু থমকে যায়। ভাবের কী আছে বলেন? সাপের ডকুমেন্টারিটা দেখে আমি রওনককে বললাম, শোনো, কাল রাতে সাপের একটা ডকুমেন্টারি দেখলাম। রওনক বলে, এইগুলা কেমনে দেখো বলো তো। এত সময় তোমার। ফেসবুক ওপেন করে বসে থাকলেও তো পারো। সবসময় এসব উল্টাপাল্টা অনুষ্ঠান দেখো। খবরদার আমাকে সাপের গল্প বলবা না। সামনের ঈদে বাড়ি যাব। বাড়ি গিয়া তোমার এসব গল্প খালি মনে পড়ে। আমি একা ঘুমাইতে পারি না। খবরদার, সাপের গল্প করবা না। বলতেও পারলাম না। আপনাকে অনলাইনে পেয়ে ভাবলাম আপনাকে বলি। আপনার আবার সাপের ভয় নাই তো?
কী যে বলেন।
জিনিসটা তাহলে আপনাকে বুঝায়ে বলি। শীতঘুম তো বোঝেন। শীতের সময় শরীরে পর্যাপ্ত আহার সঞ্চয় করে সাপ শীতঘুমে চলে যায়। ব্যাঙের শীতঘুমের ব্যাপারটা কিন্তু ইন্টারমিডিয়েটে ছিল। আপনি সায়েন্স না? ওকে। তাহলে তো বোঝেনই। সাপ এই শীতঘুমে তিন মাস থাকে। শীতের শুরুতেই গোপন আস্তানায় চলে যায়। তিন মাস পর বের হয়ে আসে। শীতঘুমে থাকা সাপের ওপর একটা ডকুমেন্টারি। গহিন গুহার মধ্যে সাপের বাসায় দিনের পর দিন ক্যামেরা ধরে বসে থাকা। খুব কষ্টের কাজ। সাপের গুপ্ত নিবাস দেখাল। আবহাওয়া চেঞ্জ হচ্ছে। শীত যাই যাই করছে। সাপের দেহে সাড়া পড়ছে ধীরে ধীরে। একটু একটু করে সচেতনতা আসছে। খুব ইন্টারেস্টিং ঘুম ভাঙার প্রক্রিয়াটা। মাটির নিচে থেকেই সাপ বুঝতেছে ওপরে তাপ বাড়ছে। ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছে। নড়েচড়ে উঠছে। ফাইনালি সে বের হয়ে আসবে। এই জায়গাটা খুব ইন্টারেস্টিং। সে যে খালি গুহা ছেড়ে বের হচ্ছে তা কিন্তু না। একসঙ্গে সে গুহা এবং খোলস দুটা ছেড়েই বের হয়ে আসে। একেবারে নতুন একটা সাপ হয়ে বের হয়। চকচক করে তার ত্বকের কারুকাজ। হিন্দুরা পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে না? আমার কেন জানি ডকুটা দেখতে দেখতে মনে হলো সাপের কাছ থেকে পুনর্জন্মের ধারণাটা আসছে। ক্ষুধার্ত একটা সাপ নবজন্ম নিয়ে গুহা থেকে বের হয়ে আসছে। দৃশ্যটা খুব সুন্দর। রওনক খুব ভীতু, জানেন তো। আচ্ছা আপনি রওনককে অ্যাড করেন না কেন? আজকেই অ্যাড করেন। আমার ফ্রেন্ড লিস্টে আছে। ও তেলাপোকা, টিকটিকি, মাকড়সা সবকিছুতে ভয় পায়। এই ভয়টা যদি কাটানো যেত! আর জানেন, আমার ফেসবুক জীবন নিয়ে সে অতিমাত্রায় আগ্রহী। ওর মূল কাজ হলো, সারাদিন ফেসবুকে আমাকে ফলো করা। যাই হোক, সাপের গল্পটা আপনাকে বলার একটা কারণ আছে। শোনেন, আপনার তিন্নি কাহিনী শুনেছিলাম না একদিন? আমার কী মনে হয় জানেন? তিন্নি আপনার জীবনে পাস্ট। পুরনো খোলসের মতো এটাকে ছেড়ে আপনি বের হয়ে আসেন। ইন ফ্যাক্ট শি ইজ নট ইওর টাইপ। ভুলে যাওয়াটা স্বাস্থ্যকর, বোঝেন তো? এখন বয়স অল্প। পুরোটা বুঝবেন না। কিন্তু একটা সময় গেলে ঠিকই বুঝবেন, যখন দেখবেন ভুলে না গেলে আপনি নতুন কোনো কাজ শুরু করতে পারছেন না। দেয়ার ইজ অ্যান এন্ড বিফোর এভরি বিগেনিং। সুপর্ণাকে অনলাইনে দেখে আমার সহসা নওরোজের গল্পটার কথা মনে হয়। বললাম, হাই।