প্রফেসর: রিমি প্লিজ একবার আমার কথা শোন ! তুমি জানো আমার জীবনে তুমি কি ? সো প্লিজ। রিমি ! রিমি !!!!
প্রফেসর চোখ খোলেন। মনে হচ্ছে নিজের হার্টবিট নিজের কানে শুনতে পাচ্ছেন। সমস্ত শরীর কাঁপছে। বুঝতে পারলেন দুঃস্বপ্ন। প্রফেসর পেছনের বারান্দায় গেলেন। সেই বারান্দা , সেই ঘর , সেই দ্বীপ। প্রথমবার ভুলক্রমে আসতে হলেও এবার সেচ্ছায়। চোখের সামনে এসব কিছুকে আগুনে জ্বলতে দেখেছেন। আজ আবার সেখানেই ! মাঝে মাঝে ভাগ্যের খেলা বুঝ উঠা বেশ কঠিন হয়।
ইরিন : এত সকাল সকাল এখানে ?
প্রফেসর : এমনি।
ইরিন : চা খাবেন ?
প্রফেসর মাথা নাড়লে।
ইরিন : কোনো সমস্যা হলে বলতে পারেন। আর যদি না চান তাহলে থাক।
প্রফেসর : দুঃস্বপ্ন দেখেছি , তাই মন ভালো নেই। স্বপ্নে রিমি এসেছিল।
ইরিন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
প্রফেসর : আমার রিমির সাথে পরিচয় হয় ইউনিভার্সিটিতে। তখনও আমার জোসেফের সাথে পরিচয় হয় নি। প্রথম সেমিস্টার থেকেই ল্যাবে আমার টিমমেট ছিল রিমি। প্রথম প্রথম আমরা খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে তা ভালবাসায় রূপ নেয়। আমি রিমিকে ঠিক কতটা ভালবাসতাম তা আমার পক্ষে বোঝানো সম্ভব না। একদিন ভাবলাম রিমিকে আমার অনুভূতির ব্যাপারে সব জানাবো। তখন আমাদের ফাইনাল সেমিস্টার চলছিল। এতদিন শুধু নিজের ভেতরে ভেতরে সব পুষে রেখেছিলাম , কাউকে কিছু বুঝতে দেই নি। আর পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। যা হবার হবে। কিন্তু এবার রিমিকে জানাতে হবে। সেদিন সারারাত আমি ঘুমাই নি। শুধু অপেক্ষা করেছি কখন সকাল হবে ? কখন রিমির কাছে যাব ? চিৎকার করে বলব ভালবাসি। আচ্ছা ও কি আমায় নিয়ে এমন কিছু ভাবে ? মনে হচ্ছিল এটা আমার জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ রাত। কোনোভাবেই পার হচ্ছিল না।
অবশেষে সেই মুহূর্ত আসে , সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আমি হাঁটু গেড়ে বসে রিমি কে আমার মনের সব কথা বলি। রিমি প্রথমে খুব হেসেছিল। ভেবেছিল আমি ওর সাথে মজা করছি। কিন্তু আমাকে সিরিয়াস হতে দেখে রিমি বলে আমাকে একজনের সাথে দেখা করাতে চায়। আর তারপর দেখা হয় জোসেফের সাথে। আমার কাছে রিমির খুশি চেয়ে দামি আর কোনো কিছুই ছিল না , এমনকি আমার নিজের জীবনও না। ফাইনাল পরীক্ষার পর ওরা বিয়ে করে। সেদিনও আমি সারারাত জেগে ছিলাম। খুব কেঁদেছিলাম। একেকবার মনে হচ্ছেছিল নিজেকে শেষ করে দেই। কিন্তু কোনো মতে নিজেকে সামলে নেই।
যখনই মনে হতো ওদের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন ওরা একই সাথে একই ঘরে , রক্ত গরম হয়ে যেত। এরপর থেকে রেগুলার নাইট ক্লাব যেতাম , রাতে যেতাম সকালে ফিরতাম। ড্রিংক করতাম। একদিন খবরের কাগজে জোসেফের ছবি দেখলাম। সে টপ সায়েন্টিস্টদের একজন। সেখানে লেখা দেখলাম রিমি নাকি ওকে বলেছে জোসেফকে টেক্কা দেবার মতো সায়েন্টিস্ট সেইম জেনারেশনে কেউ নেই। তখনই মনে একটা বড় ধাক্কা অনুভব করলাম আরেহ্ এ আমি কি করছি ?এভাবে নিজেকে কেন শেষ করছি। জোসেফকে টেক্কা দেবার ক্ষমতা কারোনা থাকলেও আমার আছে। আমি কেন নিজেকে প্রমাণ করছি না। তখনই সিক্রেট সোসাইটিতে ইন্টার্নশিপের জন্য এপ্লাই করি এবং ওরা একসেপ্ট করে। তারপর আসাতে আস্তে জোসেফের সব রিসার্চের বদলে আমার রিসার্চগুলো টপ করতে থাকে। আর সিক্রেট সোসাইটি আমাকে প্রমোশন দিতে থাকে। গত ছয় মাস আগে প্রফেসর পোস্টের জন্য জোসেফ এপ্লাই করেছিল , কিন্তু সিক্রেট সোসাইটি আমাকে প্রমোশন দিয়ে ওর এপ্লিকেশন রিজেক্ট করে।
জীবনকে আবার একটু একটু করে গোছাতে শুরু করি। রিসার্চ আর অফিস এটাই ছিল আমার জীবন আর জীবনের সব চাওয়া পাওয়া। তারপর গত মাসে আমার কাছে একটা কল আসে। হ্যালো বলতেই বুঝে যাই কে ? আমি ফোনের লাইন কাটতে যাব তখন শুনতে পেলাম রিমি কাঁদছে। একমুহূর্তে আমার পৃথিবী এলোমেলো হয়ে গেল। আমার তিল তিল করে গড়ে তোলা নতুন জগৎ ধ্বংস হয়ে গেল। আমার জীবনের সব অর্জন তুচ্ছ মনে হচ্ছিল। কারণ আমার রিমি কাঁদছে। বলল ওদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। জোসেফ নাকি ওর ওপর টর্চার করত। এখন সে একেবারেই অসহায়। কারো কাছে সাহায্য চেয়ে কোনো সাড়া পায় নি। এখন আমিও যদি ওকে ফিরিয়ে দেই সাহায্য না করি তাহলে সে আত্মহত্যা করবে। আমি এসব সহ্য করতে পারিনি। সিক্রেট সোসাইটিতে ওর চাকরির ব্যবস্থা করে দিলাম। একমাস পর জয়েনিং ডেট ছিল। এর মাঝে আমরা প্রতিদিন দেখা করতাম। আমাকে বারবার বলত সেদিন আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে ও জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছিল। আর আমিও বিশ্বাস করতাম সব। আবার একদিন আরেকটা ভুল করে ফেলি। এবার ডাইরেক্ট রিং নিয়ে প্রপোজ করি। রিমি সাথে সাথে রাজি হয়ে যায়। আমাকে জরিয়ে ধরে। কিন্তু সব নাটক ছিল। আমার প্রত্যেকটা অনুভূতির সাথে নাটক করেছে। আর আমি অন্ধের মতো ওকে ভালোবসেছিলাম।
প্রফেসরের চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে।ইরিনও কাঁদছে , ইচ্ছে করছে দুচোখ মুছে দিয়ে জরিয়ে ধরতে। কতটা আঘাত পেয়েছে মানুষটা। কেন ভালোবাসা হৃদয়ে এভাবে রক্তক্ষণ ঘটায় ? কেন ?
ইরিন নিজের অজান্তেই প্রফেসরের হাতের ওপর হাত রাখে। প্রফেসর ওর হাত শক্ত করে ধরে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদছে।
![](https://img.wattpad.com/cover/164775597-288-k770526.jpg)
YOU ARE READING
ইরিনের সিক্রেট সোসাইটি
Romanceইরিনের রিজাইনিং লেটার জমা দেওয়ার পরই দেখা হয় প্রফেসর নিকের সাথে। তারপর....