দেখতে একটা দিন কেটে গেল। প্রফেসর ইরিনের সাথে বেশ সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছেন, কিন্তু সেই ল্যাবের ইরিন যে হঠাৎ কোথায় উড়ে গেল তা ইরিনের নিজেরই বলা দায়!
প্রফেসর: আমাকে খুব কাঠখোট্টা মনে হয় তাই না?
ইরিন: না তো! কেন, হঠাৎ এই কথা বললেন কেন?
প্রফেসর: রিসার্চ সেন্টারে তো শুধুমাত্র কাজের বাইরে কোনো কথা হয়নি তাই বলছিলাম। একটা গল্প বলি শুনবে ?
ইরিন: বলুন।
প্রফেসর: মেয়েটা বেশ সরল স্বভাবের। হয়তো যে কেউ দু তিন মোটিভেশনাল স্পিচ দিয়ে মন জয় করে ফেলতে পারতো। পারতো তার চোখে জ্বল জ্বল করা আলো তৈরি করতে। তবে ক্যারিয়ারের পথে কোনো বাঁধা সে মানবে না। জীবনে কখনো কোনো সম্পর্কে জড়ায় নি, তবে একবার একতরফা প্রেমে পড়েছিল। কিন্তু অন্য পাশের ব্যক্তিটি যে ছিল সে হুট করেই অনেক দূরত্বের রেখা টেনে দেয়।
মেয়েটা না সইতে পারে না রইতে। তবু সে মনের সাথে যুদ্ধ করে একেকটা দিন শুরু করে। এই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় যে জীবনে কখনো কাউকে আর ভালবাসবে না। এমনি করে দিন যায়, মাস যায়। মেয়েটার ক্যারিয়ার আস্তে আস্তে সুন্দর কিছু দিন দেখতে পায়। হঠাৎ করেই একটা কোম্পানি থেকে ইন্টারভিউয়ের অফার আসে যা রীতিমতো তার জন্যে স্বপ্ন। সে বদ্ধপরিকর এই স্বপ্ন পূরণে।
দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টা। ওয়েটিং রুমের কালো সোফায় বসে প্রচন্ড টেনশন করছে।
একটা ছোট্ট এক্সাম দেয়ার পর ইন্টারভিউ শুরু। মে আই কাম ইন বলে ঢুকতেই সামনে বসে থাকা সি ই ও কে দেখে মনে মনে বলেই ফেলে এতো কম বয়সী ইয়াং সি ই ও। বলতেই শাহরুখের " ইতনি কাম উমার মে টিচার" ডায়লগটার মতো শুনতে লাগায় মনের অজান্তেই লজ্জা পেয়ে গেল। একদিকে ইন্টারভিউ চলে অন্য দিকে কেমন জানি একটা ভালোলাগা কাজ করা শুরু হয়। যদিও শেষমেশ ইন্টারভিউটা খুব একটা ভালো হয় না। অফিস থেকে বের হয়ে দু মিনিটের জন্য সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগে "প্রেমে পড়ে যাচ্ছি না তো!" বের হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে কেউ এমন হাসি দেয়? উফফফ অন্তত একবার আর একবার এই হাসিটা দেখবার জন্যে হলেও যদি চাকরিটা পেতাম!
আবার ধীরে ধীরে নিজের জীবনে প্রায় সব ভুলে চির পরিচিত ব্যস্ততায় ফেরে। কিন্তু মাসখানেকের মধ্যেই যখন জানতে পারে চাকরিটা তার হয়েছে সে সব ভুলে আবার ক্যারিয়ারে মনোযোগী হয়। কিন্তু আস্তে আস্তে যত তাকে দেখে, কথা বলে, তার সম্পর্কে জানতে সে নিজেও বোঝে না কতটা গভীরে মনে ভেতরে সেই মানুষটাকে সে স্থান দিচ্ছে। এভাবেই যতদিন যায়, সে ততই উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। মন, প্রাণ সবকিছু দিয়েই যে কোনো কিছুর বিনিময়ে সে চাইতো তাকে। কিন্তু হায়! সবই নিয়তি! অফিসে নতুন কোনো সুন্দরীর আবির্ভাব হয়। যাকে সে মনে প্রাণে একবারের জন্যও তার মনকে বোঝার জন্য চাইত, আজ চোখের সামনে সেই একই ভাবে ঐ মেয়েটাকে চায়। কিন্তু কোনোদিনও কি সে আমায় এভাবে চেয়েছে? না কখনো চাইবে? আমি কি কখনো কারো মনে স্থান পাব না যাকে আমি চাই? মেয়েটা সব সহ্য করে শুধু ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে দিন কাটাতে থাকে। কিন্তু মনে যে সংকোচ, দ্বিধা, ঘৃণা নিজের প্রতি একে শত চেষ্টায়ও যেন দূর করতে পারছে না। নতুন প্রতিজ্ঞা নিয়ে দিন শুরু করে ঠিকই, কিন্তু ভেজা চোখ আড়াল করে অফিস থেকে বের হয়।
দেখতে দেখতে ছটা মাস পার হয় কিন্তু একেকদিন আরো বাজেভাবে পেরতে থাকে। চিৎকার কে মরে যেতে ইচ্ছে করে। জীবনের প্রতি সকল ভালোবাসা আস্থা হারাতে থাকে। শেষে একদিন আর না সইতে পেরে চাকরিটাই ছেড়ে দেয়। প্রিয় মানুষটাকে কোনোভাবে আরেকজনের হাত ধরে দেখতে পারছিলনা। সে ছেড়ে সাড়া জীবনকার মত মানুষটাকে চোখের সামনে দেখার শত ইচ্ছে। তবু সে বাঁচে! সে বাঁচে স্বপ্নে! গাড়ি চড়ে স্বপ্ন দেখে একদিন কোনো দৈব ঘটনা ঘটবে, হঠাৎ করেই তারা দুজন নিজেদের আবিষ্কার করবে নির্জন কোনো দ্বীপে। সেখানে থাকবে না কোনো তৃতীয় ব্যক্তি। গড়ে তুলবে সেই প্রিয় মানুষটার হাত ধরে কোনো সুখকর স্বর্গরাজ্য!
ইরিনের ভেতরটা কেমন ধ্ক করে উঠল। প্রফেসর আর ইরিনের দিকে না তাকিয়ে বললেন, চা খাবে কি?

ESTÁS LEYENDO
ইরিনের সিক্রেট সোসাইটি
Romanceইরিনের রিজাইনিং লেটার জমা দেওয়ার পরই দেখা হয় প্রফেসর নিকের সাথে। তারপর....